• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
প্রত্যাশা একটি উৎসবের নির্বাচন

নির্বাচন

সংগৃহীত ছবি

মতামত

অভিমত

প্রত্যাশা একটি উৎসবের নির্বাচন

  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর ২০১৮

মোহাম্মদ জাফরুল হাসান

আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সর্বত্র এখন একটা আলোচনা চলছে। এসব আলোচনায় মূলত স্থান পাচ্ছে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভয় আর অনিশ্চয়তা। তবে সাধারণের একটাই প্রত্যাশা, নির্বাচনে সহিংসতা নয় বরং একটা উৎসবের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। উৎসবপ্রিয় বাঙালির জন্য নির্বাচন যেন আরেকটা উৎসব। নির্বাচন এলেই আবালবৃদ্ধবনিতা, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব— সবার মাঝে আনন্দ বয়ে যায়। তবে যে আনন্দে তারা উদ্ভাসিত হয়, নির্বাচন-পরবর্তী সে আনন্দ মাটি হয়ে যায়। নিমজ্জিত হতে হয় হতাশায়। নিকট অতীতের নির্বাচনগুলো তা-ই বলে।

এটা খুবই দুঃখজনক যে, নির্বাচনী সহিংসতা কমছে না। নির্বাচনে প্রাণহানি একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ জনতার মধ্যে যে ভয় বিরাজ করছে, তা দূর করে উৎসবমুখর একটা নির্বাচন উপহার দিতে বর্তমান সরকারকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। ভূমিকা রাখতে হবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকেও। আর এটা করতে হবে জনগণের কথা ভেবেই।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের অন্যতম কারণ নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আস্থাহীনতা। সেটা জাতীয় নির্বাচনই হোক আর স্থানীয় নির্বাচনই হোক। নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে কিংবা কার অধীনে হবে— এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছে না। এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার জন্য। এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনই সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চদশ সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায়ও বাতিল হয়েছে। এ অবস্থায় দেশে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মনে রাখতে হবে যখন সঙ্কটের মূলে নির্বাচন ব্যবস্থা তখন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। কারণ এটা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

রাজনীতিতে বিরোধী দলের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে অতীতের অনেক নিরঙ্কুশ সরকারও যে স্বৈরশাসকে রূপ নিয়েছিল, তার বহু দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রয়েছে। খোদ বাংলাদেশেই এরশাদ সরকার স্বৈরশাসকের তকমা নিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে তিরোহিত হয়েছিল ন্যায়বিচার, সুশাসন, নাগরিক অধিকারগুলো। উন্নয়ন ছিল দূরাগত। কিন্তু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে কীভাবে? সে পথ তৈরি করে দিতে হবে প্রথমত সরকারকে, দ্বিতীয়ত তাকে সহযোগিতা করবে অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল এবং তৃতীয়ত একটি সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন উপহার দিতে নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রাখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। আমরা বিশ্বাস করি, যে কোনো পরিস্থিতিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা তাদের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণে কুণ্ঠিত হবেন না। কারণ তাদের ওপরই নির্ভর করছে একটি সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার ওপরই নির্ভর করছে দেশে ও দেশের বাইরে গ্রহণীয় একটি নির্বাচিত সরকার— যে কিনা বর্তমানে চলমান আর্থসামাজিক উন্নয়নের অগ্রগতির চাকাকে সচল রাখতে এবং আরো বেগবান করতে পারঙ্গম হবে।

নির্বাচনে জালিয়াতির ঘটনা শুধু বাংলাদেশে ঘটে থাকে, এমন নয়। ভোটার উপস্থিতি ছাড়া বিজয়ী ঘোষণা বা ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হওয়ার উদাহরণ বহু দেশে আছে। নির্বাচনে যাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণাসহ ক্ষমতাসীন দলের নানা উপায় অবলম্বনের অনেক উদাহরণ আছে। কিন্তু এসব প্রথাগত কৌশল বাদ দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার সময় এখনো আছে। এজন্য ক্ষমতাসীনদেরই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তবে বিরোধী দলগুলোর ভূমিকা কম তা কিন্তু মোটেও নয়। তাদেরও ছাড় দিতে হবে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে।

কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো নির্বাচনের একটা রূপরেখা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু মানুষের ভয় আর আশঙ্কা দূর হবে কি-না জানি না। তবে যদি দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সদিচ্ছা রাখেন, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশে আবারো নির্বাচন উৎসবের প্রত্যাবর্তন ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

লেখক : ফ্রান্স প্রবাসী সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads