• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

ইশতেহার ও ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয় দিকগুলো

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশ শুদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক দেশ হয়ে ওঠার পথে অনেক এগিয়েছে। নির্বাচন খুব সন্নিকটে চলে এসেছে। আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য ইশতেহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। খুব খেয়াল করে দেখলে দেখা যাবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া অনেক কাজই আটকে যায় এবং এই আটকে যাওয়ার ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় অনেক।

বাংলাদেশের এক সময়কার অর্থনৈতিক প্রাণ নদীমাতৃক অর্থনীতি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এমন আরো কিছু বিষয় রয়েছে, যা নির্বাচনী ইশতেহারে যোগ করা প্রয়োজন এবং এ বিষয়গুলো অঙ্গীকারে যোগ করলে তা যেমন অর্থনীতির জন্য হবে ফলপ্রসূ তেমনি কার্যকরী হবে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে।

নদী রক্ষা ও দূষণ বন্ধের কথা বলা হচ্ছে এ কারণে যে, এই নদী দূষণ ও দখল এক সময় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলা শুরু করবে। এখনই অনেকটা পড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরো প্রবল হবে। নদী দূষণ ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করতে শুরু করছে অনেক আগে থেকেই। ঢাকার গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারের মতো শিল্পাঞ্চলগুলোর পানিতে ভারী মৌলের উপস্থিতি বাড়তে পারে নদী দূষণের কারণেই। শিল্পকারখানাগুলোতে যে ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার হয় তাতে কিছু ভারী কেমিক্যাল রয়েছে, যা একবার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পুরোপুরি রিমুভ করা সম্ভব হয় না। এই কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিগুলোও নদীতে যাচ্ছে এবং এক সময় পানিতে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে উঠতে পারে। যখন দূষণ বাড়বে তখন তা মানব স্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করবে। পানি দূষণের কারণে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার প্রথমেই কিডনি রোগ বাড়তে পারে এবং তা কিন্তু দৃশ্যত দেখাও যাচ্ছে। গাজীপুর অঞ্চলের মানুষের কিডনিতে সমস্যার হার এখন অনেক বেশি।

অপরদিকে নদী দখলের কারণেও বাড়ছে সমস্যা। গতিপথ বন্ধ হয়ে দূষক পদার্থগুলো একই জায়গায় জমে থাকছে। নদী রুট বন্ধ হয়ে অর্থনীতিতে বড় ধরনের খারাপ প্রভাব ফেলছে। পর্যটন, যাতায়াত, পানির সুরক্ষা সবগুলো বিষয় নদীকে কেন্দ্র করে। নদী এভাবে কষ্টে পড়বে তা কিন্তু কখনোই অনুমান করা যায়নি। যেহেতু নদীর গুরুত্ব সবাই বুঝতে পারছে, সেহেতু নদীকে নিয়ে ভাবনা শুরু করতে হবে। ইশতেহারে নদীর সুরক্ষাকে সবার আগে নিয়ে আসতে হবে। নদী, খাল, বড় জলাশয় দখল ও দূষণ রোধে কী করা হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে ইশতেহারে।

এর পরই যুবসমাজ। বর্তমানে ছয় কোটির ওপরে রয়েছে যুবক। যুবকদের একটি অংশ হতাশায় থাকে। এ হতাশা শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে আরো বেশি। যদি সঠিক ইউটিলাইজেশন করা যায়, তবে অর্থনীতি আরো দ্রুত গতিশীল হয়ে উঠতে পারে। প্রতিটি যুবক যাতে চাকরির বাইরেও নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে সেজন্য শিক্ষার মধ্যে কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সাধারণ শিক্ষাতেও কর্মমুখী বাস্তবিক একটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে ইশতেহারে উল্লেখ করা যেতে পারে। যুব সংগঠনগুলোকে একটি ছাতার তলে নিয়ে আসতে হবে। যদি সরকার সঠিকভাবে সহায়তা করার মাধ্যমে যুবকদের এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে পারে, তবে তা হবে বড় ধরনের সফলতা। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ইশতেহারে যোগ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ করছি।

এর পরই আসছি মূল বিষয়টিতে। তা হলো দুর্নীতি। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এখনো চরম দুর্নীতি। তথ্যপ্রযুক্তি কিছু দুর্নীতি হ্রাস করতে পারলেও মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে প্রচুর। সরকারি কর্মচারী আইন নামে যে আইন করা হয়েছে তাতে সরকারের অনুমতি ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা যাবে না- এ বিষয়টি ইশতেহারে সঠিকভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। দায়বদ্ধতার জায়গা না থাকলে দুর্নীতি বাড়তেই থাকবে। দুর্নীতি বন্ধে ইশতেহারে সঠিক কাঠামো চাইছি প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে।

 

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি

শ্রীপুর, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads