• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
পোশাক শিল্প : শ্রমিক ও পরিবেশের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে

পোশাক শ্রমিক

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

পোশাক শিল্প : শ্রমিক ও পরিবেশের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

পোশাক শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ যে খাত থেকে আসে, সে খাতকে প্রধানতম খাত বলেই বিবেচনা করা হবে এটা স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক বিষয়টি আজকের এই পর্যায়ে আসার পেছনের গল্প অনেক কষ্টের। একসময় তাঁতের বিপণনস্থল এই বাংলাদেশ ছিল মসলিনের জন্য বিখ্যাত। দাদন দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে জীবিকা নির্বাহের সেই দিনগুলো থেকে আজকের বাংলাদেশ পোশাক রফতানিতে বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। করুণ ইতিহাসও কম নেই এর পেছনে। তাজরীন ফ্যাশন, রানা প্লাজার মতো ভয়াবহতা দেখতে হয়েছে এদেশের ঘামে ভেজা শ্রমিকদের। তবু থেমে থাকেনি। জীবিকার যুদ্ধে এদেশের শ্রমিক আজ দেশের ৮০ শতাংশ আয়ের কর্ণধার। শ্রমিক নিরাপত্তায় পোশাক কারখানাগুলোও অনেক কাজ বর্তমানে হাতে নিয়েছে। এমনও কিছু উদাহরণ রয়েছে যা বিশ্বে বিরল। বাংলাদেশের পোশাক কারখানায়ই নারী শ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য খরচ প্রদান করা হয়, শিশু কেয়ার সেন্টারের জন্য আলাদা ডাক্তার থাকে, নারী শ্রমিকদের বিশেষ সময়ে বিতরণ করা হয় স্যানিটারি ন্যাপকিন। এই দিকগুলো দেখলে আমরা খুব আশাবাদী হই এবং মনে হয় একটা সময় আমরা বিশ্বে আরো বেশি আমাদের পণ্য ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হব। এর বাইরেও কথা থেকে যায়। পোশাক কারখানার জন্য সরকার কী করছে; বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাকের অবস্থান বর্তমানে কেমন এবং এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সঠিক পথে আছি কি না।

সরকার গত সেপ্টেম্বরে উৎসে কর ছেড়ে দিয়েছিল পোশাক শিল্পের জন্য। আবার গতকাল কর ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এবারকার ঘোষণা আরো উৎসাহব্যঞ্জক। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, শতভাগ পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে এবার পরিবহন ব্যয়, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, সিকিউরিটি সার্ভিস, ল্যাবরেটরি টেস্টসহ নানা সেবায় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে আদেশ জারি করে তা কার্যকর করেছে। এছাড়া পোশাক খাতের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলের ওপর ভ্যাট পরিশোধের নিয়ম আরো শিথিল ও সহজ করা হয়।

গ্রিন ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে এ ছাড়ে আরো বেশি প্রণোদনা রাখা হয়েছে যা খুব ইতিবাচক। যারা সবুজ শিল্প স্থাপন করবে, তাদের করপোরেট কর ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর পোশাক শিল্পের আয় ছিল তিন হাজার ছয়শ কোটি ডলার। এই আয় বাড়ানোর জন্য সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট কার্যকর। কিন্তু শিল্প মালিকরা যে সুবিধা পাচ্ছেন, তার সুষম বণ্টন যদি শ্রমিক ও পরিবেশের জন্য না হয় তবে কিন্তু ভবিষ্যতে বিরূপ প্রভাব পড়তেই পারে। বিরূপ প্রভাবের হার বেশি হবে পরিবেশ দূষণের কারণে। সরকারকে নির্দিষ্ট করে শিল্পগুলোকে বলে দিতে হবে কোন কোন ক্ষেত্রে তারা পরিবেশ উন্নয়ন করবে। পরিবেশ আইন যেভাবে আছে, তাতে নিরাপত্তার দিক থেকে ভালো হলেও কার্যকরের দিক থেকে অনেক পেছনে। তেমনি শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য শিল্পগুলো আগে থেকে ভালো কাজ করলেও এখনো অনেক শিল্প শ্রমিক নিরাপত্তার সম্পূর্ণ মানে পৌঁছতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, কিছু কিছু কোম্পানি চাইছে শ্রমিক ছাঁটাই করে শিল্পগুলোকে আরো লাভবান করতে। গাজীপুরের ভবানীপুরে একটি ফ্যাক্টরিতে কয়েকদিন আগে এমন একটি ঘটনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক বন্ধ থাকে কয়েক ঘণ্টা। শ্রমিক নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির নিরাপত্তা দেওয়ায় শিল্পের বাধ্যবাধকতার মধ্যেই পড়ে। আমি বলতে চাইছি, যেসব ফ্যাক্টরি বেশি পরিমাণে ছাঁটাই করে কর্মীদের, তাদের ব্যাপারে করের আওতা কেমন হবে তা আলাদা করে বলে দেওয়া প্রয়োজন। পরিবেশ ঠিক রাখার ক্ষেত্রে শুধু ইটিপি থাকলেই পরিবেশ ভালো-এ ধারণা থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন।

পরিবেশ অধিদফতর তিন মাস পরপর পানি, বাতাস, শব্দ পরীক্ষা করে থাকে। এর সঙ্গে আরো অনেক কিছুর পরীক্ষা সরকার থেকে যোগ করে তা অন্যান্য ল্যাবরেটরির সঙ্গে ক্রস চেক করার মাধ্যমে সুফল আসে কি না, বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। ইটিপিগুলো অনলাইন মনিটরের আওতায় আনা প্রয়োজন। বাতাসে সক্স, নক্স নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উচ্চ মূল্যের যন্ত্রাংশ আমদানিতে প্রণোদনার প্রয়োজন। এসটিপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজন পানি বার বার ব্যবহারের রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ার ব্যবহার।

পরিবেশ ভালো রাখতে পারলে দক্ষ জনশক্তি পাওয়া সহজ হবে। দক্ষ জনশক্তি এখন আরো বেশি প্রয়োজন; কারণ আমরা এখন পোশাক রফতানিতে অন্যতম শীর্ষ দেশ। শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য আরো কিছু কাজ করতে হবে। বিশেষ করে, নারী শ্রমিকদের জন্য চাইল্ড কেয়ারের সঠিক ব্যবহার, ছুটির প্রাপ্যতা, কর্মকর্তাদের আচরণগত বিষয় পরিবর্তন ও কর্মী ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে নমনীয়তার প্রয়োজনীয়তা সবার আগে ভাবতে হবে। সরকারকে ধন্যবাদ পোশাক শিল্পের জন্য নতুন কর কাঠামো প্রদান করায়। বিশেষ করে সম্প্রতি বাস্তবভিত্তিক মজুরি কাঠামো বিন্যাস যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে অনুরোধ যেন পরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় শিল্পগুলো তাদের সঠিক দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরো আধুনিকায়ন নিয়ে চিন্তা করে। সেজন্য সরকারের দিকনির্দেশনার জায়গাটিও প্রসারিত করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি।

 

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads