• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
জিহ্বাকে সংযত রাখুন

সময় চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর ধৈর্যের পরীক্ষার

সংগৃহীত ছবি

মতামত

জিহ্বাকে সংযত রাখুন

  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৮

গোলাম কাদের

ঘনঘোর বর্ষায় কর্দমাক্ত মাঠে যখন থই থই জল। অমারাত্রির অন্ধকারে কৃষক মাথাল মাথায় নিজের ক্ষেতে জমে থাকা জলের ক্ষতি থেকে ফসলের ক্ষেত রক্ষায় আল কেটে জল বের করে দিতে ছোটেন। বিপত্তি ঘটে তখনই। যেতে হবে পা টিপে টিপে, মাথালে হাত রেখে, হাতে কাস্তে বা কোদাল সামাল দিয়ে। না হয় দ্রুততার জন্য পা পিছলে প্রপাত ধরণিতল হলে কাদাজলে গড়াগড়ি এমনকি হাতের কাস্তে কোদালে ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি বর্ষাকালের গ্রামীণ দৃশ্যের সাধারণ ঘটনা। এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের দেশের রাজনৈতিক মাঠের মিল আছে। অনেকাংশের এ মিল আমাদেরও ভাবিত করে। ভাবনার কারণ, রাজনৈতিক অঙ্গনে বা মাঠে এখন কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। চলছে একে অপরের চরিত্র হনন। বুঝে না-বুঝে একে অপরকে আক্রমণ করছে। কর্দমাক্ত মাঠে শিশু-কিশোরদের মতো খেলায় মেতে ওঠা এবং কৃষকের মতো ক্ষেতের আল কেটে জল বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটাতে গিয়ে কুপোকাত হওয়ার মতো ঘটনাগুলো ঘটছে। অনেকে হাতে তালি দিচ্ছে।

কিন্তু কতক্ষণ? ঘটনা যদি বুমেরাং হয় তখন তো বিব্রতকর অবস্থা দাঁড়াবে। সেই অবস্থা সামাল দিতে কষ্ট হবে। শুধু কষ্ট নয়, খেসারত দিতে হবে। এখন সময় চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর ধৈর্যের পরীক্ষার। যারা এ পরীক্ষায় ভালো করবে তারা অন্তত হারবে না। না হয় অসতর্ক কৃষকের মতো জলে-কাদায়, মানে-অপমানে একাকার হতে হবে। হচ্ছেও তাই। রাজনীতিতে ‘চরিত্রহীন’ শব্দের অর্থ বুঝে হোক না-বুঝে হোক এটাকে একটি অস্ত্রসম শব্দের ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলা ভাষায় যারা পারঙ্গম তারাও তার অপব্যাখ্যায় মেতে উঠেছে। ‘চুদুর-বুদুর’ শব্দও একসময় রাজনীতির মাঠ দখল করেছিল। এখন সেই শব্দ বুদবুদের মতো স্বচ্ছ। ‘চুদুর-বুদুর’ গ্রামীণ একটি অতি ব্যবহার্য শব্দ হিসেবে উঠে এসেছে। ‘চুদুর-বুদুর’-এর মতো চরিত্রহীন শব্দের ব্যাখ্যাও এখন বাংলা একাডেমির কাছে চাওয়া যেতে পারে। ‘চরিত্রহীন’ শব্দটি একটি শব্দের মধ্যে সব কলুষতাকে ধরা হয়েছে। আপনি কারো কাছে আমাকে অপ্রস্তুত করার জন্য আমার সম্বন্ধে অপব্যাখ্যা দেবেন, আমার চরিত্র হনন করবেন। আমার সৎ-চরিত্রকে হনন বা হত্যা করবেন, এই সৎ-চরিত্রকে হত্যা করাই হলো চরিত্রহীন। কারো এক-দুটি চারিত্রিক আচরণ দিয়েই চরিত্রহীন বলা যাবে না। আমি যদি কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিই, তা হলে আমি তার চরিত্রেরই হানি করলাম। মানে চরিত্র হনন করলাম, চরিত্র হত্যা করলাম। এখন দেখার বিষয়, রাজনীতিতে কে কাকে চরিত্রহীন বলল বা বানাল। আমি যদি কথা দিয়ে কথা না রাখি, তা হলেও আমি চরিত্রহীন। দুঃখের বিষয়, আমাদের সমাজে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সব কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে, চার যুবকের মাথার পেছন থেকে গুলি করে কারা ফেলে যাচ্ছে-এগুলো উদঘাটনে কেউ কিছু করছে না, শব্দবোমার পেছনে সবাই ছুটছে। আসল বোমা, অস্ত্রের যে ঝনঝনানি চলছে ভেতরে ভেতরে সে দিকে কারো কার্যকর খেয়াল নেই। ‘চরিত্রহীন’ নিয়ে আমি কারো পক্ষে-বিপক্ষে যাচ্ছি না, ‘চুদুর-বুদুরের’ মতো ‘চরিত্রহীন’ শব্দের একটি সঠিক ব্যাখ্যা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।

না হয় এ শব্দের ব্যাখ্যায় দুজনই ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা জোর দেখা যায়। আর আমাদের দেশে অতি উৎসাহী লোকের তো অভাব হয় না। কাছা টেনে নামানোর লোকের অভাব হয় না। এখন এই সময়ে রাজনৈতিক ঘনঘোর বর্ষাকালের, খেলার মাঠে বালক-নাবালক অনেক রাজনৈতিক দল খেলছে। ভুল এখন হবে অনেক, যারা মাথাল মাথায় কৃষকের মতো ধৈর্য সহকারে মাথাল ধরে কাস্তে কোদাল সামলে সতর্কতায় আল ধরে হাঁটতে পারবে তারাই সফল হবে। আর অসতর্ক কৃষক তড়িঘড়ি আল পার হতে গিয়ে আল থেকে পা ফসকে পড়ে কাদাজলে মাখামাখি হবে। রাজনীতির এ ভেজা মাঠে এক মাসের মধ্যেই খেলা জমে উঠবে। হারিজিতি নাহি লাজ এই মর্মবাণী বুকে ধারণ করে এগিয়ে গেলে আসা করি সফলতা আসবে। যারা ধৈর্য সহকারে এগোবেন তারাই এ ঘনঘোর অমারজনীর তমা কাটিয়ে হেসে উঠতে পারবেন। অর্থাৎ বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন। সবাইকে এখন তক্কে তক্কে সতর্কতার ঘুঁটি চালতে হবে। চালে ভুল করবেন, হেরে যাবেন। সবাই জিততে চায়। আমাদের ভেতর হারিজিতি নাহি লাজ এই স্পিরিট, খেলোয়াড়ি মনোভাব নেই বললেই চলে।

এখানে বলে রাখা ভালো, গ্রাম্য প্রবাদ আছে-‘গাছের শত্রু লতা, মাইনষ্যের শত্রু কথা’। হাজার বছর আগে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান রাজা নয়া পালকে রাজ্য পরিচালনার জন্য উপদেশ দিয়ে নেপাল থেকে একটি পত্র লেখেন। তাতে তিনি বলেন, রাজ্য পরিচালনায় ‘জিহ্বাকে সংযত রাখবে’। আসলে এ বাক্য সবার জন্যই প্রযোজ্য। বিশেষ করে এই সময়ে রাজনীতির এই সঙ্কটকালে সবার জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে, না হয় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে, শুধু জিহ্বার কারণে। সাধু সাবধান!

লেখক : কবি, সাংবাদিক, বিশ্লেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads