• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
স্ত্রী তার স্বামীর জন্য প্রকৃত অর্ধাঙ্গিনী হবেন

স্ত্রী তার স্বামীর জন্য প্রকৃত অর্ধাঙ্গিনী হবেন

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

স্ত্রী তার স্বামীর জন্য প্রকৃত অর্ধাঙ্গিনী হবেন

  • ইকবাল ওয়াসী
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০১৯

দাম্পত্য জীবন মানুষের একটি সোনালি সময়। এ জীবনে সুখী হতে প্রয়োজন দ্বীনদার, সচ্চরিত্রবান, পর্দানশীল, সতী, নম্র মেজাজ ও কোমল মনের অধিকারী নারী বিয়ে করা। লোভী, অহংকারী, স্বার্থপর, কর্কশভাষী, বেহায়া নারী দিয়ে সুখের দাম্পত্য স্বপ্ন দেখা ভুল ছাড়া কিছুই নয়। নমুনাস্বরূপ একটি ঘটনা বলতে হচ্ছে। হজরত ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.)-এর মৃত্যুর পর তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে তাঁর ভাই বলেছিলেন, তুমি যদি চাও, তবে তোমার অলঙ্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। উত্তরে ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.)-এর স্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি যখন আমার স্বামী জীবিত থাকতে অলঙ্কার চাইনি বা তাতে সন্তুষ্ট হইনি, এখন স্বামী মৃত, তাই এ তুচ্ছ স্বর্ণ-অলঙ্কার দিয়ে আমি কী করব? এখন আমার প্রয়োজন মরহুম স্বামীর মাগফিরাত ও পরকালীন শান্তি কামনা করা।’ তাই স্বামীর জীবিত অবস্থায় স্ত্রী যদি স্বামীর পাশে সান্ত্বনার ছায়া না দেয় এবং তিরস্কার ও গালমন্দ করে, তাহলে অসহায় স্বামীর মানসিক চাপ আরো বাড়তে থাকবে। এমনকি মানসিক অবস্থা হারিয়ে, জ্ঞান হারিয়ে, স্মৃতিশক্তি হারিয়ে পাগল হয়ে যেতে পারে। তাতে স্বামীর ইহকাল ও পরকাল নষ্টের দায়ী বলা যাবে স্ত্রীকে। স্বামী যদি বিভিন্ন কাজে চিন্তিত হয়ে পড়ে, তাহলে স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীকে চিন্তামুক্ত করা। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বিশ্বনবী (সা.) প্রথম অহিপ্রাপ্ত হওয়ার সময়। ‘নবী করিম (সা.) ভীত হয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরে খাদিজাকে (রা.) বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দাও, আমাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দাও। তখন সবাই তাঁকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভীতি দূর হলে খাদিজা (রা.)-কে ডেকে বললেন, আমার কী হলো? আমি আমার নিজের সম্পর্কে ভীত হয়ে পড়ছি। তারপর তিনি খাদিজাকে (রা.) সব ঘটনা খুলে বলেন। সবকিছু শুনে খাদিজা (রা.) বললেন, আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই। আপনি বরং শুভ সংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। কারণ আপনি তো আত্মীয়তার হক্ব আদায় করেন। সর্বদা সত্য কথা বলেন। অসহায়দের কষ্টভার লাঘব করেন। অভাবীদের অর্থ উপার্জন দেন, মেহমানদারী করেন এবং ন্যায় কাজে সাহায্য করেন।’ (সহিহ বুখারি : ৪৫৯৫)

সতী স্ত্রী বিপদের সময় স্বামীকে সান্ত্বনা দেয়, ‘হে স্বামী! আপনি আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা রাখুন। কেননা আল্লাহতায়ালা বিশ্বাসকারীদের ভালোবাসেন। যে আল্লাহতায়ালার ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে, আল্লাহ সব সঙ্কীর্ণতায় তার জন্য রাস্তা খুলে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেন, যা তার ধারণার বাইরে। যে আল্লাহতায়ালার ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। সুতরাং হে স্বামী! আপনি আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন, দেখবেন সব ব্যবস্থা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’

যদি কারো ভাগ্যে সতী-সাধ্বী স্ত্রী মেলে, তাহলে সেই স্বামীর যত বালামুসিবত আসুক না কেন, সাহস ও মনের শক্তি দিয়ে কঠিন কাজ তার জন্য নিমিষেই সহজ হয়ে যাবে। তখনই সব চিন্তা ও পেরেশানির মধ্যে স্থির থাকতে পারবে স্বামী। সে জন্য সতী নারী হতে প্রয়োজন ইসলামী শিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে শরয়ী পর্দার পরিবেশ কায়েম করা। তাই দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে সতী ও পর্দানশীল নারীর গুণ অতুলনীয়। আর আল্লাহ না করুন, যদি কারো ভাগ্যে কুটনি, ডাইনি স্ত্রী দাম্পত্য জীবনে জোটে, তাহলে সুখের পরিবর্তে দুঃখের জীবন কাটাতে হয়। স্ত্রীর স্বার্থ ফুরালে কেটে পড়ে; তাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়-

‘নারী ওরা অতি লোভী মন,

এক পেয়ে সুখী নয়,

এক পেয়ে তৃপ্ত নয়,

যাচে বহুজন।’

যতক্ষণ স্বামীর মান-সম্মান, ইজ্জত, টাকা-পয়সা থাকে, সে ডাইনি স্ত্রী ততক্ষণ স্বামীর একান্ত আপন হয়ে থাকে; স্বামীকে ভালোবাসে, মহব্বত করে। স্বামীর যখন সব ফুরিয়ে যায়, তখন সে অন্যের হাত ধরে দূরে পালিয়ে যায়; স্বামীর অর্থ-সম্পদ, টাকা পয়সা সব চুষে খায়, অথচ স্বামীর জন্য একটুও সুখ-শান্তির চিন্তা করে না। এসব নারীর দুনিয়া ও পরকালে ঠাঁই পাবে না। যে স্ত্রীর ওপর স্বামী অসন্তুষ্ট, সে স্ত্রীর ওপর আল্লাহ ও তাঁর রসুল হজরত মোহাম্মদ (সা.) অভিশাপ করেছেন। এসব দজ্জালমার্কা নারী থেকে আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমীন!

 

লেখক : আলেম ও শিক্ষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads