• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

মাজহাবের গুরুত্ব

  • এস. আর. শশী
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০১৯

মাজহাব মানে মতামত, বিশ্বাস, ধর্ম, আদর্শ, পন্থা। মাজহাব শব্দের অনেক অর্থ আছে। তার একটি হলো মতামত। মুজতাহিদ কোরআন ও সুন্নাহ থেকে যে সব আহকাম ও বিধান আহরণ করেন, সেগুলোই হলো মাজহাব। মাজহাব সম্পর্কে বোঝার জন্য কিছু শব্দের সঙ্গে পরিচিত থাকা চাই। যেমন- ইজতিহাদ, মুজতাহিদ, তাকলিদ ও মুকাল্লিদ। এখানে সংক্ষেপে এগুলোর পরিচয় তুলে ধরা হলো—

ইজতিহাদ : ইজতিহাদের শাব্দিক অর্থ, উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করা। ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় ইজতিহাদ অর্থ, কোরআন ও সুন্নায় যে সব আহকাম ও বিধান প্রচ্ছন্ন রয়েছে সেগুলো চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে আহরণ করা।

মুজতাহিদ : যিনি ইজতিহাদ করেন তিনি হলেন মুজতাহিদ।

তাকলিদ : যাদের কোরআন ও সুন্নাহ থেকে চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে আহকাম ও বিধান আহরণের যোগ্যতা নেই তাদের কাজ হলো মুজতাহিদের আহরিত আহকাম অনুসরণের মাধ্যমে শরীয়তের ওপর আমল করা। আর এই অনুসরণই তাকলিদ।

মুকাল্লিদ : যারা তাকলিদ করেন তারা মুকাল্লিদ।

প্রকৃতপক্ষে মাজহাব মানার অর্থ হচ্ছে কোরআন ও হাদিস মানা। রসুল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগেও মাজহাব ছিল। তাছাড়া প্রত্যেক সাহাবায়ে কেরামই ছিলেন এক একজন মুজতাহিদ। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম মাসলা-মাসায়েলসহ যে কোনো সমস্যায় পড়লে রসুল (সা.)-এর কাছে যেতেন এবং সে ব্যাপারে রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করতেন। রসুল (সা.) নিজেই হাদিসের মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান দিতেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে এলমদের কাছে জিজ্ঞাসা কর’ (সুরা আল আম্বিয়া : ৭)। এ আয়াতে বলা হচ্ছে, অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকদের অনুসরণ করার জন্য। আর অজানা বিষয়ে বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নামই হলো তাকলিদ। সুতরাং তাকলিদ কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। আল্লামা ফাখরুদ্দিন ও আল্লামা আলুসি উক্ত আয়াতের তাফসিরে লিখেন, ‘এ আয়াতের ভিত্তিতে অনেকেই মুজতাহিদ ইমামগণের তাকলিদ বৈধ এবং অনভিজ্ঞ সবাইকে বিজ্ঞ মুজতাহিদের শরণাপন্ন হওয়া ওয়াজিব বলেন’ (তাফসিরে কবির : ১৯/১৯, রুহুল মায়ানি : ১৪/১৪৮, মাজহারি : ৫/৩৪২, লুবাব : ১২/৬১, কুরতুবি : ১০/৭২)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘যে আমার অভিমুখী হয়েছে, তুমি তার পথ অনুসরণ কর।’ (আল লোকমান : ১৫) এ আয়াতে মূলত আবু বকর (রা.) মতান্তরে সাদ ইবনে ওয়াককাসের ব্যাপারে মন্তব্য করা হলেও কোনো কোনো তাফসিরকারক বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হলো ধর্মানুরাগী মুসলমান।

মাজহাবের মধ্যে প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ মাজহাব হলো চারটি। দুনিয়াজুড়ে প্রসিদ্ধ চার মাজহাবের অনুসারীদের অস্তিত্বই বেশি পাওয়া যায়। এগুলো হলো— ১.  ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর হানাফি মাজহাব। ২. ইমাম মালিক (রহ.)-এর মালেকী মাজহাব। ৩. ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর শাফেয়ী মাজহাব। ৪. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর হাম্বলী মাজহাব। কোরআন-হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই, এমনসব মাসআলা-মাসায়িলগুলোকে মূল উসুলের ভিত্তিতে কোরআন ও সুন্নাহ থেকে চুলচেরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন মাজহাবের ইমাম তথা মুজতাহিদগণ। যেহেতু এই চারটি মাজহাবই কোরআন এবং হাদিস থেকে উৎপত্তি হয়েছে, তাই চারটিকেই সঠিক ও হক মনে করতে হবে। চার মাজহাবের যে কোনো একটিকে অনুসরণ করলেই মাজহাব মানা হয়ে যাবে। সর্বশেষ বলা যায়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাজহাব অস্বীকার করা মানে কোরআন-হাদিসকেই অস্বীকার করা।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads