• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সংসদে একটি বিল পাস হয় ৩২ মিনিটে

সংগৃহীত ছবি

সংসদ

সংসদে একটি বিল পাস হয় ৩২ মিনিটে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ অক্টোবর ২০২০

একাদশ সংসদের পাঁচটি অধিবেশনে আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে ৯ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। আর বিল উত্থাপনসহ প্রতিটি বিল পাস করতে গড়ে প্রায় ৩২ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে।

গতকাল বুধবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলদেশ-টিআইবি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ২০১৯ সালের সংসদ (প্রথম থেকে পঞ্চম অধিবেশন) কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এক ওয়েবিনারে গবেষণা প্রতিবেদন ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রকাশ করে টিআইবি।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে ভারতের ১৭তম লোকসভার অধিবেশনে আইন প্রণয়নের সময় ব্যয়ের হার ছিল ৪৫ শতাংশ। আর ২০১৯ সালে ভারতের ১৭তম লোকসভায় প্রতিটি বিল পাসে গড়ে প্রায় ১৮৬ মিনিট সময় ব্যয় হয়।

টিআইবি বলছে, অধিকাংশ সংসদীয় কমিটিতে বিলের ওপর আলোচনায় ঘাটতি লক্ষ করা যায়। বিলের ওপর সংশোধনী এবং যাচাই-বাছাই প্রস্তাবের ক্ষেত্রে শংলনামূলকভাবে প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বিরোধী সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়েছে। আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে প্রধান বিরোধী দল ৬৭ শতাংশ, অন্যান্য বিরোধী সদস্য ১৭ শতাংশ, সরকারি দল ১৬ শতাংশ (বিল উত্থাপনকারী মন্ত্রীরা) সময় ব্যয় করেছেন।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের হলফনামায় উল্লিখিত প্রধান পেশা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বোচ্চ শতকরা ৬১ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী, আইনজীবী প্রায় ১৩ শতাংশ, রাজনীতিক মাত্র ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য পেশার সদস্য রয়েছেন ২১ শতাংশ।

অন্যান্য পেশার মধ্যে শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, গৃহিইী, পরামর্শক ইত্যাদি পেশা উল্লেখযোগ্য।

আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের শতকরা ৫৯ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির শতকরা ৫৬ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী। অন্যদিকে ভারতের ১৭তম লোকসভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে রাজনীতিক ৩৯%, ব্যবসায়ী, ২৩%,  আইনজীবী ৪% এবং অন্যান্য পেশার সদস্য রয়েছেন ৩৮%।

টিআইবি বিগত কয়েকটি সংসদের সদস্যদের প্রধান পেশা বিশ্লেষণ করে বলছে, প্রথম সংসদে আইনজীবীদের শতকরা হার ৩১ শতাংশ ছিল, যা ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে একাদশ সংসদে ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের শতকরা হার প্রথম সংসদে ১৮ শতাংশ ছিল, যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে একাদশ সংসদে ৬১ শতাংশে পৌঁছেছে।

দেশে শান্তিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা রদবদলের সম্ভাবনা দূরীভূত হয়েছে বলে টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, ‘অষ্টম ও নবম সংসদে সমস্যার মূল যে জায়গা ‘সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি’ অগ্রহণযোগ্য ছিল। সেটি বন্ধ হয়েছে চড়া দামে। এত বেশি চড়া দামে যে, মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচনের সংস্কৃতি আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। শান্তিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা রদবদলের সম্ভানা দূরীভূত হয়েছে। তারই প্রভাব আমরা দেখতে পারছি জাতীয় সংসদের মধ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ সংসদে একদলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সংসদীয় কার্যক্রমে একচ্ছত্র ক্ষমতার সুযোগ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। সংসদের মৌলিক দায়িত্ব আইন প্রণয়ন, সরকারের জবাবদিহিতা এবং জনপ্রতিনিধিত্ব এই তিনটি ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ভূমিকা আমরা দেখতে পারছি না।’

প্রতিবেদনটিতে টিআইবি পর্যবেক্ষণে বলেছে, প্রশ্নবিদ্ধ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ফলে সংসদীয় কার্যক্রমে বিশেষত আইন প্রণয়ন, বাজেট প্রণয়ন এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা আরো জোরদার হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন মহাজোটের একটি দল নিয়ম রক্ষার প্রধান বিরোধী দল হওয়ায় সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় তাদের জোরালো ভূমিকার ঘাটতি লক্ষ করা গেছে।

তিনি বলেন, ‘সংসদীয় কার্যক্রমে আইন প্রণয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলেও আইন প্রণয়নের আলোচনায় সংসদ সদস্যদের কম অংশগ্রহণ, অনাগ্রহ ও দক্ষতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। অধিকাংশ সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকর জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads