• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সফর অবস্থায় মুসাফিরের নামাজ

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

সফর অবস্থায় মুসাফিরের নামাজ

  • প্রকাশিত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

সহজ-সরল ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন দর্শন হলো ইসলাম। জীবন চলার পথে কোন কাজে মানুষের কল্যাণ, কোন কাজে অকল্যাণ তার সুন্দর রূপরেখা প্রণয়ন করেছে ইসলাম। মানুষের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ রেখেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় বান্দাদের সফর অবস্থায় কসরের সহজ বিধান দিয়েছেন। কসর আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো সংক্ষেপ করা বা কমানো। কোনো ব্যক্তি যদি ৪৮ মাইল বা তারও বেশি দূরত্বের সফরে বাড়ি থেকে বের হয়, তাহলে সে মুসাফির। আর সে যদি সেখানে ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করে তবে সে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজকে কসর (সংক্ষিপ্ত) করে দুই রাকাত পড়বে। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সফর অবস্থায় নামাজকে কসর কর, এর মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম প্রতিদান (বায়হাকী)।

মুসলিম মিল্লাতের জন্য নামাজে কসর করা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিরাট নিয়ামত। মহান আল্লাহতায়ালা এই সংক্ষেপ করার মধ্যেই রেখেছেন অধিক কল্যাণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে তখন যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, কাফেররা তোমাদের জন্য ফিৎনা সৃষ্টি করবে, তবে নামাজে কসর করলে তোমাদের কোনো দোষ নেই। নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (সুরা নিসা, আয়াত-১০১)। আলোচ্য আয়াতে সফরে থাকাকালীন নামাজ কসর করার (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজগুলো দুই রাকাত করে পড়ার) অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কসর শুধু চার রাকাতের ফরজ সালাতের বেলায় হবে। মাগরিব ও ফজরের সালাতে কোনো কসর নেই।

পূর্ণ সালাতের স্থলে অর্ধেক সালাত আদায় করার ক্ষেত্রে কারো মনে এ ধরনের ধারণা আনাগোনা করতে পারে যে, বোধহয় এতে সালাত পূর্ণ হলো না, এটা ঠিক নয়। কারণ কসরও শরিয়তেরই নির্দেশ। এ নির্দেশ পালনে গুনাহ হয় না; বরং সওয়াব পাওয়া যায়। ইমামে আযম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, সফরে চার রাকাত নামাজকে দুই রাকাতই পড়তে হবে। কেননা আল্লাহতায়ালা এ দুই রাকাতের বিনিময়েই চার রাকাতের সওয়াব দেবেন। তাই সফরে কসর না পড়ে পূর্ণ নামাজ পড়া যাবে না। ইয়া’লা ইবন উমাইয়্যা বলেন, আমি ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা)-কে সুরা নিসার ১০১ নাম্বার আয়াতে বর্ণিত ‘যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, কাফেররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে’ এটা উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করলাম যে, এখন তো মানুষ নিরাপদ হয়েছে, তারপরও সালাতের কসর পড়ার কারণ কী? তখন ওমর (রা) বললেন, তুমি যেটাতে আশ্চর্য হয়েছ, আমিও সেটাতে আশ্চর্যবোধ করে রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘এটি একটি সদকা যেটি আল্লাহ তোমাদের ওপর সদকা করেছেন, সুতরাং তোমরা আল্লাহর সদকা গ্রহণ কর’ (মুসলিম : ৬৮৬, তাফসিরে ফাতহুল মাজিদ)। এমনকি মানবতার মহান শিক্ষক হজরত মোহাম্মদ (সা.) নিজেও সফর অবস্থায় নামাজে কসর করতেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে মদিনা থেকে মক্কাভিমুখে রওনা হয়েছিলাম। তিনি চার রাকাত ফরজ নামাজ দুই রাকাত আদায় করলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা মদিনায় ফিরে এলাম। এ সময় হজরত আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনারা কি সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন, আমরা সেখানে ১০ দিন অবস্থান করেছিলাম (বুখারি)।

মানুষ আল্লাহতায়ালার প্রিয় সৃষ্টি। আল্লাহতায়ালার নির্দেশের প্রতি অনুগত থাকাই তার একান্ত কর্তব্য। সেহেতু মানুষের তথা মুসলিম জাতির দায়িত্ব হলো যেখানে যে অবস্থাতেই সে থাকুক না কেন, আল্লাহতায়ালার এবাদতে মগ্ন থাকা। আর মুসাফির সফরে অনেক সমস্যায় থাকেন, যে কারণে ইসলাম নামাজের মতো এত বড় ইবাদতেও কসরের বিধান প্রদান করেছে। মুসাফির সফর অবস্থায় কীভাবে নামাজ আদায় করবে তার পদ্ধতি হলো : ১. মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ পড়েন, তাহলে ইমামের অনুসরণে তিনিও চার রাকাত পড়বেন। ২. মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেবেন। তবে ব্যস্ততা না থাকলে সুন্নত পড়া উত্তম। ৩. দুই রাকাত বা তিন রাকাত বিশিষ্ট  ফরজ নামাজ এবং ওয়াজিব নামাজ যথাযথভাবে সম্পূর্ণ আদায় করতে হবে। ৪. কোনো স্থানে যদি ১৫ দিন বা তার থেকে বেশি দিন থাকার নিয়ত ছিল না, এর আগেই চলে যাবে কিন্তু যাবে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না, এভাবে ১৫ দিন বা তার বেশিদিন থাকলেও কসর পড়বেন। কিন্তু কেউ যদি অসৎ উদ্দেশ্যে মুসাফির সাজে, শরিয়তের সৃষ্টিতে তিনি মুসাফির হিসেবে পরিগণিত হবেন না এবং তার জন্য কসরের হুকুমও প্রযোজ্য হবে না। ৫. মুসাফির ব্যক্তি ইমামতি করলে মুক্তাদিদের আগেই বলে দিতে হবে যে, সে মুসাফির এবং সে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরাবে এবং মুকিম নামাজিরা দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত পড়ে নেবেন। ৬. সফর অবস্থায় মুসাফির ব্যক্তির যদি কোনো নামাজ কাজা হয়ে যায়, আর তা বাড়ি গিয়ে পড়েন তাহলে কসরই পড়বেন এবং বাড়ি থাকা অবস্থায় কোনো কাজা নামাজ যদি সফরে আদায় করেন তবে তা পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে। এবং প্রত্যেক কাজা নামাজের নিয়ত করতে হবে যে, তিনি কোন ওয়াক্তের কসর পড়বেন।

 

জহিরুল ইসলাম আবদুল্লাহ

লেখক : কামিল (হাদিস), তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, টঙ্গী, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads