• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বাঁচাতে হবে অতিথি পাখি

অতিথি পাখি

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

বাঁচাতে হবে অতিথি পাখি

  • অলোক আচার্য
  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ পাখ-পাখালির দেশ। নানা রঙের নানা আকারের মিষ্টি সুরের পাখি রয়েছে দেশে। নগরায়ণের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাখির উপস্থিতি কমছে দ্রুত। আজো এমন অনেক স্থান আছে যেখানে ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। আর যেসব স্থানে পাখির উপস্থিতি কমেছে, সেখানে মোবাইলের রিংটোনে পাখির ডাক শোনা যায়। পাখির কদর আমরা বুঝি। সারা বিশ্বে প্রায় পাঁচ লাখ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এসব পাখির অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অন্য স্থানে নিরাপদে চলে যায়। নিজের অবস্থান বিপদসংকুল হওয়ায় তারা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। শুধু এশিয়া আর ইউরোপে আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি। পাখির সৌন্দর্য, পাখির কলতান পাখি-প্রেমিকদের মুগ্ধ করে। শীতকাল শুরু হতেই মূলত আমাদের দেশে নানা রকমের বিদেশি পাখির ভিড় বাড়তে থাকে। দেশি পাখির পাশাপাশি তখন বিদেশ থেকে আসা এসব পাখি আমাদের হূদয় কেড়ে নেয়। সারা দেশের মানুষ এখন জানে এ সময় বিদেশ থেকে রঙবেরঙের পাখি এদেশে এসে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এসব পাখিকে আমরা অতিথি পাখি বলি। এসব পাখিকে ঘিরে পাখি মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। সত্যি কথা বলতে বিদেশি পাখি হলেও প্রতিবছর আসা-যাওয়ায় এরা আর অতিথি নেই। নামে অতিথি হলেও এরা আমাদের দেশেরই অংশ হয়ে গেছে। এসব পাখির উদ্দেশ্যেই পুরো একটি বছর অপেক্ষা করে থাকেন পাখি-প্রেমিকরা।

বাঙালি অতিথিপরায়ণ জাতি হিসেবে সুপরিচিত। সে পাখিই হোক আর প্রাণি হোক কিংবা মানুষ। বঙ্গবাহাদুরের কথা আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। ভারত থেকে উজানের ঢলে ভেসে বাংলাদেশে আসা সেই হাতিকে নিয়ে রীতিমতো হুলুস্থূল শুরু হয়ে গিয়েছিল। দেশের মিডিয়ায় প্রতিদিন খবর হতে থাকে বঙ্গবাহাদুরকে নিয়ে। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। কিন্তু বাঙালির মমতার কথা সেদিন সবাই জেনেছিল। সেই আদিকাল থেকেই অতিথি আপ্যায়নে বাঙালির প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাই শীতকাল শুরু হতেই যেসব পাখি ভিনদেশ থেকে আসতে শুরু করে, তাদের নিয়ে উচ্ছল আনন্দে মেতে উঠি আমরা। জাহাঙ্গীরনগর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব পাখি ভিড় করে। হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসব পাখি আমাদের দেশে আসে। কারণ এ সময়ে সাইবেরিয়াসহ কয়েকটি শীতপ্রধান দেশের শীতের মাত্রা এতটা তীব্র থাকে যে, তা এই পক্ষীকুল সহ্য করতে পারে না। পাখি প্রকৃতির এক অনবদ্য অংশ। সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসীম। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা এদেশে এসে নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করে। শীতপ্রধান দেশে তীব্র শীত দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের অভাব দেখা দেয়। সেই সঙ্গে থাকে তুষারপাত। তাই শীতে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশে প্রবল তুষারপাত থাকে। এই তীব্র তুষারপাতে এসব পাখি তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে এবং বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশে উপস্থিত হয়। অন্য দেশ থেকে আসা এসব পাখিকে ইংরেজিতে মাইগ্রেটেড বার্ড বলা হয়, যার পরিভাষা করলে সহজে পরিযায়ী পাখি বলা হয়। পাখি পরিযান বলতে নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু পাখির প্রতিবছর বা কয়েক বছর পরপর কোনো নির্দিষ্ট ঋতুতে বা সময়ে কম করে দুটি স্থানের মধ্যে আসা-যাওয়া বোঝায়। যেসব প্রজাতির পাখি এসব পরিযানে অংশ নেয়, তাদের পরিযায়ী পাখি বলে। এসব পাখি প্রায় প্রতিবছর একাধিক দেশ বা অঞ্চল থেকে বিশ্বের অন্য কোনো অঞ্চলে চলে যায়। মূলত খাদ্যের সহজলভ্যতা, বংশবৃদ্ধি এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থেই তারা এই পরিযানে অংশ নেয়।

পাখির সৌন্দর্য দেখার মানুষের যেমন আমাদের দেশে অভাব নেই তেমনি পাখিদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণকারী মানুষেরও অভাব নেই। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী অতিথি পাখি ধরা ও বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই অতিথি পাখি শিকার রোধ করতে হবে। পাখি শিকারিরা যাতে পাখি শিকার থেকে বিরত থাকে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কারণ সবক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ সম্পূর্ণ সফলতা আনতে পারে না। যদি পাখি শিকারিদের এটা বোঝানো যায় যে, পাখি শিকার  শুধু অন্যায় নয়- নিজেদের জন্যও চরম ক্ষতিকর, তাহলে এ প্রবণতা কমে আসবে।

 

লেখক : সাংবাদিক

sopnil.roy@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads