• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
কিশোরদের সাপোর্ট করুন

সমাজে এখনো কিশোরদের বয়ঃসন্ধিকালীন এ সময়টাকে খুব গুরুত্বহীনভাবে দেখা হয়

সংগৃহীত ছবি

মতামত

ভিন্নমত

কিশোরদের সাপোর্ট করুন

  • প্রকাশিত ২২ অক্টোবর ২০১৮

সাঈদ চৌধুরী

কিশোরদের চেহারা ও কণ্ঠের পরিবর্তন যখন খুব বেশি পরিলক্ষিত, তখন তাদের প্রতি অবহেলাও কিন্তু আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। যেকোনো কাজই যখন কিশোরদের দোষের তখন তারা কীভাবে মানুষের কাছে ভালো ছেলে হিসেবে প্রকাশিত হবে! আমাদের সমাজে যখন কোনো ছোট ছেলে আস্তে আস্তে কিশোরে পরিণত হতে থাকে, তখন তার সব পরিবর্তন যেন একটি দায়। কেউ দেখলেই ভাবে এই ছেলে বুঝি ধূমপান করে অথবা খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মেশে অথবা ছেলেটি খুব উগ্র। চুলের কাটিং যদি সামান্য কিছুটা অন্য রকম হয় তবে তো কথাই নেই। মায়েদের কাছেও কখনো কখনো এই কিশোরেরা অবহেলিত হয়ে ওঠে।

রবীন্দ্রনাথের ফটিক চরিত্রের কৈশোর এখনো তার দস্যিপনার কারণেই সমাজের চোখে অপরাধী। এমন একটি চিন্তাধারা যেন কিশোর বয়সটিই অপরাধের! এই ভাবনায় অপরাধী করে তোলা কিশোরদের মনোভাবও তাদের খারাপের দিকে ঠেলে দেয়। সবাই যখন সামান্য বিষয়গুলোতেই তার ওপর দোষ চাপাতে থাকে, তখন মানসিকভাবে সে অভাবী হয়ে পড়ে। সে ভাবতে শুরু করে, তবে সে-ই বুঝি এক ধরনের বোঝা। এক পর্যায়ে হতাশা তাদের বিপথেও ঠেলে দিতে পারে।

আমাদের সমাজে এখনো কিশোরদের বয়ঃসন্ধিকালীন এ সময়টাকে খুব গুরুত্বহীনভাবে দেখা হয়। পরিসংখ্যানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কিশোর অপরাধের মতো বড় অপরাধগুলো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় কিশোররা গ্যাং হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। তার মানে দাঁড়াল কিছু কিছু সময় কিশোররাই অপরাধের প্রধানতম কারণ হয়ে উঠছে। এর সঙ্গে নেশা, ইভটিজিং, রাতে বাইরে থাকার মতো ব্যাপারগুলোও খুব চোখে পড়ার মতো হয়ে উঠছে। বই পড়া থেকে বের হয়ে অনেক কিশোরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মরণ গেমস নিয়ে মেতে উঠছে। ব্লু হোয়েলের মতো গেমস যদি কিশোর বেলা থেকেই কারো মনের মধ্যে গেঁথে যেতে থাকে, এক পর্যায়ে সেই কিশোরই হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী।

ভাবনার প্রসারতা কতটা কমেছে মানুষের তা কিছু ঘটনা দেখলেই স্পষ্ট হওয়া যাবে। সেদিন দেখলাম এক কিশোর রাস্তায় হাঁটছে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে। আমি দেখলাম একজন মুরুব্বি ছেলেটিকে দেখে বলছে, কী ধরনের ছেলে দেখ গান শুনতে শুনতে হাঁটে! অথচ আমি জানি ছেলেটি একটি ভালো পরিবারের। আমি তাকে ডেকে বলি, তুমি কেন এয়ার ফোন লাগিয়ে হাঁটছ। সে আমাকে দেখে শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে বলে, ভাইয়া এমনিতেই। আমি তাকে বললাম, এতে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে তুমি কি তা ভেবেছ? সে বলল, কী ধরনের বলেন তো ভাইয়া। আমি বললাম, তুমি অন্য মনস্ক হয়ে হাঁটলে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়তে পার, ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে পার এবং মানুষ তোমাকে দেখে কিছু নেগেটিভ চিন্তাও করতে পারে।

সে সঙ্গে সঙ্গে এয়ারফোন খুলে বলল, আমি বুঝতে পেরছি ভাই আর এমনটা করব না। আমি তার প্রতি খুশি হলাম আর ভাবলাম আমি তাকে না বললে সে এ কাজটি করতেই থাকত। হ্যাঁ, কিশোর বয়সটিতে সব কিছুই যদি অপরাধের মনে হয়, তবে কিশোররা অপরাধে জড়াবেই। এ কারণে তাদের পাশে দাঁড়ানোটা খুব জরুরি। তাকে যেমন তার ইচ্ছে মতো চলতে দিতে হবে এবং তার ওপর রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণও। তাই বলে তাকে অধিকারহীন করবেন বা অপরাধী ভাববেন, এটা কখনই সঠিক নয়।

নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। কিশোর বেলা থেকেই সাধারণত যেহেতু অপরাধ শুরু হয়, সুতরাং এখন থেকেই এ ব্যাপারে আরো সচেতন হতে হবে। কিশোরদের সঙ্গে আলোচনা বাড়াতে হবে, তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে হবে এবং তাদের ওপর রাখতে হবে আস্থা। আস্থা রাখতে গেলে তাদের সাপোর্ট করতে হবে, বোঝাতে হবে তারাই এদেশের সবচেয়ে কার্যকর ও মূল্যবান সম্পদে পরিণত হতে যাচ্ছে। শিশুবেলা থেকেই যেহেতু এখন সন্তানরা তথ্যপ্রযুক্তির দিকে ঝুঁঁকে পড়ছে, সুতরাং তাদের শেখাতে হবে কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তি তাদের উৎকর্ষ দিতে পারে।

বখাটে অথবা ভদ্র এই দুইয়ের যেকোনো দিকেই নিয়ে যেতে পারে কিশোরবেলার অবহেলা বা যতন। এ বিষয়গুলো খেয়াল করে সামনের দিকে নিজের উদ্দেশ্য ঠিক করে দিতে পারলেই কিশোরবেলা হয়ে উঠতে পারে আদর্শ সময়।

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি

শ্রীপুর, গাজীপুর

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads