• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
একুশে বই মেলা প্রাণের উৎসব

একুশে বই মেলা প্রাণের উৎসব

ছবি : সংগৃহীত

মতামত

একুশে বই মেলা প্রাণের উৎসব

  • আরাফাত শাহীন
  • প্রকাশিত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে অমর একুশে বই মেলা। আমাদের দেশের ইতিহাসের সঙ্গে অমর একুশে বই মেলার রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম অনেকটাই বইবিমুখ বলে পরিচিত। ইন্টারনেট প্রযুক্তি এবং আকাশ সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসারের ফলে মানুষ যে কাগুজে বই থেকে কিছুটা দূরে সরে এসেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে মানুষের বইপড়ার অভ্যাস যে একদম নেই, তেমনটা মনে করার কোনো কারণ দেখি না। যদি তা-ই হতো, তাহলে আমাদের প্রাণের মেলা অমর একুশে বই মেলা এতটা জমজমাট হতে পারত না। বই মেলার স্টলগুলোর সামনে মানুষের ব্যাপক ভিড় এবং পছন্দের বইটি খুঁজে বের করার যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা সবার মাঝে লক্ষণীয় তা আমাদের আশাবাদী করে তোলে। আমাদের নতুন প্রজন্ম যে আবার বইয়ের দিকে ফিরে আসতে শুরু করেছে, এটা তারই বাস্তব প্রমাণ।

আমাদের এই প্রাণের উৎসবের জন্ম ইতিহাসটা কি আমরা সবাই জানি? আমাদের প্রিয় স্বদেশের জন্ম আর অমর একুশে বই মেলার জন্ম প্রায় একই সময়ে। ১৯৭২ সালে চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণের বটতলায় এই প্রাণের উৎসবের গোড়াপত্তন করেন। শুরুতে মাত্র ৩২টি বই নিয়ে মেলার যাত্রা শুরু হয়েছিল। আর আজ সেটাই মহীরুহ হয়ে আমাদের জাতীয় জীবনেও সীমাহীন প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

বই মেলাকে ঘিরে আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কোনো কমতি থাকে না। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে অতিশয় বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই বই মেলাকে ঘিরে উত্তেজনা বোধ করে থাকেন। মেলায় গিয়ে নিজের পছন্দের বই কিনতে না পারলে অনেকের রাতে ঘুম হয় না। তাই মেলা প্রাঙ্গণে সার্বিক নিরাপত্তা এবং সবাই গিয়ে সহজেই যাতে প্রিয় স্টল খুঁজে পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা থাকা জরুরি। বিগত বই মেলায় ঘটে যাওয়া বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনা আমাদের শঙ্কিত করে তোলে। তবে আমরা আশাবাদী, মেলাকে কেন্দ্র করে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। বাংলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক এবার মেলার স্টল বিন্যাসে নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন। তাই আশা করা যায়, কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই সবাই মেলায় গিয়ে পছন্দের বই সংগ্রহ করতে পারবেন। বইমেলাকে বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত করতে এসব বিষয়েও সচেতন থাকা জরুরি।

প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। যারা মনে করেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জয়-জয়কারের যুগে ছাপার অক্ষরের বই অচল মুদ্রায় পরিণত হয়েছে, তারা গিয়ে বিশ্বের এসব বড় বড় বই মেলায় একবার ঘুরে আসবেন। আসলে কাগুজে বইয়ের ঘ্রাণ এবং আবেদন আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তেমনি আছে; আর বলার অপেক্ষা রাখে না ভবিষ্যতেও থাকবে। বই কোনো নির্দিষ্ট দেশের নয়, কোনো নির্দিষ্ট ভাষার নয়; বই সবার। এই বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে আজ থেকে প্রায় পাঁচশ বছর আগে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো এবং বৃহৎ পরিসরের মেলার শুরু হয়েছিল জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে। ফ্রাংকফুর্ট বই মেলা নামে পরিচিত এই মেলায় সারা বিশ্ব থেকে লাখো বইপ্রেমী অন্তরের তাড়নায় গিয়ে হাজির হন। আমাদের পাশের দেশ ভারতের কলকাতায়ও বই মেলার আয়োজন করা হয় অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে। বাংলা ভাষাভাষি পাঠকেরা সেখানে গিয়েও আত্মার রসদ জোগাড় করতে পারেন।

অনেকেই মনে করে থাকেন, আমরা তো সারা বছর বইয়ের দোকান থেকেই বই কিনতে পারি, তাহলে এমন ঘটা করে বই মেলার আয়োজনের কী দরকার? তাদের জবাবে বলব, বই মেলা শুধু বই কেনাবেচার মেলাই নয়, এটি প্রকৃতপক্ষে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলা। আমরা সারা জীবন যাদের লেখা পড়ে এসেছি, তাদের কাছ থেকে চোখে দেখা এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ বই মেলা ছাড়া আর কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন? সত্যি বলতে কী, যারা প্রকৃতপক্ষে পাঠক, তারা সারা বছর বই পাঠ করলেও এই একটি মাসের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে থাকেন। অমর একুশে বই মেলার আয়োজন তাই বাঙালি পাঠকের কাছে কোনোদিনও কমবে না।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ংসংযধযববহ৯৭—মসধরষ.পড়সলববিষৎিরঃবৎ৫৩—মসধরষ.পড়স

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads