• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দুর্বলতা

বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দুর্বলতা

ছবি : সংরক্ষিত

মতামত

বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দুর্বলতা

  • মোহাম্মদ আবু নোমান
  • প্রকাশিত ০২ মার্চ ২০১৯

একজন অস্ত্রধারী (হোক তা খেলনা পিস্তল) বিনা চ্যালেঞ্জে বিমানে উঠতে পারে কীভাবে? মনে পড়ে এই বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকেই একটি ছেলে প্লেনের চাকায় উঠে বসেছিল সৌদি আরব যাওয়ার আশায়! তার আশা পূরণ হয়েছিল, তবে প্লেনের চাকার বক্সে নির্মম মৃত্যুবরণের মাধ্যমে। স্বাভাবিক নিয়মে দফায় দফায় নিরাপত্তা তল্লাশি ও মালামাল স্ক্যানিংয়ের পর বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে বিমানে উঠতে হয়। স্বর্ণ গিলে পেটে নিয়ে এলেও যেখানে ধরা পড়তে হয়, সেখানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চোখ ফাঁকি দিয়ে পলাশ কীভাবে বিমানে উঠতে পারল, এই রহস্য আগে খোলাসা করা উচিত! আমরা জানি, ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করে সবশেষে আরো একদফা তল্লাশি করা হয়। সব ফাঁকি দিয়ে এই ঘটনা কীভাবে ঘটল, এর তদন্ত ফলাফল জনগণ কি জানতে পারবে?

দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় কোনো আপস থাকতে পারে না। সবচেয়ে সেনসিটিভ জায়গায় এত অবহেলা কাম্য হতে পারে না। সত্যিকার অর্থেই যদি কোনো অঘটন ঘটে যেত, তাহলে এর দায় কে নিত? এ ঘটনার নতুন শিক্ষা- বিমানবন্দরে কর্মরতদের গাছাড়া ভাব নিয়ে কাজ করলে চলবে না। নিরাপত্তাকে নিরাপত্তার সু-কোমল নরম চাদরে ঘুমিয়ে রেখে, কর্মরতরা যদি তাকিয়ে থাকেন কখন কোন যাত্রীকে ধরে দুইশ-পাঁচশ টাকা বা ৫-১০ ডলার বকশিশ পাবেন, তাহলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। দুর্বল নিরাপত্তার কারণে এ বিমানবন্দরকে মাদক ও স্বর্ণ চোরাকারবারিরা রুট হিসেবে বেছে নিচ্ছে। বিমানবন্দরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে সতর্ক করেছিল। নিরাপত্তা দুর্বলতার অজুহাতে সরাসরি মালবাহী (কার্গো) উড়োজাহাজ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একপর্যায়ে ঢাকা থেকে লন্ডন সরাসরি কার্গো চলাচল বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্য। আগেও ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর জায়গায় এমনকি উড়োজাহাজে উঠে বসে বিভিন্নজন সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আত্মীয়কে এগিয়ে দিতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশিকুর রহমান থাই এয়ারের একটি উড়োজাহাজের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন। বিমানটি রানওয়েতে গড়ানোর আগমুহূর্তে বিষয়টি ধরা পড়ে। নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অজুহাত তুলে বিমানটির ক্যাপ্টেন সেটি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নেমে পড়েন। এরপর তাকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। আশিকুরের ঘটনার চারদিন পর একই বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় ঢুকে পড়েন কাস্টমসের রাজস্ব সহায়ক কর্মকর্তা তোহরা বেগম। সর্বশেষ পলাশের বিমান ছিনতাইচেষ্টার ঘটনা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আবারো নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ বিমানের একটি সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরসহ চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটে ওসমানী বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের যথেষ্ট গুরুত্ব নিয়ে তল্লাশি করানো হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে তল্লাশির কাজটি তুলনামূলক ঢিলেঢালাভাবে চলে। এই ঢিলেমির সুযোগটি ওই যাত্রীরা নিয়ে থাকতে পারেন। পলাশ আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী নয়, কিন্তু বিমানটি তো আন্তর্জাতিক রুটের। তাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক। এ ঘটনা দেশ এবং বাংলাদেশ বিমানের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াল।

ছিনতাইচেষ্টাকারী যুবক কী উদ্দেশ্যে বিমান ছিনতাই করতে চেয়েছিল, তা জানা যায়নি। সংবাদমাধ্যমে শুধু এই তথ্যটুকু এসেছে, সে নাকি প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিল। সেনা কমান্ডো অভিযানে তার আহত ও পরে মৃত্যু হওয়ার কারণে অনেক কিছুই জানা সম্ভব হলো না। প্রশ্ন উঠেছে, তাকে অক্ষত অবস্থায় আটক করা সম্ভব ছিল কি-না। ঘটনার বিবরণ থেকে বোঝা যায়, বিমান থেকে একে একে যাত্রী ও ক্রুরা সবাই নিরাপদে বেরিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে তারা কোনো বাধা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েননি। তথাপি ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে এটা মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে, একজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি কীভাবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ভেদ করে বিমানে উঠল। যাহোক, প্রকৃত সত্যটা জানানো হোক। যে লোকটা একটা বিমান ছিনতাইয়ের সাহস রাখে, সে তো বড় কোনো দেশি-বিদেশি মাফিয়া ডনের সঙ্গেও কানেক্টেড হতে পারে। সর্বমহলে আলোচনা হচ্ছে তাকে জীবন্ত ধরা গেলে অনেক কিছু জানা যেত। সত্য উদঘাটন ও সন্দেহের অবসান সহজ হতো। ছিনতাইচেষ্টার অবসানে যাত্রী ও ক্রুদের কোনোরূপ অঘটন ছাড়াই নিরাপদে বের করে আনা ও সফলভাবে তা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে র্যাব-পুলিশ, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিস সর্বোপরি সেনা কমান্ডোরা যে সুপরিকল্পিত সম্মিলিত উদ্যোগ ও ভূমিকা পালন করেন তা প্রশংসা ও স্বস্তিকর ব্যাপার। কিন্তু এ অভিযানকে শতভাগ সফল বলা যায় না। অপরাধীকে ধরে এর সোর্স বের করে ভবিষ্যতের হুমকির মোকাবেলা করতে না পারলে সে অভিযান সফল হয় না।

অস্ত্র নিয়ে বিমানে ওঠা সম্ভব নয়, জানার পরও পৃথিবীতে প্রচুর বিমান ছিনতাই ও খুনখারাবির ঘটনা ঘটে। ২০১৫ সালের ১৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি এয়ারক্রাফটের চাকার ভেতরের বক্সে লুকিয়ে লন্ডন যেতে চেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। প্লেনটি লন্ডনে পৌঁছার পর হিথ্রো এয়ারপোর্টে নামার সময় প্রাণহীন দেহ পড়ে যায় লন্ডনের রিচমন্ড শহরের একটি বাড়ির ছাদে। গত বছর ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে বিমানের চাকায় লুকিয়ে ভ্রমণের সময় দুজনের মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালে প্লেনের চাকার ফাঁকে পাঁচ ঘণ্টা থাকার পরও অবিশ্বাস্যভাবে প্রাণে বেঁচে যায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর। বিমানের ফ্লাইটটি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে হাওয়াইতে পৌঁছানোর পর সন্ধান মেলে ওই কিশোরের। কিন্তু এসব দেশে সঠিক তদন্ত হয়। যার কারণে তাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটনার পরেও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয় না।

 

লেখক : সাংবাদিক

ধনঁহড়সধহ১৯৭২—মসধরষ.পড়স

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads