• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

নির্বাচন প্রসঙ্গে দুটি কথা

  • মু. মিজানুর রহমান
  • প্রকাশিত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

আমার মনে হয় নির্বাচন নিয়ে আমার মতো অল্প বয়সের ছেলেদের কথা না বলাই ভালো। আমাদের কথায় না হবে কোনো কাজ, না করবে কেউ মূল্যায়ন। তবু কিছু একটু বলার জন্য ভেতর থেকে খুব তাগিদ অনুভব করছি। বলা যায় ওই তাগিদ থেকেই বলা। নির্বাচন এলেই একটা কথা খুব শুনি। ‘যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিন’। এটি সুন্দর একটি পরামর্শ, উপদেশ বা নীতিবাক্য; বা অন্য যেটাই বলি। সবার কাছেই এবং সব সময়ের জন্য গ্রহণযোগ্য। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো— আসলেই কি বাংলাদেশের ভোটাররা প্রার্থী দেখে ভোট দেন? আর দিলেও তার পরিমাণ কত হবে? আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে একটা দলীয় আগ্রহ, দুর্বলতা বা ভীতি আছে। সেটা কম হোক আর বেশি হোক। জানি না অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করে দলতন্ত্র আছে কিনা। আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই। কিন্তু আমার দেশের অধিকাংশ মানুষ কখনই প্রার্থীকে গুরুত্ব দেয় না, রাজনৈতিক দল ছাড়া।

আমরা দেখি, সব রাজনৈতিক দল থেকেই প্রার্থী দেওয়ার সময় প্রত্যেক দলই বলে তারা যোগ্য প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু এখানে ওইসব দলের অনুসারীদের মধ্যে নির্দিষ্ট প্রার্থী নিয়ে বিতর্ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত অপছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে থাকেন; কেননা দলের নির্দেশনা থাকে। এমনকি আমরা সাধারণ মানুষও গা ভাসিয়ে দিই অন্যদের সঙ্গে। ফলে আমাদের একই বৃত্তের ব্যাসার্ধ হয়েই ঘুরতে হয়। দেখা যায় সাধুতার সার্টিফিকেট পাওয়া এসব প্রার্থী যখন জয়লাভ করেন, তারপর তাদের অনেকেরই নির্বাচনকালীন চেহারা পাল্টে যায়। আমাদের এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, ভোট যেন আমরা যোগ্য প্রার্থীকেই দিই।

আরেকটি বিষয় আছে নির্বাচনী ইশতেহার। মোটামুটিভাবে পেছনের খবরাখবর ঘেঁটে বুঝতে পারলাম আমাদের বাংলাদেশে নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্ব খুব একটা নেই। কেননা আমাদের দেশ প্রার্থীর চেয়ে দলের গুরুত্বকে বেশি দেওয়া হয়। এখানেও ওই একই বিষয়। কোন দল কেমন ইশতেহার দিল, সেদিকে চোখ না ফেলে সোজা দলীয়প্রেমকে নিয়েই থাকে। এখানে ইশতেহারের গুরুত্ব দেখি না। কিছুসংখ্যক আছেন যারা ইশতেহারকে প্রাধান্য দেন কিন্তু এই সংখ্যাটি অবশ্যই ছোট। ইশতেহারকে যারা গুরুত্ব দেন, তাদের বড় অংশই থাকে তরুণ।

আবার ইতিহাস থেকে জানতে পারি কখনোই কেউ ইশতেহার মানেনি বা প্রতিবন্ধকতার কারণে হোক আর যে কারণেই হোক, ইশতেহারে থাকা পয়েন্টগুলো মানা হয়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো একটি দলের পোস্টার লাগানো ছিল দেয়ালে। সেই পোস্টার থেকে দুটি পোস্টার উঠিয়ে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিল এক ছয়-সাত বছরের বালক। দেখলাম চোখের সামনেই ছেলেটাকে চড় মারা হলো, ওয়ালে মাথাও ঠোকানো হলো। আমি চিন্তাও করতে পারি না ওই বালকটির প্রতি এ ধরনের অমানবিকতা!

এমনও তো হতে পারে ওই দলেরই সাপোর্টার রয়েছে ছেলেটির ঘরে যা দেখে তাদের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে এবং ভালোবাসা থেকেই ওই পোস্টার দুটি ঘরের দেয়ালে বা নিজের পড়ার টেবিলের সামনে লাগাবে। আবার যদি ভাবি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ছেলেটির বিশেষ ওই পোস্টারের দলের প্রতি ভালো লাগা জন্মেছে। আমি নিজেই এক নির্বাচনে দুই দলের দুটি ব্যাজ বুকের দুই পাশে লাগিয়েছিলাম সেফটিপিন দিয়ে। খরচ করেছিলাম দুই-দুই চার টাকা। অন্তত বাচ্চাদেরও কি নির্বাচনী সহিংসতা থেকে রেহাই দেওয়া যায় না?

নির্বাচন এলেই আমাদের সবার মধ্যে একধরনের উৎসব ভাব কাজ করে। কিন্তু মাঝে মাঝে এটি স্থায়ী হয় না। নানা সময় হামলা, খুন, গুমের মতো ঘটনা ঘটে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বেশকিছু হামলা, ভাঙচুর এবং গোলাগুলির মতো ঘটনা ঘটেছে যা আমরা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার বাইরে।

ছোট পরিসরের এই কথাগুলো বলার শেষবেলায় আমি বলতে চাই, ভোট যেন প্রার্থী দেখেই দেওয়া হয়। আর ভালো প্রার্থীরা সংসদে গেলে দেশ ও জাতির জন্যই তা কল্যাণকর। এক্ষেত্রে যারাই সরকার গঠন করুক, আখেরে তা দেশের জন্য হিতকর হবে।

এখন নির্বাচনে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকে, কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেন না ঘটে, সেটাই সবার চাওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হোক। বছর শেষে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সূর্যোদয়ে উন্নতির পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads