• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতির হত্যার বিচার কতদূর  

সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতি

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতির হত্যার বিচার কতদূর  

  • হাসান টগর
  • প্রকাশিত ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

ফরহাদ খাঁ দম্পতি হত্যা ২০১১ সালের চাঞ্চল্যকর ঘটনা। নিজের আপন ভাগ্নের হাতে নির্মমভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হন সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ ও তার স্ত্রী। সব প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া খবরটি বিশদভাবে প্রকাশ করে যা মানুষের মুখে মুখে ছিল। ফরহাদ খাঁ ও রাহিমা বেগম খুনের মামলায় দ্রুত বিচার আদালত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন। রায় শুনে কোনো দুঃখ প্রকাশ না করে খুনিরা কোর্ট থেকে বাইর হওয়ার সময় বলে- হাইকোর্ট থেকে বাইর হয়ে সবাইকে দেখে নেব। শোনা যাচ্ছে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে খুনিরা। একই সঙ্গে আপিল করার কথা বলেছেন ফরহাদ খাঁর কন্যা আইরিন পারভীন খাঁ।

দেখতে দেখতে আটটি বছর অতীতের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবার ২৮ জানুয়ারি নবম বছরে পদার্পণ করবে ফরহাদ খাঁ দম্পতি হত্যাকাণ্ডের দিন। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে ৭৭, নয়াপল্টন মসজিদ রোডের ভাড়াবাসায় খুনিরা অত্যন্ত পাষণ্ড উপায়ে খুন করে পালিয়ে যায় । আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে খুনিরা ধরা পড়ে। এতদিনে পরিষ্কার হয়েছে ফরহাদ খাঁ দম্পতি হত্যার ব্যাপারে পরিবারের লোকজন জানত কিন্তু তারা কেউ মুখ খোলেনি। আমরা যতবার তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি তারা এড়িয়ে গেছে। অপরের ওপর দোষ দিয়েছে। আমরা ঢাকা থেকে ফরহাদ খাঁ দম্পতির কবর জিয়ারত করার জন্য টাঙ্গাইল জেলার কালীহাতি উপজেলার গান্ধিনা গ্রামে গিয়েছি। সেখানে ফরহাদ খাঁর বৃদ্ধ মা থাকেন। তিনি আমাকে বলেছেন- ‘ভুল করে ফেলেছে, এখন ওকে মাফ করে দেওয়া যায় না বাবা।’ আমি এ কথার কোনো উত্তর দেইনি।

ফরহাদ খাঁর জন্ম টাঙ্গাইলের কালীহাতি উপজেলার গান্ধিনা গ্রামে ১৯৫০ সালের ১১ আগস্ট। মা জাবেদা খানম, বাবা মৃত মতিয়ার রহমান খাঁ। ফরহাদ খাঁর সাত ভাই, দুই বোন। তিনি দ্বিতীয়। ১৯৬৩ সালে তিনি ঘাটাইল পাবলিক হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। এরপর তিনি ভুয়াপুরে ইবরাহীম খাঁ মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ইন্টারমিডিয়েট ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার পর ফরহাদ খাঁ  প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নজরে আসেন। আর প্রথম দর্শনেই ফরহাদ খাঁকে  ইবরাহীম খাঁর ভালো লেগে যায়। ঢাকার ধানমন্ডিতে ‘দখিন হাওয়া’য় ১৯৬৫ সালে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করার সুবাদে আজাদ ফরহাদ খাঁ শুধু ফরহাদ খাঁ নামেই পরিচিতি পান। ফরহাদ খাঁ ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সমবায় অধিদফতরে যোগদান করেন। এক ছেলে ও দুই কন্যার জনক ছিলেন ফরহাদ খাঁ। ১৯৭১-এর স্বধীনতাযুদ্ধের সময় ৬ মাস বয়সে ফরহাদ খাঁর একমাত্র ছেলে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। ছেলে হারানোর  শোকের ওপর অনেকটা বজ্রাঘাতের মতোই ১৯৮১ সালে তার বড় মেয়ে ফাহমিদা পারভীন খাঁ আট বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা যায়। বর্তমানে বেঁচে আছে একমাত্র তনয়া আইরিন পারভীন খাঁ।

সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, কবি, প্রবন্ধকার, লেখক, দার্শনিক বহুগুণের অধিকারী ছিলেন ফরহাদ খাঁ। ফরহাদ খাঁ নির্লোভি, নির্মোহ, নিরহঙ্কার ও পরোপকারী ছিলেন। সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দৈনিক পত্রিকায় সম্পাদকীয়সহ বিভিন্ন সঙ্কলন, স্মরণিকা, ম্যাগাজিন, সুভ্যেনির, নতুন বই ও পুরনো বইয়ের পরিমার্জন করতেন এবং মুখবন্ধ লিখতেন। ফরহাদ খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর একান্ত সহকারী হিসেবে তার ভাবশিষ্য হয়ে ওঠেন। সামাজিক সাংগঠনিক চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে ইবরাহীম খাঁর উপস্থিতি আমরা ফরহাদ খাঁর মধ্যে পাই।

সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ ছিলেন পেশার প্রতি নিবেদিত। তার মেধা, প্রজ্ঞা ও সত্যবাদিতা সর্বজনস্বীকৃত। সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ এদেশের সহজ-সরল খেটে খাওয়া মেহনতি গণমানুষের প্রতিনিধিত্বশীলতার চিন্তা-চেতনা আর কর্মের আঙিনা থেকে কখনো সরে দাঁড়াননি। দুর্নীতির কাদাজল তাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। দৈনন্দিন স্বভাবজাত আচার-আচরণ দ্বারা পরিচালিত জীবনধারায় উদ্ভাসিত ফরহাদ খাঁ ছিলেন সবার কাছে অনুসরণীয় এক ব্যক্তিত্ব।

 

লেখক : সাংবাদিক ও ছড়াকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads