• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা হতে হবে যুগোপযোগী

  • সোহাগ মনি
  • প্রকাশিত ২০ জানুয়ারি ২০১৯

একটি দেশকে পরিমাপ করার সবচেয়ে গুরুত্ববহ মাপকাঠি হচ্ছে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়। একটি দেশকে বদলে দিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ থেকে অর্জিত বিদ্যাই দেশ এবং দশের কাজে লাগে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি সেভাবে শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে না পারে তবে এর প্রভাব পুরো জাতির ওপর বর্তায়। একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের সমৃদ্ধির ইমারতের একেকটি ইট।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে খুব ভালো কিছু দেখা যায় না। শিক্ষা-জীবন শেষ করে অভিশপ্ত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। দিনশেষে যোগ্যতার মাপকাঠিতে পরতে দেখা যায় না অধিকাংশকেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা এক্ষেত্রে অনেকাংশেই দায়ী।  সাধারণত নোট-শিট পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবন পার করে দিই আমরা। জ্ঞানের সম্ভার অনেকটা অজানাই রয়ে যায়। নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রবণতা আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে খুব একটা দেখা যায় না। কারণ নোট-শিট পড়ে পরীক্ষায় পাস করা যায়, এতকিছু ভাবার কি প্রয়োজন আছে! এ ধরনের মানসিকতা কাজ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এর পেছনে শিক্ষার সিলেবাস এবং শিক্ষকের দায়সারা ভাব অনেকটা দায়ী।

অ্যাসাইনমেন্ট হবে সবসময় গবেষণাধর্মী, কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেটাকে মাত্র হাতের কাজ ভাবে! একেকটা অ্যাসাইনমেন্ট থেকে বের হয়ে আসবে একেক ধরনের মতবাদ, যা কোনো বিষয়কে ভিন্ন আঙ্গিকে দাঁড় করাবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেও আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের মতো বিদ্যাভ্যাস করছে, যেখানে নোট-শিটের ছড়াছড়ি।

প্রতিদিন নতুন নতুন চিন্তা বের করতে হবে দেশের প্রয়োজনে। সিলেবাসও হওয়া উচিত দেশের প্রয়োজন মোতাবেক, যেখান থেকে বাস্তবসম্মত ফল কাজে লাগানো যায়। শুধু নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে রাখলে হবে না, প্রতিটি পর্যায় হবে বিস্তৃত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রতিটি বিষয় হতে হবে আরো যুগোপযোগী। প্রতিটি বিভাগে দেশের প্রয়োজন অনুসারে কোনো বিষয়কে যুক্ত করে, নতুন মতবাদ তৈরি করার প্রয়াস থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে যাতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানো যায়, ঠিক সেভাবেই ভাবতে হবে আমাদের। হাতে-কলমে, বাস্তবভিত্তিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে করে তাত্ত্বিক জ্ঞানের ভিড়ে অন্য কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে কর্মপরিসরভিত্তিক কোর্স চালু করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের আলোচনার জায়গাটা তৈরির মাধ্যমে মতবিনিময়ের সুযোগ করে দিতে পারলে অনেক বিদ্বান বেরিয়ে আসবে, গবেষণার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে।সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও শিক্ষার্থীদের কোর্স রাখা যেতে পারে। এতে সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসাসহ ভেতরের শক্তি তৈরি হবে, যেটা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যেই নেই। প্রতিটি বিভাগে সৃজনশীলভিত্তিক কিছু উদ্ভাবনীর প্রতিযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড আয়োজন করা আবশ্যক।

মূলত এর মাধ্যমে চিন্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত ও প্রসারিত হয়। একুশ শতকে আমাদের ঘুমিয়ে থাকার সময় নয়। চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে আরো যুগোপযোগী করে তোলার সময় এখন। না হয় আমরা পিছিয়ে পড়ে সভ্যতা থেকে হারিয়ে যাব। টিকে থাকতে হলে আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠকে সর্বাধিক কাজে লাগাতে হবে। এখনই সময় বদলে দেওয়ার, বদলে যাওয়ার।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads