• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিএনপিতে কত মধুকর

লোগো বিএনপি

মতামত

বিএনপিতে কত মধুকর

  • আনোয়ার বারী পিন্টু
  • প্রকাশিত ১০ নভেম্বর ২০১৮

কথিত আছে বিপদে বন্ধুর পরিচয়। ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ সময়ে এসে বিএনপিও পরিচিত হচ্ছে তার বন্ধুদের সঙ্গে। হয়তোবা এই পরিচয়পর্ব আরো লম্বা হবে। কিছু নেতার সঙ্গ ত্যাগে বিএনপিকেও দিতে হবে চড়া মূল্য। বিএনপিতে এই পরিচয়পর্ব সময়ের প্রয়োজনে খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ সময় দুধে-ভাতে থাকায় দলটি আদরের দুলালে পরিণত হয়েছিল। আর এই সুযোগে দলটিতে ভিড়েছে আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থবাজ মানুষেরা, ক্ষমতার স্বাদ নিতে উন্মুখ আর হালুয়া-রুটি খেকো মতিভ্রম সব মানুষেরা। এদের কেউ বাগিয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রপতি পদ, কেউ বাগিয়েছে খোদ মহাসচিবের পদ, কেউ হয়েছে মন্ত্রী, কেউ সেজেছে রাজা, কেউ সাজিয়েছে সাম্রাজ্য। কেউবা রাষ্ট্রীয় চাকরি নিয়ে পাড়ি দিয়েছে ওয়াশিংটন। এমন উদাহরণ আছে ভূরি ভূরি। এ যেমন বি চৌধুরী। কর্মীদের রথে দাঁড়ানো বিএনপি এই দলটি তাকে রাষ্ট্রপতি করেছিল। অথচ তিনি স্বহস্তে ছুরি চালিয়েছেন বিএনপির বুকে?

আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, সেনাসমর্থিত সরকারের সময়ে দল যখন বিপদগ্রস্ত ঠিক তখন তার উপলব্ধি হলো দল সঠিক পথে চলছে না, সংস্কার প্রয়োজন। অথচ দীর্ঘদিন দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের সময় তার এসব মনে ছিল না। স্বার্থপরতার উদাহরণ আর কী হতে পারে! একই বহরে নাজমুল হুদা এবং সর্বশেষ যোগ হয়েছেন শমসের মুবিন চৌধুরী।

২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে এক চিঠির মাধ্যমে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান শমসের মুবিন চৌধুরী। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘আমি যুদ্ধাহত একজন মুক্তিযোদ্ধা। শারীরিকভাবে এখন আর রাজনীতি করার মতো অবস্থায় নেই। এ কারণে বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ লক্ষণীয় হলো, তার আগেই তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপির কাছ থেকে নিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব পদ। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। বোঝা যায়, বিএনপির কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার তালিকা কত লম্বা ছিল তার।

অথচ বিএনপির বিপদে চলে গেলেন দল ছেড়ে, দিয়ে গেলেন সন্ত্রাসী দলের অপবাদ। বিএনপিকে চুষে খাওয়ার পরই তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েছেন। বিএনপি ছাড়ার সময় ‘শারীরিকভাবে অক্ষম’ বললেও তারও তিন বছর পর গত ২৭ অক্টোবর রাজনীতি করতে তিনি সক্ষম হয়ে উঠলেন। যোগ দিলেন বিএনপির ‘শত্রুপক্ষ’ বি. চৌধুরীর বিকল্পধারায়। সাম্প্রতিক সময়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে বি. চৌধুরীকে নিয়ে যখন বিএনপি নেতাকর্মীরা সন্দিহান, সম্পর্ক যখন একদম তলানীতে, ঠিক এই মোক্ষম সময়কেই বেছে নিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী। কাটা ঘায়ে লবণের ছিটা ভালো করেই দিলেন তিনি।

বিস্ময় জাগে, জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে শমসের মুবিন এখন আদর্শিক রাজনীতির বুলি আওড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি যারা করেন তাদের সঙ্গে রাজনীতি করা যায়।’ কিন্তু যোগ দিলেন বিকল্পধারায় যে দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে একটি টকশোতে স্বাধীনতা বিরোধিতার অভিযোগ এনেছেন রাজনীতি গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। শমসের মুবিন মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীরবিক্রম খেতাব পেয়েছেন অথচ ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে বিএনপির জোটভুক্ত জামায়াতের কথা মনে ছিল না আর এখন হয়তো নতুন কোনো খায়েশে মনে নেই বিকল্পধারার মহাসচিবের কথা। ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে নিজেকে সুঠাম করার সময় হয়তো এসব মনে থাকে না।

শমসের মুবিনের মতো আর কত মধুকর বিএনপিতে আছে? বৃহত্তম কর্মী সমর্থনপুষ্ট হয়েও দলটির বর্তমান শ্বাস নিতেই হাঁপানো অবস্থা দেখে সহজে অনুমেয় দলটির চালকের আসনে হয়তো আরো কেউ থাকতে পারে! যারা শমসের মুবিনের মতো আদর্শে ভিন্ন কিছু লালন করে। এর সংখ্যা বিএনপিতে কম নয়। এরা বিএনপিতেই বেশি লালিত হয়। সময় মতোই আবার ফণা তোলে। দল ছেড়ে যায় আবার মনোনয়নের আগে ঐক্যবদ্ধতার দোহাই দিয়ে তাদের দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। কত নাটক।

 

লেখক : বার্তা সম্পাদক, এ ওয়ান নিউজ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads