• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
মানুষের কল্যাণে মাছি ও মৌমাছি

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

মানুষের কল্যাণে মাছি ও মৌমাছি

  • আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
  • প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

আমাদের দৃষ্টিগোচর ও অদৃষ্টিগোচরে ছোট থেকে ছোট, বড় থেকে বড় প্রতিটি সৃষ্টিই করুণাময় আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন। এসব সৃষ্টিই করুণার আধার মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মানুষের জন্য বিশেষ নেয়ামতস্বরূপ। এ প্রাণিবৈচিত্র্যকে সৃষ্টিই করা হয়েছে মানুষের উপকারের জন্য।

তাই তো মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বিশাল সাগর, পাহাড়ের বর্ণনা যেমন করেছেন, তেমনি করেছেন ক্ষুদ্র পিঁপড়া বা মশা-মাছিরও। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহপাক মাছি কিংবা তার চেয়েও ছোট কোনো কিছুর উপমা দিতে লজ্জা করেন না।’ (সুরা বাকারা : ২৬)

এবার আসুন আমাদের পরিচিত দুটি পতঙ্গ মাছি ও মৌমাছির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

মাছি : মাছি! ডিপ্টেরা বর্গভুক্ত একটি পতঙ্গের নাম। প্রাণিজগতের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত এই পতঙ্গের মূল রহস্য তার এক জোড়া পাখা। যার একটিতে রয়েছে মানবদেহের রোগপ্রতিষেধক। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কারো পানীয় বস্তুর মধ্যে মাছি পড়ে, তখন সে যেন তাকে (মাছিকে) তার মধ্যে ডুবিয়ে দেয়। তারপর তাকে বাইরে ফেলে দেয়। কেননা ওর এক ডানায় রোগ আর অন্য ডানায় আরোগ্য রয়েছে।’ ( বুখারি : ৩৩২০, ৫৭৮২)

কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডক্টর ‘ওয়াজিহ বায়েশরী’ এই হাদিসের আলোকে মাছিকে নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষা চালান। জীবাণুমুক্ত কিছু পাত্রের মাধ্যমে মাছির বাজার থেকে কয়েকটি মাছি ধরে নিয়ে জীবাণুমুক্ত টেস্ট টিউবের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেন। তারপর নলটি একটি পানির গ্লাসে উপুড় করেন। মাছিগুলো পানিতে পতিত হওয়ার পর ওই পানি থেকে কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, সেই পানিতে অসংখ্য জীবাণু রয়েছে। তারপর জীবাণুমুক্ত একটি সুচ দিয়ে মাছিকে ওই পানিতেই ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, সেই পানিতে আগের মতো আর জীবাণু নেই, বরং কম। তারপর আবার ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে আবার পরীক্ষা করেন।

এমনিভাবে কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখেন যে, যতবার মাছিকে ডুবিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন, ততই জীবাণু কমেছে অর্থাৎ ডক্টর ওয়াজিহ এটা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, মাছির একটি ডানায় রোগজীবাণু রয়েছে এবং অপরটিতে রোগনাশক ওষুধ রয়েছে। সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত অষ্টম চিকিৎসা সম্মেলনে কানাডা থেকে দুটি গবেষণা-রিপোর্ট পাঠিয়েছিল যাতে উল্লেখ ছিল- মাছিতে এমন কোনো বস্তু রয়েছে যা জীবাণু ধ্বংস করে দেয়।

এখানে একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া প্রয়োজন, মাছি অবশ্যই ব্যাকটেরিয়া বহন করে। তাই এর থেকে বাঁচতে খাবারের পাত্র ঢেকে রাখতে হবে। হাদিসেও এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

মৌমাছি : মৌমাছি বা মধুমক্ষিকা নামের এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি পিঁপড়ারই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। এরা মধু ও মোম উৎপাদনীয় উপকারী পতঙ্গ। পৃথিবীতে প্রায় বিশ হাজার প্রজাতির মৌমাছি লাখ লাখ বছর ধরে টিকে রয়েছে। এরা উদ্ভিদের পরাগায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৌমাছির রয়েছে ১৭০টি ঘ্রাণ সংবেদী ইন্দ্রিয়, যা দ্বারা এরা অনেক দূর থেকেও নির্দিষ্ট ফুলের ঘ্রাণ পায়।

মৌমাছি কঠোর পরিশ্রমী একটি প্রাণী। একটি বড় চাকের মধু সংগ্রহ করতে গড় হিসাবে সব মৌমাছি প্রায় নব্বই হাজার মাইল পথ পাড়ি দেয়। এই নব্বই হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা মানুষের জন্য মধু সংগ্রহ করে, যে মধুকে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ফিহি শিফাউল লিন্নাস’ তথা মানবজাতির মহৌষধ।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রসুলুল্লাহর (সা.) কাছে এসে বলল, ‘আমার ভাইয়ের পেট ছুটে গেছে। অর্থাৎ খুব পায়খানা হচ্ছে।’ তিনি বললেন, তাকে মধু পান করিয়ে দাও। সে গেল এবং তাকে মধু পান করালো। আবার সে এলো এবং বলল (এভাবে দুবার)। পুনরায় এসে বলল, হে আল্লাহর রসুল (সা.)! তার পায়খানা তো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বললেন, আল্লাহ সত্যবাদী এবং তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যাবাদী। সে গেল এবং তাকে মধু পান করালো। এবার সে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করল।’ (বুখারি : ৫/২৯১, মুসলিম, তিরমিজি : ৬০৭/ ২০২৩)

শুধু মধুই নয়, মৌমাছির বিষও মানুষের জন্য শিফা। নিউজিল্যান্ডের নেলসন হানি অ্যান্ড মার্কেটিং নামের একটি কোম্পানি জানিয়েছে, গেঁটে বাতজনিত ব্যথা নিরাময়ে প্রদাহ নিরোধক হিসেবে কাজ করে মৌমাছির বিষ। তাদের মতে, মৌমাছির বিষপ্রয়োগে বাতের চিকিৎসা নতুন ধারণা নয়। কোনো কোনো ক্লিনিকে মৌমাছির হুল ফুটিয়ে বাতের চিকিৎসা করা হয়। (উইকিপিডিয়া)

মৌমাছির আবাসস্থলকে বলা হয় মৌচাক। এটি তৈরি হয় মোম জাতীয় পদার্থ দিয়ে। এই চাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ষড়ভুজ প্রকোষ্ঠ থাকে। মৌমাছিরা এসব প্রকোষ্ঠে মধু সঞ্চয় করে। আর ফাঁকা প্রকোষ্ঠে ডিম পাড়ে। লার্ভা ও পিউপা সংরক্ষণ করে।

মৌমাছির এই দারুণ শৈল্পিক বাসা বা চাক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এক কুদরতেরই বহিঃপ্রকাশ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আপনার রব মৌমাছিদের জ্ঞানদান করেছেন যে, গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে।’ (সুরা নাহল : ৬৮)

লেখক : ইমাম ও খতিব : কসবা জামে মসজিদ, রেলস্টেশন রোড, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads