• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

ওদেরও অধিকার আছে সব ধরনের বিদ্যালয়ে পড়ার

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দায়িত্বহীনতার চরমে উঠে সভ্যতা আনয়ন কতটা সহজ? শহর বা উপশহরের ভালো স্কুলগুলোতে কত শতাংশ শিক্ষার্থী সুবিধাবঞ্চিত হওয়া সত্ত্বেও পড়তে পারে— এর কোনো সমীকরণ আছে কি? খুব দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, আপনাদের আশপাশের একটু ভালো কিন্ডারগার্টেনগুলোতেই কি কোনো সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়ে পড়তে পারছে এমন তথ্য আপনি জানেন?

সুবিধাবঞ্চিতরা শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পড়ার সুযোগ পাবে তা কেন? রাস্তায় পড়ে থাকা শিশুটির সামনে দিয়ে যখন আমাদের সন্তানরা সেজেগুজে স্কুলে যায়, তখন ওদের দৃষ্টির দিকে একটু তাকানোর অনুরোধ রইল। খুব সহজেই বোঝা যাবে মনের অনুভূতির পার্থক্যটুকু। প্রায়ই আসা-যাওয়ার সময় দেখি গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় একটি শিশু আরেকটি শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে। গাল, মুখ, হাতগুলো খুব কোমল থাকার কথা থাকলেও একেবারেই কালিমাযুক্ত। খুব মায়া হয়। কষ্ট অনুভব করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। কিছু টাকা দিতে পারি এবং দিইও। কিন্তু দিনশেষে আসলে এদের সঠিক প্রাপ্য কি আমরা দিতে পারছি?

কতশত কিন্ডারগার্টেন গড়ে উঠছে বিখ্যাত সব নাম নিয়ে! অনেক সময় বীর শহীদদের নামকরণেও তৈরি হচ্ছে স্কুল-কলেজ। কিন্তু খুবই আক্ষেপের বিষয় হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব বিদ্যালয় পুঁজিবাদী মানুষগুলোর পুঁজিবাদ চাষাবাদেরই স্থান হয়ে উঠছে! আপাতদৃষ্টিতে এগুলো খুব সাজানো দেখা গেলেও এর ভেতরটা মূলত অন্তঃসারশূন্য। এ বিষয়টির কোনো সমাধান আসলে নেই। যেমন গাড়ির কালো গ্লাস ব্যক্তি পর্যায়ের অন্ধত্ব সৃষ্টি করছে, ঠিক তেমনি আমাদের সন্তানদের অন্ধত্ব সৃষ্টি করছি

স্কুল নামক বাসাগুলোর ভেতরে তাদেরকে শুধু তাদের চিন্তা শেখানোর অনুশীলন করানোর মাধ্যমে।

আমরা কয়েকজন একটা সংগঠন চালাই। গরিব ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার খরচ দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এবারো করেছি। কিন্তু এই কাঠামোটাকে তো আরো বড় করা উচিত। যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক রয়েছেন, তারা যদি এদের দিকে প্রতি বছর দুজনের ভারও নিতে চাইতেন তবে সমস্যার সমাধান হতেই পারত। কার কাছে বলব? সবাই নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এমন কিছু ভালো দিক সাজিয়ে রেখেছেন, যাতে করে মনে হবে আপনার সন্তানকে শুধু সে প্রতিষ্ঠানে একবার পা রাখাতে পারলেই যেন ভবিষ্যৎ পাল্টে গেল। বিল বোর্ড, মাইকিং আর প্রচারণায় ভরপুর সব রেজাল্টের জয়-জয়গান। চুনোপুঁটি ধুলাকণার মতো রাস্তায় থাকা শিশুগুলো তখন সকালের নাশতার জন্য কোনো হোটেলে হয়তোবা পুরি ভাজা করার সময় হাত পেতে বলছে, ‘সকালে কিছু খাইনি, যদি একটি পুরি আমাকে খেতে দিতেন!’ পুরিওয়ালার তখন যাচ্ছেতাই ব্যবহার! মাইকিংয়ে রেজাল্ট আর সাফল্যের শব্দে কখনো কখনো সমাজের অথর্ব মানুষগুলো ক্ষুধার আর্তচিৎকারও শুনতে ভুলে যায়! প্রশ্ন হলো, তবে কি ছিন্নমূল শিশুগুলো আবার ছিন্নমূল শিশুর জনক অথবা জননী হতেই চলেছে? তাহলে কি শিক্ষার

প্রসারে আমাদের এ দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে আমরা পালন করতে পারছি বলে মনে করেন?

নতুন সরকার এসেছে, নতুন অনেক কিছু পরিকল্পনাও আসবে। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে একটাই আবেদন, তা হলো ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। তাদের বাধ্যতামূলক শিক্ষা অর্জনে প্রতিটি বেসরকারি স্কুলকে একটি নির্দেশনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট শতাংশ শিক্ষার্থীকে একেবারে অবৈতনিক পড়াশোনা, শিক্ষা উপকরণের ব্যয়ভার বহন ও জামাকাপড়ের ব্যবস্থাপূর্বক তার জীবনযাপন এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াস নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো নিয়ে আরো চিন্তাশীল কাজে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। আমরা দেখতে চাই না দায়িত্বহীনতার কারণে কোনো এক অংশ সভ্যতার অপর পিঠে অসভ্যতার সাক্ষী হয়ে উঠছে।

 

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads