• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

দরিদ্রতার বিরুদ্ধে সুশাসন

  • মাহমুদুল হক আনসারী
  • প্রকাশিত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দরিদ্রতা একধরনের অভিশাপ। দারিদ্র্য কারো জন্য সুখকর নয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দারিদ্র্য বিতাড়িত করতে পারলেই অর্থনৈতিক মুক্তি। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বিজয় আনতে পারলেই সে ব্যক্তি, পারিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সফল হতে বেশি সময় লাগে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুশাসন থাকতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্তভাবে পরিচালিত হতে হবে। রাষ্ট্রের সমস্ত বাজেট সুষমভাবে বণ্টন হতে হবে। সবগুলো মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থ সুষমভাবে পরিচালিত হতে হবে। অর্থপ্রাপ্তি ও ব্যয় কোনো অবস্থায় অপচয় করা যাবে না। অপচয় বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় অর্থ জনগণের সঠিক কর্মপন্থায় ব্যয় করতে হবে। সমাজে এখনো অসংখ্য মানুষ ও পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সাফল্য তাদের নাগালে পৌঁছায়নি।

এখনো দরিদ্রতার কারণে শিক্ষা থেকে বিপুলসংখ্যক শিশু বাইরে রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে বিপুলসংখ্যক শিশু স্কুল থেকে বিমুখ। পারিবারিক দরিদ্রতার কারণে শিশু স্কুলে না গিয়ে কাজে গিয়ে রোজগার করছে। অনুন্নত গ্রামকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এনে শিক্ষার পরিধি বাড়াতে হবে। শহর নগরের যেসব দরিদ্র পরিবারের শিশুরা দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, তাদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সুশাসন, সমবণ্টন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি। দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে দরিদ্র জনগণের উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। শতভাগ শিশু যেন স্কুলমুখী হয়, সে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে কঠোরভাবে ন্যায়বিচারের পথ সুগম করতে হবে। সুশিক্ষা এবং সুশাসন ছাড়া কখনো দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। শিক্ষা ও সুশাসন— দুটোই সমানভাবে এগিয়ে নিতে হবে। আর শিক্ষা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। প্রতিটি নাগরিক ও পরিবারের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মোচন ঘটাতে হবে। শিক্ষা নাগরিকের অধিকার। সাংবিধানিকভাবে জাতিকে সুশিক্ষায়, সুশাসনে প্রতিষ্ঠা করার কথা আছে। জাতিকে শিক্ষা ও শাসনে পিছিয়ে রেখে কখনো শতভাগ উন্নয়ন অগ্রগতি সম্ভব নয়।

অন্যদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও জয়লাভে এবং অপশাসন থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে অবশ্যই শিক্ষা ও সুশাসন ত্বরান্বিত করতে হবে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরের বাংলাদেশ এখনো দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করছে। অর্ধশতকের বাংলাদেশ নানাভাবে এগিয়ে থাকলেও দারিদ্র্যের অভিশাপ এখনো জাতির ওপর চেপে আছে। ১৫ শতাংশ মানুষের কাছে দেশের সিংহভাগ সম্পদ কুক্ষিগত। ন্যায়-অন্যায়ভাবে অর্জিত অর্থের দাপটে তারাই দেশে নানাভাবে রাষ্ট্রীয় মালিক বনে যায়। অর্থের জোরে সংসদীয় আসনের প্রার্থী হয়ে যায়। কালো টাকার দাপটে তাদের হাতে আদর্শিক নেতৃত্ব পর্যুদস্ত হয়। এখনো সমাজের সিংহভাগ অশিক্ষিত মানুষ অর্থের কাছে মূল্যবান ভোট বিক্রি করতে দ্বিধাবোধ করে না। সেবা খাতগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী অথবা অন্য যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ সেবা নিতে গেলেই তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। বাংলাদেশের প্রশাসনে এটা একধরনের ক্যানসারের মতো বিস্তার ও

প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

নতুন সরকারের নতুন মন্ত্রিপরিষদ শপথ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইতোমধ্যেই বক্তব্য রেখেছেন। দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব সেবামুখী মন্ত্রণালয় গঠনের কথা শুনতে পাচ্ছি। বাস্তবে কতটুকু দুর্নীতিমুক্ত মন্ত্রণালয় জনগণ দেখবে সেটার অপেক্ষায় সবাই। বিগত সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা কোনো অংশেই বাকি রাখেনি। ন্যায্য ও প্রয়োজনীয় সব দাবি-দাওয়া তাদের পূরণ করা হয়েছে। বাস্তবে সে তুলনায় প্রশাসনকে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র জনবান্ধব করতে পারেনি। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে শোষণের মাধ্যমে একশ্রেণির কর্মকর্তা প্রতিনিয়ত ফুলে-ফেঁপে উঠছেন। মনে রাখতে হবে, এ দেশ জনগণের সম্পদ। দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের কঠোরভাবে নজরদারিতে আনতে হবে।

স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীতে বাংলাদেশের যে পরিমাণ উন্নতি অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এ সময়কালে দেশের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যারা কালো টাকার পাহাড় গড়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসেছে। স্বাধীনতার পক্ষের সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দারিদ্র্যমুক্ত শোষণহীন বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে এবং আগামীতেও করবে, জনগণের সেটাই প্রত্যাশা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুশাসন এবং সুশিক্ষায় জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নতুন সরকার— এমনটাই ভাবছে জাতি।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads