• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

  • আরাফাত শাহীন
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০১৯

নতুন বছর মানে নতুন নতুন স্বপ্ন, অন্যরকম উত্তেজনা। সবার মনে একটা নতুনত্বের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। সময় যেন দ্রুত গতিশীল হয়ে উঠেছে। কেমন যেন মনে হচ্ছে, এই তো ক’দিন আগেই একটা বছর শুরু হয়েছিল। এত দ্রুত কীভাবে সময় আমাদের পেরিয়ে চলে যাচ্ছে তা যেন ঠিক বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। সময়ের ঘোড়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আমরা অনেকেই হাঁপিয়ে উঠছি। আবার অনেকেই সময়কে পেছনে ফেলে পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। নিজের প্রতি যার ভালোবাসা আছে, দায়বদ্ধতা আছে সমাজ ও দেশের প্রতি, যিনি কিছু দিতে চান পৃথিবীবাসীকে সময় নামক ফ্রেমে তাকে আটকে রাখা কঠিনই বটে। তিনি তো প্রতিদিন তার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে চলেন।

কেমন কাটল ২০১৮ সাল? নতুন বছরে এসে আমাদের এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হচ্ছে। হয়তো অনেকেই মনে করতে পারেন, যেটা একবার চলে গেছে তার খোঁজ করে আর লাভ কী! আমি বলব, লাভ অবশ্যই আছে। অতীত হলো আমাদের ইতিহাস। আর একটি জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে অবশ্যই তার ইতিহাস বুকে ধারণ করা প্রয়োজন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। আমরা জানি না অতীত থেকে কতটুকু শিক্ষা নিতে পারব। তবে আমাদের অবশ্যই সেই চেষ্টাটুকু করতে হবে।

বছরের একেবারে শেষে এসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। আমাদের জনজীবনে নির্বাচনের প্রভাব সীমাহীন এবং বর্তমান সময়ে পুরো জাতি নির্বাচনের ডামাডোলে বুঁদ হয়ে ছিল। অনেকদিন পর নির্বাচনকে ঘিরে এমন উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং অন্যরকম একটা আমেজ সৃষ্টি হয়েছিল। বিগত বছরগুলোতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সামনের দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছে। এখন আর আমাদের কেউ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উপহাস করার সাহস দেখাবে না। আমরা পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রজেক্ট নিজেদের টাকায় শুরু করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি দ্রুতই এই কাজ শেষ হবে এবং পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভূত অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের মাতৃভূমি টেকনোলোজির দিক দিয়েও অনেকটা এগিয়ে গেছে। আমরা মহাকাশে নিজেদের স্যাটেলাইট পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বিরাট বড় অর্জন। আমরা আশা করব, নতুন সরকার দেশের এই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখবে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। আমরা নানা দিক দিয়ে সামনের দিকে অনেকটা এগিয়েছি এটা সত্য। তবে তারপরও আমাদের বেশকিছু সমস্যা রয়ে গেছে। আমরা যদি এই সমস্যাগুলোর দিকে এখনই পূর্ণ মনোযোগ না দিতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে এসব সমস্যা আমাদের সীমাহীন ভোগান্তিতে ফেলে দিতে পারে। সুতরাং এখনই এ ব্যাপারে জোর তৎপরতা চালিয়ে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা কর্তব্য।

রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের জন্য একটা স্থায়ী সমস্যায় রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের মানবিক আচরণের কারণে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিলেও তাদের স্থায়ীভাবে রেখে দেওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্যই তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে হবে এবং শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে নাগরিক অধিকার আদায় করে বসবাসের সুযোগ করে দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের একার পক্ষে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই বিশ্বের অপরাপর দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান করা বাঞ্ছনীয়।

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নতি এবং অগ্রগতির জন্য পরিবেশ দূষণের মতো ভয়াবহ সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। বাংলাদেশ এখন ভয়ানকভাবে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবী সচেষ্ট রয়েছে কীভাবে পরিবেশ দূষণের মাত্রাকে কমিয়ে আনা যায়। আমরা অন্যান্য সব বিষয়ে মনোযোগ দিলেও এ বিষয়ে একটু অমনোযোগী হয়ে পড়েছি বোধহয়। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি, বায়ু, শব্দসহ পরিবেশের সবগুলো উপাদান আজ দূষণের কবলে। এ বিষয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আমরা আশা করব, নতুন বছরে সামগ্রিক দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে নতুন নির্বাচিত সরকার কাজ করবে।

আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে এখন অনেকটাই এগিয়ে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার সব ব্যবস্থা এখন দেশের অভ্যন্তরেই করা সম্ভব হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দেশের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে আমাদের একেবারে চমকে দিচ্ছে। এগুলো নিঃসন্দেহে দেশের শিক্ষার উন্নতির প্রমাণ বহন করে। তবে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশে যারা কাজ করেন, তারা বার বার বলছেন, শুধু রেজাল্ট নয়- শিক্ষার গুণগত মানেরও উন্নয়ন প্রয়োজন। সত্যি বলতে কী, রেজাল্ট এখন আগের চেয়ে ভালো হলেও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুতরাং এদিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা করার মতো পরিবেশ কিংবা যন্ত্রপাতি খুব একটা নেই। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মন থেকে গবেষণার চিন্তা দিন দিন দূর হয়ে যাচ্ছে। আর যারা গবেষণা করার জন্য এগিয়ে আসছেন, তারাও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে খুব বেশিদূর অগ্রসর হতে পারছেন না। শিক্ষার সঙ্গে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

আমাদের স্বাস্থ্য খাতও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছিলেন দেশের প্রতিটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার জন্য। বর্তমান নবনির্বাচিত সরকারেরও সে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, আশা করি। বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। এতে করে মেডিকেল শিক্ষা যেমন প্রসারিত হবে, তেমনি দেশের প্রতিটি জেলার মানুষ আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় চলে আসবে। তবে এখনো স্বাস্থ্য খাতে বেশকিছু সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সেখানে ডাক্তারের সীমাহীন সঙ্কট। গ্রামের মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছেন না। তাই গ্রাম এলাকায় যেসব ডাক্তারকে পাঠানো হয়, তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সেখানে থাকতে উৎসাহিত করতে হবে। এতে করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।

আমরা প্রতিনিয়ত নানামুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করি। আমাদের সমস্যা সীমাহীন; সে তুলনায় সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। সরকার সবসময় চেষ্টা করে জনগণের অভাব-অভিযোগের দিকে লক্ষ রেখে তার সমাধানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। তার এই প্রচেষ্টায় দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরও সহযোগিতা করতে হবে। আর তাই নিজের দেশকে গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি সব সেক্টরের লোককেই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই দেশ যেন সামনের দিকে তার মর্যাদা সমুন্নত রেখে এগিয়ে যেতে পারে, নতুন বছরে এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

smshaheen97@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads