• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে ইসলাম

  • মুফতি আবদুল্লাহ
  • প্রকাশিত ১২ অক্টোবর ২০১৮

মানুষের মর্যাদা ও পূর্ণতা দুভাবে গণ্য হয়ে থাকে। একটি হয়ে থাকে ব্যক্তিগতভাবে যোগ্যতা-পরিপূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে; অন্যটি হয়ে থাকে বংশগত বা খান্দানি সম্মানসূত্রে। বংশগত মর্যাদা অন্যান্য ধর্মে সাধারণভাবে এবং ইসলাম ধর্মে বিশেষভাবে সম্মানের চোখে দেখা হয়েছে। বিবাহের ক্ষেত্রেও  বংশগত সমতা গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। খিলাফত ও নেতৃত্ব প্রশ্নে ‘কুরাইশ’ বংশীয় হওয়ার যে কথা রয়েছে, তা-ও এ বংশগত বিবেচনায়ই। বিষয়টি পবিত্র কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ও সমর্থিত হয়, যার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হচ্ছে-  প্রথমত সুরা আল-কাহফে দুজন এতিমের দেওয়াল নির্মাণ করে দেওয়ার কথা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহপাক সেটি কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই হজরত মুসা (আ.) ও হজরত খিজির (আ.)-কে দিয়ে নির্মাণ করিয়ে দিয়েছেন। এ কল্যাণ কাজে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দয়া-অনুগ্রহ কার্যকর হয়েছে, তার কারণ হিসেবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের দুজনের পিতা নেককার ছিলেন।’ (সুরা আল কাহাফ, আয়াত : ৮২)

আল্লামা আলুসি (রা.) ‘তাফসীরে রূহুল মাআনী’তে লিখেছেন, ওই নেককার লোকটি এ বাচ্চাদের সপ্তম বা দশম ঊর্ধ্বতন পুরুষ ছিলেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, পিতা-দাদা প্রমুখের নেক ও মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার কল্যাণও বংশপরম্পরায় সন্তানদের পর্যন্ত পৌঁছে থাকে। যে-কারণে এ বংশগত সম্মানের বিবেচনায় মহান আল্লাহ বাচ্চাদের প্রতিও বিশেষ বিবেচনা এবং সম্মানজনক দয়া করেছেন। ইমাম ইবন আবু শায়বা (রা.), ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রা.) ও ইবন আবু হাতেম (রা.), হজরত খায়সামা (রা.) সূত্রে হজরত ঈসা (আ.)-এর এই বাণী উদ্ধৃত করেছেন যে, ‘সন্তানের ক্ষেত্রে নিজ বরকত-কল্যাণের দ্বারা, তারা তার পরবর্তী সময়েও শান্তি ও নিরাপদে থাকবে।’ অতঃপর এর সমর্থনে হজরত খায়সামা (রা) সুরা কাহাফের উক্ত আয়াত পাঠ করেছিলেন।

তাফসীরে রূহুল মাআনী গ্রন্থে ইমাম আবদ ইবন হুমাইদ (রা.) ও ইবনুল মুনজির (রা.) সূত্রে হজরত ওয়াহাব (রা.) থেকে উদ্ধৃত করেছেন, হজরত হাসান (রা.) জনৈক খারেজিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা জানো সুরা কাহাফে বর্ণিত এতিমদের সম্পদ আল্লাহপাক কেন হিফাজত করে রেখেছিলেন? সে জবাবে বলল, পিতার নেক আমল ও পুণ্যবান হওয়ার কারণে। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার পিতা ও নানা রসুল (সা.)-এর নেককার হওয়া ও নেক আমল তো ওই পিতার চেয়ে হাজারো গুণ অধিক ছিল।

দ্বিতীয়ত সুরা তূর আয়াত নং ২১-এ লিপিবদ্ধ আছে, ‘এবং যারা ঈমান গ্রহণ করে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সঙ্গে (পরকালে) তাদের সন্তান-সন্ততিকে একত্র করে দেব এবং আমি তাদের কর্মফল মোটেও হ্রাস করব না।’ (আয়াত নং-২১) একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) মসজিদে বসা ছিলেন এবং সাহাবাগণ চারদিকে তাঁকে ঘিরে বসে অবস্থান করছিলেন। এ অবস্থায় সামনের দিক থেকে হজরত আলী (রা.) এসে পৌঁছালেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে মজলিসে বসার স্থান লক্ষ করছিলেন। মহানবী (সা.) নিজ সাহাবাদের প্রতি তাকাচ্ছিলেন, তাদের কেউ তাকে বসার স্থান করে দিচ্ছেন কি-না? হজরত আবু বকর (রা) নবীজী (সা.)-এর ডানে বসা ছিলেন। তিনি নিজ স্থান থেকে কিছুটা সরে গিয়ে বললেন, হে আবুল হাসান! আপনি এখানে এসে বসে পড়ুন! আর এভাবেই হজরত আলী (রা.) এসে নবী করিম (সা.) ও হজরত আবু বকর (রা.)-এর মাঝামাঝি বসে পড়লেন। তখন আমরা দেখতে পেলাম নবী করিম (সা.)-এর চেহারা মুবারকে অতন্ত খুশির ছাপ স্পষ্ট। এরপর হুজুর (সা.) হজরত আবু বকর (রা)-এর প্রতি তাকিয়ে ইরশাদ করলেন, হে আবু বকর! ‘সম্মানী লোকের কাছ থেকেই সম্মানজনক ব্যবহার প্রকাশ পায়’। (আল-বিদায়া)

লেখক : মুফিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads