• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

অভিবাসীরা আর কত প্রতারিত হবেন

  • মোহাম্মদ অংকন
  • প্রকাশিত ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

নাটোরের নুরপুর গ্রামের তারিফ হোসেন কয়েক বছর আগে কাজের জন্য দুবাই গিয়েছিলেন। সে সময় তার প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। এই টাকা তিনি জমিজমা বন্ধক রেখে ও শারীরিক পরিশ্রম করে জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু দুবাই গিয়ে তিনি কোনো কাজ পাননি। উল্টো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পরে তিন মাস জেল খেটেছেন। অতঃপর কোনো উপায় না পেয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। সর্বস্বান্ত হয়ে যখন নিরুপায়, তখন স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে বিচার সালিশের ব্যবস্থা করেন। যেসব দালাল তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তাদের হাজির করেন। তারপর তিনি কোনোমতে এক লাখ টাকা ফেরত পান। বিদেশে যাওয়ার কথা ভুলে এখন আগের জীবনে ফিরে গেছেন।

বাংলাদেশে অভিবাসীদের নিয়ে অহরহ এমন ঘটনাই ঘটে চলেছে। গ্রামগঞ্জের সহজ সরল মানুষগুলো না বুঝে দালালদের খপ্পরে পরে টাকাপয়সা হারিয়ে পথে নামতে বসেছে। যখন সর্বস্ব হারাচ্ছে, তখন আর কিছুই করতে পারছে না। না পারছে এলাকার দালালদের ধরতে, না পারছে শহুরে এজেন্টদের ধরতে। প্রতারিত হওয়ার পর মোবাইলে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এমন বিপদগ্রস্ত অভিবাসীদের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে হলে শহুরে এজেন্ট ও আঞ্চলিক দালালদের নিবন্ধনের আওতায় আনা এখন সময়োচিত। এ ছাড়া বিদেশে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল ও দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, অভিবাসন ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ ও অভিবাসন আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। সব মিলিয়ে প্রতারণা বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে ২০১৩ সালে অভিবাসন আইন কার্যকর করা হয়। কিন্তু গত চার বছরেও এ আইনের কোনো পরিবর্তন, পরিমার্জন ও আধুনিকায়ন হয়নি। এ আইনের আওতায় প্রতারকচক্রের শাস্তি বৃদ্ধি করার নানা প্রস্তাবনা পরিলক্ষিত হলেও আমরা আজো কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। বিষয়টি বড়ই দুঃখজনক। তবে এখানে আরেকটি ব্যাপার রয়ে যায়। তা হলো আইনটিতে শাস্তি বাড়ানো হলেই উপকার পাওয়া যাবে তেমনটি নয়। এজন্য আইনটি মানা ও শাস্তি প্রদানের বিষয়টিও বিশেষ জরুরি। শাস্তি প্রদান ও মানার বিষয়টির সঙ্গে আরেকটি বিষয় রয়ে যায়। তা হলো আইনটির প্রচার ও প্রসার। এখনো দেশের অধিকাংশ মানুষ অভিবাসন আইন সম্পর্কে অবগত নয়। এর জন্য অভিবাসন আইনটির ব্যাপক প্রচার ও প্রসার দরকার।

বর্তমানে অভিবাসন পরিক্রিয়া নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতার চিত্র উঠে এসেছে। প্রতারণার জালে অসংখ্য অভিবাসী আটকা পড়েছে। এর জন্য অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা আরোপ করে লিখিত চুক্তি ছাড়া কেউ যেন দালালদের টাকা না দেয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত

করতে হবে।

বাংলাদেশে অভিবাসীদের ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তি, সুষ্ঠুভাবে বিদেশ গমন, দেশে পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিংসহ নানাবিধ কাজের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় করা হয়েছে। অভিবাসীদের সেবার মান উন্নয়ন ও নিশ্চিত করতে এর ভূমিকা যথেষ্ট। তবে এর সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারলে বিষয়টি আরো দ্রুতগামী ও স্বচ্ছ হতো বলে মনে হয়।

যেমন অনেকে বিদেশে গিয়ে কাজ পায় না অথবা যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা হবে বিদেশ গমনেচ্ছুকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া। দেশে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আমরা লক্ষ্য করেছি, যারা ভাষা ও শ্রমবিয়ষক নানা প্রশিক্ষণ দেয়। কিন্তু এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। এগুলো বৃদ্ধি করা দরকার। আমাদের দেশে জনবলের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সুযোগ অনেক কম। বেসরকারি সংস্থাগুলো ভালো ভালো কাজ নিশ্চিত করতে পারছে না। এর জন্য কূটনৈতিক সমঝোতা দরকার। এই সমঝোতাগুলো করতে সরকারি প্রচেষ্টায় দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় করা দরকার।

 

লেখক : নিবন্ধকার

সফ.ধহমশড়হ১২—মসধরষ.পড়স

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads