• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ঈমানদাররা ওয়াদা রক্ষা করেন

  • হাদিউল ফরহাদ
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০১৯

ওয়াদা আরবি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা কিংবা কথা দিয়ে কথা রাখা। সাধারণ দৃষ্টিতে যে কোনো ধরনের কথা দিয়ে কথা রাখাকে ওয়াদা পালন করা বলা হয়। ধর্মের আলোকে সুন্দর জীবন পরিচালনা করতে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াদা রক্ষার বিষয়টি সামাজিক জীবনেও অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। রসুল (সা.) সব সময় ওয়াদা রক্ষা করতেন।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের বেশ কয়েকটি আয়াতে ওয়াদা পূরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো। নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৪)। ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা ওয়াদাগুলো পূরণ কর’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ১)। এ বিষয়ে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ওয়াদা রক্ষা করে না; দ্বীন ইসলামে তার কোনো অংশ নেই।’

জীবনযাপনের প্রতি ক্ষণে ক্ষণে ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি এবং বিভিন্ন ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হই আমরা। একে খাটো করে কিংবা কোনো ধরনের তাচ্ছিল্যের চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিশ্রুতি পালন করা মানুষের জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। ইহজগতে যারাই স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন, সবাই এই গুণটি সঠিকভাবে পালন করেছেন। ইসলাম মহৎ এই গুণটিকে আখলাকে হামিদা বা উত্তম চরিত্রের অন্যতম গুণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সংসার জীবনে কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে ওয়াদা পালনই সবচেয়ে কঠিন। এক্ষেত্রে আমাদের অনেক সময় কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় প্রিয়জন, প্রিয়তম বস্তুকেও উৎসর্গ করতে হয়।

মানুষের পারস্পরিক ওয়াদা-অঙ্গীকার বা চুক্তি হতে পারে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির, ব্যক্তির সঙ্গে সমষ্টির বা সমষ্টির সঙ্গে সমষ্টির। একাধিক ব্যক্তি সম্মিলিত হয়ে যদি কোনো অঙ্গীকার বা চুক্তি করে, তাহলে প্রত্যেকেই চুক্তি বাস্তবায়নে দায়বদ্ধ থাকবে। চুক্তির অপর পক্ষ তাদের যে কোনো ব্যক্তির কাছেই চুক্তিবদ্ধ অধিকার দাবি করতে পারবে এবং সে তা পূরণে বাধ্য থাকবে। হজরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান! তোমরা সবাই দায়িত্বশীল, আর সবাইকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। ওয়াদা ভঙ্গ করা বা চুক্তিবিরোধী কাজ করা ঈমানের পরিপন্থী, যাকে রসুলুল্লাহ (সা.) মুনাফেকির আলামত বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তির মধ্যে চারটি গুণ একত্রে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক আর যার মধ্যে চারটির কোনো একটি পাওয়া যাবে, সেও মুনাফিক হিসেবে গণ্য হবে যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে। গুণ চারটি হলো— ১. তার কাছে কোনো আমানত রাখা হলে সে তার খিয়ানত করে। ২. সে কথা বললে মিথ্যা কথা বলে। ৩. সে অঙ্গীকার করলে তা ভঙ্গ করে। ৪. সে কারো সঙ্গে বিরোধ হলে অশ্লীলতার আশ্রয় নেয়’ (বুখারি ও মুসলিম)।

একজন ঈমানদারের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের অন্যতম হলো ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। ওয়াদা রক্ষা করা ঈমানের দাবি। মুমিন কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করে না। মুমিন ব্যক্তি ওয়াদা করলে অবশ্যই তা পূরণ করে। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত ওয়াদা রক্ষায় আন্তরিক হওয়া।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads