• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
সিটিং সার্ভিস : প্রতারণার আরেক নাম

প্রতারণার আরেক নাম সিটিং সার্ভিস

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

সিটিং সার্ভিস : প্রতারণার আরেক নাম

  • অমিত বণিক
  • প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে রাজধানীবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছেন। নানান অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। গেটলক, ডাইরেক্ট ও সিটিং সার্ভিসের নামে প্রতারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে। ‘সিটিং সার্ভিসের নামে চিটিং’ এখন নগরবাসীর কাছে প্রবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর ৯৬ ভাগ গণপরিবহন এখন সিটিংয়ের নামে চিটিং সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতারণামূলক ব্যবসার এ এক নতুন ফাঁদ, যা চলে আসছে বছরের পর বছর। অথচ দেখার যেন কেউ নেই।

এই প্রতারণার দায় মালিক-শ্রমিকরা একে অপরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টিকে অবৈধ ও বেআইনি বলার পরও ‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলেই দায় সারছেন। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে পুলিশের নেই কোনো মাথাব্যথা। রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক ও পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। অবকাঠামো যতই উন্নত হোক, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে সফলতা আসবে না। বিষয়টি ধ্রুব সত্য জেনেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেন যে টনক নড়ে না— তা আমজনতার বোধগম্য নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

এদিকে দেখা গেছে, পরিবহন কোম্পানিগুলো ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভাড়া ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আগের মতোই দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। আবার সব যাত্রীও সমান হারে ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ লোকাল বাসের রুট পারমিট নিয়েই বাস রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পেয়েছে, চলছেও তা-ই। এক জরিপে দেখা গেছে, এখন রাজধানীর ৯৬ শতাংশ বাস ‘সিটিং সার্ভিসে’ চলে। কিছু বাস সকালে অফিসের সময় ও বিকেলে ছুটির পর সিটিং সার্ভিসে এবং অন্য সময়ে ‘লোকাল বাস’ হিসেবে চলাচল করছে। এতে নগরবাসী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আজিমপুর নিউমার্কেট থেকে মিরপুর রুটে চলাচলকারী বিকল্প পরিবহন, বিকাশ, রমজান, বিহঙ্গ, মেট্রো সার্ভিস, সেফটি, উইনার, ভিআইপি পরিবহনের সবগুলোই এখন ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চলছে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী এমনকি সাভার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী পরিস্থান, প্রজাপতি, মিরপুর লিংক, রবরব, নূর-এ-মক্কা, আকিক এবং চিটাগাং রোড থেকে ফ্লাইওভার হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলাচলরত রজনীগন্ধা, মনজিল, নিলাচল, ঠিকানা, লাব্বাইক, ছালছাবিল, অনাবিল পরিবহনের পাশাপাশি উত্তরা থেকে চলাচলরত সব বাস ‘সিটিং সার্ভিস’ রূপ ধারণ করে চলাচল করে থাকে।

এসব বাস তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে। তারপরও সব বাসেই প্রায় সমানসংখ্যক যাত্রী দাঁড়ানো অবস্থায় বহন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র এক জরিপে দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ গণপরিবহনই ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চলাচল করছে। নগরীর গণপরিবহনের স্বেচ্ছাচারিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত এক বছরে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা কোনো নিয়মই মানছে না। সরকারের নিয়ম-নীতির কেউ তোয়াক্কা করে না। কোনো নীতিমালা না থাকায় রাজধানীর গণপরিবহনের নৈরাজ্য দূর করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সিটিং সার্ভিসে বাস চলাচল নিয়ে মালিক-শ্রমিকরা একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে। মালিকরা বলছেন শ্রমিকদের চাপের মুখে তারা সিটিং সার্ভিসে বাস চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। মালিকরা শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে শ্রমিকদের ভাষ্য, বেশি লাভের আশায় মালিকরাই সিটিং সার্ভিস হিসেবে বাস চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের কথা না মানলে চাকরি থাকবে না। মূলত ‘সিটিং সার্ভিস’ নামের কোনো সার্ভিসের অনুমতি নেই। সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা রয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কেবল যাত্রীসাধারণকে হয়রানি ও ভোগান্তিতে রেখে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই মওকা লুটে নিচ্ছে।

গণপরিবহন আইন, সড়ক আইন— যা-ই বলি না কেন তা যেন কাগুজে-কলমের বাঘ। নখদন্তহীন এ আইন বেপরোয়া করে তুলেছে পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মালিক-শ্রমিকসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদেরও। সাধারণ যাত্রীর কথা এখন আর কেউ বলছে না। এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষ আর কতদিন পথ চলবে? প্রশ্নটা একা আমার নয়, আমজনতার এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছেই রাখলাম।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads