• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

বেসরকারি চাকরিজীবীদের জীবনমান উন্নয়ন

সরকারের পদক্ষেপ জরুরি

  • মো. আল আমিন নাহিদ
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বছর শেষে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাড়িভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। সে অনুযায়ী বাড়ছে না বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন। দেশে সরকারি চাকরিজীবীরা সুযোগ-সুবিধার উচ্চ শিখরে অবস্থান করছেন। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবধান আকাশ-পাতাল, যার ফলে বাড়ছে সামাজিক বৈষম্য অথচ আমরা একই দেশের একই সমাজের মানুষ। ঢাকা শহরে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বেতনের অর্ধেক অংশ ব্যয় করছেন বাড়িভাড়ার পেছনে। বাকি টাকা দিয়ে খাবার, চিকিৎসা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাসহ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যার ফলে তারা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় বা সম্পদ কিছুই করতে পারছেন না। একরকম তাদের ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত এবং হুমকির সম্মুখীন।

দফায় দফায় সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও তার ছিটেফোঁটাও বাড়েনি বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে, যার ফলে তারা অনেকটাই বঞ্চিত, অবহেলিত। দেশে বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঢাকা শহরে একজন রিকশাচালক বা ছোট টং দোকানদার মাসে আয় করছেন ২০-৩০ হাজার টাকা, সরকারি একজন অষ্টম শ্রেণি পাস চাকরিজীবীর বেতন ২১-২৫ হাজার টাকা অথচ একজন অনার্স মাস্টার্স পাস যুবককে ১৫-২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি খুঁজতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক সময় তারা চাকরি না পেয়ে নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী যা প্রাপ্য তার চেয়ে কম বেতনে চাকরি করছেন কোনো রকম খেয়েপরে বেঁচে থাকার তাগিদে। সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, যেমন নার্স, স্কুল কলেজ মাদরাসার শিক্ষকদের জীবন মান উন্নয়নে তাদের বেতন কাঠামো পরিবর্তন করলেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি নজর দেয়নি যা দুঃখজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো থাকলেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের তা নেই। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেশে বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেনতেন বেতনে নিয়োগ দিচ্ছে। সরকারকে প্রথমে দেশে বেকারত্ব দূরীকরণে পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য সরকারকে শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে হবে। তাহলেই দেশের যেমন অর্থনৈতিক অগ্রগতি হবে, তেমনি বেকারত্ব দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে বেতনভাতা, সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তাই উন্নত দেশগুলোতে সরকারি চাকরিতে আমাদের দেশের মতো এত হুড়োহুড়ি বা চাপাচাপি নেই। যে যেটাই পাচ্ছে তা দিয়ে তারা সন্তুষ্ট; যেহেতু সুযোগ-সুবিধা প্রায় একই রকম। তাই সরকারকে দেশের এই বিপুলসংখ্যক বেসরকারি চাকরিজীবীদের জীবন মান উন্নয়নে ভাবতে হবে।

কারণ দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী বেসরকারি চাকরির সঙ্গে যুক্ত। সরকার ইতোমধ্যে উন্নত বিশ্বের মতো বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন স্কিম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও ইতিবাচক পদক্ষেপ, যা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি। বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রতিও সরকার নজর দিয়ে বেতনবৈষম্য দূরীকরণ, নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নির্ধারণ এবং পেনশন ব্যবস্থা চালু করে তাদের জীবন মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে- এমনটা আশা আমরা করতেই পারি। যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads