• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
গণমাধ্যম হোক নবুয়তি ধারায় সিক্ত

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

গণমাধ্যম হোক নবুয়তি ধারায় সিক্ত

  • প্রকাশিত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

গণমাধ্যম বলতে আমরা বুঝি এমন মাধ্যম, যার সাহায্যে যে কোনো তথ্য, বক্তব্য ও সংবাদ জনমানসে পৌঁছে দেওয়া যায়। জনগণের চিন্তা-চেতনাকে আন্দোলিত করতে যে মাধ্যম ব্যবহূত হয় তাকেই আমরা গণমাধ্যম বলতে পারি। প্রযুক্তির এ যুগে, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ফেসবুক এবং সংবাদপত্র এসবই বর্তমান আধুনিক গণমাধ্যম হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসবের মধ্যে সংবাদপত্র সবচেয়ে সহজ লভ্য এবং এর গুরুত্ব ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘস্থায়ী। অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগে এসব গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে মানবজাতির মঙ্গল যেমন হচ্ছে, তেমনি অমঙ্গলও কম হচ্ছে না। গণমাধ্যমের সম্পাদক সাংবাদিকদের চিন্তা-চেতনা ও নীতি-আদর্শ এবং সংগৃহীত তথ্যের জাদুকরী পরিবেশনায় জনমানস আলোড়িত হয়, আন্দোলিত হয়।

সুতরাং তারা যদি সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে, বিশ্বস্ততার সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে, তাহলেই কেবল এসব গণমাধ্যম আমাদের কল্যাণে আসবে। সংবাদ আদান-প্রদানের সুস্থ নিয়মনীতি ও মৌলিক তত্ত্ব মানুষ লাভ করেছে আল্লাহ কর্তৃক নবী রসুলদের কাছে ওহী নাজিলের মাধমে। নবী-রসুলদের ইতিহাস মানব সভ্যতার অতিপুরনো। ইসলামী পরিভাষায় অতি পরিচিত শব্দ নবী-রসুল। যার আভিধানিক অর্থ-সংবাদ বহনকারী পবিত্র সত্তার অধিকারী নবী ও রসুলগণ মানবজাতিকে বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছিল ভ্রান্ত জাতিগুলোর চরম পরিণতির খবর। কল্যাণ ও মঙ্গলের খবর মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন সততা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে।

আমরা দেখি হজরত নূহ (আ.) ঘোষণা করেছেন, আমি তোমাদের পয়গাম বার্তা পৌঁছাই এবং তোমাদের সদুপদেশ দেই। অন্য একজন নবী তাঁর সম্প্রদায়কে বলেন, আমি তোমাদের পয়গাম পৌঁছাই এবং আমি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী ও বিশ্বস্ত। নবীদের এই ঘোষণা যা উচ্চারিত হয়েছে মানব সভ্যতার সূচনালগ্নে এতেই নিহিত রয়েছে সৎ সাংবাদিকতার মৌলিক বৈশিষ্ট্য। সাংবাদিকতাকে নবুওয়তি কাজের ছায়া হিসেবে মেনে নিলেই সাংবাদিকতার জগৎ উজ্জ্বল হতে পারে। নবী-রসুলরা যেমন ছিলেন সত্যের বাহক ও জনগণের মঙ্গলকারী তেমনি সাংবাদিকরা ও যদি সৎ ও মানুষের কল্যাণকারী হয় তাহলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে আসতে পারে পবিত্র ও উন্নত পরিবেশ। রসুল (সা.)-এর সাংবাদিকতা শুরু হয়েছিল। ‘ইকরা’ পড় আসমানি বাণীর মাধ্যমে। সুতরাং সাংবাদিকতার জন্য অপরিহার্য হলো পড়া। প্রচুর পরিমাণে পড়া এবং পঠিত বিষয়বস্তু আত্মস্থ করা; এরপর তা পরিবেশন করা।

রসুল (সা.) দীর্ঘ চল্লিশ বছর সময়কালে বিশ্বস্ততা অর্জন করেছিলেন এবং তারপর তিনি সংবাদ পরিবেশন করেছিলেন। তার পরিবেশিত খবরের সত্যতা তার শত্রুরা ও অকপটে স্বীকার করেছে, আর তিনি এতটাই বিশ্বস্ততা অর্জন করেছিলেন যে, সাহাবায়ে কেরাম শুধু জানতে চাইতেন রসুল (সা.) কী বলছেন? কেন বলেছেন এ প্রশ্ন উত্থাপন করার প্রয়োজন ও তাঁরা বোধ করেননি। রসুল (সা.)-এর মাধ্যমে জগৎ জানতে পারে সংবাদ পরিবেশনার মূল সূত্র। ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুমিনগণ’ যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। এ আয়াতের মাঝে নিহিত রয়েছে সাংবাদিকতার মূল সূত্র। সংবাদ হতে হবে যথাযথ, না বেশি, না কম; চটকদারি এবং অতিরঞ্জন ও পরিহার করতে হবে এবং সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে যাতে ব্যক্তি বা সমাজের ক্ষতিসাধন না হয়।

সংবাদের সততা যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপারে রসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মানুষের মিথ্যা বলার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা-ই বলে। সাংবাদিকতার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও উদঘাটিত সত্য অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে আপ্রান প্রয়াস চালাবে। ‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও অন্যকে পৌঁছে দাও।’ বিদায় হজের ভাষণে প্রদত্ত রসুল (সা.) তাঁর বাণী তাই প্রমাণ করে। যদি সাংবাদিকতায় এ গুণাবলি বিদ্যমান থাকে তবে ওই সাংবাদিকতা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে।

সাংবাদিকতায় মানুষের মঙ্গল এবং সত্য উদঘাটনের পেছনে ছুটে চলার ক্ষেত্রে কোরআনে উল্লেখিত হজরত সোলায়মান (আ.)-এর হুদহুদ পাখির ঘটনাটি স্মরণযোগ্য। মহারানি বিলকিসের অনুসারী একদল মানুষ আল্লাহকে অস্বীকার করে অগ্নিপূজায় লিপ্ত এবং তারা বিপদগামী, এ খবর সংগ্রহের পেছনে ছুটতে গিয়ে সে তার পরিচিত অঙ্গনের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং সত্য সংবাদ উদঘাটন করে এনেছি। কিন্তু তার বিনা নোটিশে এই নিরুদ্ধেশ হওয়াতে সোলায়মান (আ.) রাগান্বিত হয়েছিলেন এবং তাকে শাস্তি দিতে মনস্থ করেছিলেন। তবে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলেন। হুদহুদ তার অনুপস্থিতির যথোপযুক্ত কারণ দর্শালে সোলায়মান (আ.)-এর রাগ প্রশমিত হয়। এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, প্রথমত যে সাংবাদিক নিরন্তর সত্যের পেছনে ছুটে চলেছেন তার নিরাপত্তার বিধান করা তাকে নিয়োগ দানকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে বর্তায়। তার কাজের কৈফিয়ত তলব করা যাবে, তবে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। নিয়োগ প্রাপ্ত সাংবাদিকদের পারিশ্রমিক যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা অভিযোগ উত্থাপন করবেন। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি সে, যে শ্রমিককে খাঁটিয়ে ও তার দ্বারা পূর্ণ কাজ আদায় করেছে, কিন্তু তার পারিশ্রমিক দেয়নি। এ সম্পর্কে শুধু পরকালীন শাস্তির ভয় দেখিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি। কাজ আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকের পাওনা আদায় করার আদেশ দিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগে তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দাও। (ইবনে মাজা শরিফ)

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

লেখক : কলামিস্ট ও সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads