• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
সালাত কায়েমের উপায়

ছবি : সংগৃহীত

ধর্ম

সালাত কায়েমের উপায়

  • সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০১৯

ঈমানের সঙ্গে শরিয়ত নির্ধারিত নির্দিষ্ট ওয়াক্ত ও নির্দিষ্ট নিয়মে পবিত্র অবস্থায় ও পবিত্র স্থানে মহান রাব্বুল আলামিনকে হাজির-নাজির, ইবাদত ও সওয়াবের উদ্দেশ্যে অতি আদবের সঙ্গে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে মওলার মহিমা, প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করা— আন্তরিকতার সঙ্গে মৌখিক ও দৈহিক কার্যের মাধ্যমে মহান আল্ল­াহপাকের শ্রেষ্ঠত্ব এবং নিজের হীনতা ও দীনতা প্রকাশের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার পাশাপাশি মহান রাব্বুল আলামিনের হুকুম পালন করাটাই সালাত বা নামাজ।

যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ইসলাম কায়েম হয়েছে— সালাম তার দ্বিতীয়। পবিত্র কোরআন শরিফে মহান আল্ল­াহপাক প্রকাশ্যে ৮২ স্থানে ও ইশারায় শত শত স্থানে সালাত কায়েম করার জন্য হুকুম করেছেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘ইবাদতগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম সালাতেরই হিসাব গ্রহণ করা হবে।’ স্বীয় রবের সঙ্গে অতিগোপনে কথা বলার নামই সালাত। আর রবের সঙ্গে কোনক্রমেই অমনোযোগিতার সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে না। বিশদভাবে বলা চলে— আল্ল­াহর স্মরণ, কিরাত, মোনাজাত ও আল্লাহর সঙ্গে কথা বলাটাই সালাত। প্রকাশ্যে সেজদাহ দিলাম কিন্তু মনটা বিভোর হয়ে আছে বাতেল, দুনিয়া কিংবা দুষ্টুমিতে— তাতে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যথার্থ লাভবান হতে হলে পরিপূর্ণ একাগ্রচিত্তে সালাত আদায় করতে হবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘সালাতসমূহ এক সালাত থেকে অন্য সালাতের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোর জন্য কাফফারাস্বরূপ, তবে শর্ত এই যে কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।’ প্রকৃতপক্ষে সালাত আল্লাহপাকের অতিপ্রিয় ইবাদত ওসব বন্দেগি থেকে শ্রেষ্ঠ বন্দেগি এবং সুনিশ্চিত ফরজ।

আমাদের অধিকাংশের ধারণা হলো, নামাজ বা সালাত পড়তে হয় বা পড়ি। আসলে নামাজ পড়ার জন্য পাক কোরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। সালাত কায়েম করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর যখনই আমরা সালাত কায়েম করতে যাব বা সচেষ্ট হব, তখনই কিছু প্রধান শর্ত পালনে বাধ্য। অর্থাৎ সালাতের সব হক আদায়পূর্বক নামাজ পড়তে হবে। (পড়া কায়েমের অংশবিশেষ এ প্রকৃত সত্যটি আমাদের প্রত্যেককে বুঝতে হবে।) যথা— পূর্ণরূপে পবিত্রতা (প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য) অর্জন করতে হবে। নিয়মিত আত্মশুদ্ধির জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। যাবতীয় নিয়ম জেনে মাসায়িলসহ সুন্নাত তরিকানুযায়ী নামাজ পড়তে হবে। ওয়াজের পাবন্দি করতে হবে (কারণ— বিনা কারণে এক ওয়াক্তের নামাজ অন্য ওয়াক্তে আদায় করলে ২ কোটি ৮৮ লাখ বছর জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে বলে প্রকাশ)। নিজে পড়ার পাশাপাশি অন্যদের সাধ্যানুযায়ী ডাকতে হবে। ইসলামি পন্থা তথা যাবতীয় শরিয়তী পন্থা অতিসতর্কতার সঙ্গে মেনে চলতে হবে। ঈমান ও ইসলামের অন্যান্য কাজে যথার্থতা রক্ষায় ঐকান্তিকভাবে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা নামাজ পড়ি সত্য, কিন্তু অসৎ কার্য ও অশ্লীলতা ত্যাগ করতে পারি না। এই ত্যাগে ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে— আমরা যে নামাজ পড়ি তা দুর্বল ও অঙ্গহীন। অঙ্গহীনতা ও দুর্বলতার কারণে নামাজিকে অন্যায় থেকে রক্ষা করতে পারে না। আমরা নামাজ সঠিক বা যথার্থভাবে আদায় করি না বা করার জন্য সচেষ্টও হই না। অজু বিনা যেমন নামাজ হয় না, ঠিক তেমনি নামাজের ভেতর পঠিত কিরাত শুদ্ধ না হলে নামাজ শুদ্ধ হয় না। শুদ্ধ নামাজ ছাড়া মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে অন্য কিছু কবুল হতে পারে না। আর কবুল হয় না বলেই আদায়কারী ব্যক্তিকে নামাজ অন্যায় হতে বিরত রাখে না। ‘সময় হয় না’ অজুহাতে আমরা অনেকেই নামাজ থেকে দূরে সরে রই। এটা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য যুক্তি নয়। বাদশাহী করেও হজরত  দাউদ ও সোলায়মান (আ.) প্রতি ওয়াক্তে নামাজ আদায় করেছেন। পীড়িত হওয়া সত্ত্বেও হজরত আইয়ুব (আ.) নামাজ ত্যাগ করেননি। সন্তান লালন-পালনের জন্য নানা উপায়ে ব্যস্ত থাকার অবান্তর যুক্তি উপস্থাপনকারীদের জন্য হজরত  ইয়াকুব (আ.)-এর দৃষ্টান্ত অনুসরণযোগ্য।

হকিকতে সালাতের ফয়েজ প্রকাশ পাওয়ার একমাত্র উপায়- নামাজের ফরজ, ওয়াজেব, সুন্নাত ও মোস্তাহাবগুলো যথার্থভাবে সম্পন্ন করা। আর এই প্রক্রিয়াকেই হুজুরি কালবের নামাজ বলা হয়। এ পর্যায়ে নামাজে দাঁড়ানোর পর নামাজির দুনিয়ার খেয়াল থাকতে পারে না। যে নামাজির নামাজ শুধু দৈহিকভাবে সম্পাদিত কিন্তু অন্তর পৃথক কার্যে লিপ্ত থাকে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সে নামাজের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে কি দোষের কিছু? অবশ্যই না। নামাজে দাঁড়ানো পর ভ্রূ যুগলের মধ্যে কাবা শরিফ পদদ্বয়ের মধ্যে পুলসিরাত, ডান দিকে জান্নাত, বাম দিকে জাহান্নাম এবং আজরাইল (আ.)-কে পেছন দিক ভেবে জীবনের শেষ নামাজ মনে করলেই অনেকটা উপকার পেতে পারি। এছাড়া চোখের চিত্ত-চাঞ্চল্য থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নামাজে দাঁড়িয়ে সেজদার স্থানে, রুকুকালে পদদ্বয়ের দিকে, সেজদাকালে নাসিকাদ্বয়ের দিকে, উপবেশনকালে কোলের দিকে ও সালামকালে দুই স্কন্ধের দিকে দৃঢ়রূপে দৃষ্টিপাত করলে মনের স্থিরতা লাভ সম্ভব। এত সূক্ষ্ম পদ্ধতি অবলম্বনেও যদি মনে একাগ্রতা না আসে, তবে আজান দেওয়াকে কিয়ামতে ইস্রাফিল (আ.)-এর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া, আজান শুনে মসজিদপানে ছুটে চলা মানে কিয়ামতে কবরস্থান ভেদ করে হাশরের মাঠপানে চলা, জামাতে কাতারবদ্ধ হওয়া মানে হাশরের মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো, নাভির নিচে হাত রেখে দাঁড়ানো মানে হাশরের মাঠে সর্বশক্তিমান আল্ল­াহপাকের সামনে হিসাব প্রদানের জন্য বিনীতভাবে দাঁড়ানো, রুকু করা মানে হিসাব দিতে অপারগ হয়ে শির নত করা। সেজদাহ মানে হিসাব প্রদানে অক্ষম হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে ভূপতিত হওয়া, ডান দিকে সালাম দেওয়া মানে হাশরের মাঠে নবী করিম (সা.) ও অলি-আল্ল­াহগণের কাছে সুপারিশ প্রার্থী হয়ে সালাম দেওয়া, বামে দিকে সালাম দেওয়া মানে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে সওয়াল প্রাপ্তির আশায় সালাম দেওয়া এবং মোনাজাতকালে হাতদ্বয় উত্তোলন মানে পরম করুণাময়ের কাছে ক্ষমাভিক্ষা করা বোঝাতে পারি। হে প্রিয় মুসলমান ভাই-বোনেরা, আসুন— আমরা প্রত্যেকে সালাতি হই। অন্তিম বিচার দিবসে নাজাতের পথ সুগম করি। পরম  করুণাময় আল্ল­াহ রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রত্যেককে সত্য পথের পথিক হওয়ার তওফিক দান করুন।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads