• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
মাল গুদামজাত করার ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

গুদামজাত

সংরক্ষিত ছবি

ধর্ম

মাল গুদামজাত করার ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

  • এসএম আরিফুল কাদের
  • প্রকাশিত ১২ এপ্রিল ২০১৯

মহান আল্লাহতায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন। আর তিনি আমাদের উত্তম পন্থায় ব্যবসা পরিচালনা করার পদ্ধতি জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি ব্যবসার নেতিবাচক ও ক্ষতিকর বিষয়গুলো থেকে সতর্ক করেছেন এবং এ-জাতীয় বিষয় নিষিদ্ধ করেছেন। তার মধ্যে মাল গুদামজাত করা একটি।

একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী ইসলামী হুকুম অমান্য করে মালপত্র গুজামজাত করে। সরকার যখন অল্প মূল্য নির্ধারণ করে দেন, তখন তারা সবাই একজোট হয়ে বেশি লাভের আশায় দ্রব্যগুলো গুদামজাত করে। যার কারণে হঠাৎ দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হয়ে যায়, ক্রয়মূল্য মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যায়। ফলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। এটা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। তাই রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে, সে পাপিষ্ঠ।’ (মুসলিম ও মিশকাত) নবী করিম (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি দামের আশায় মাল জমা রাখে সে গুনাহগার।’ (মুসলিম, আবু দাউদ)

এমনকি ইসলামের দৃষ্টিতে সরকারিভাবে মালের দাম নির্ধারণের প্রয়োজন পড়ে না। বরং মালকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। ‘হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.)-এর যুগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে সাহাবিগণ (রা.) আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.)! আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। তখন নবী করিম (সা.) বললেন, আল্লাহ হলেন মূল্য নির্ধারক। তিনিই সঙ্কীর্ণতা ও প্রশস্ততা আনয়নকারী এবং তিনিই রিজিক দানকারী। আমি আশা করি, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যেন জীবন বা সম্পদের ব্যাপারে আমার ওপর জুলুমের দাবি করতে না পারে।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি)

মাল গুদামজাত করায় জনগণ সঠিক মূল্যে দ্রব্য পায় না অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য। তারা সিন্ডিকেট করে সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করে। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে পরকালীন শাস্তি। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে রাখবে, সে তার মাল দান করে দিলেও তার গুনাহ ক্ষমার জন্য যথেষ্ট হবে না।’ (রাজিন) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমদানিকারক মুনাফা অর্জন করবে। পক্ষান্তরে গুদামজাতকারী অভিশপ্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে।’ (ইবনে মাজাহ ও দারেমি)

এমনকি দুনিয়ায়ও রয়েছে কঠিন রোগ-শোক, বালা-মুসিবত। ‘হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলমানদের খাদ্য গুদামজাত করবে, আল্লাহ তাকে দারিদ্র্যে ও কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত করবেন।’ (ইবনে মাজাহ ও বায়হাকি)

খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করা কঠোর নিষিদ্ধ হওয়ায় ইমাম নববীসহ অন্যান্য আলেমদের মতানুযায়ী যেসব কারণে মাল গুদামজাত করা নিষিদ্ধ-

১.   স্বল্পমূল্য চলাকালীন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে বেশি লাভের আশায় এমনভাবে গুদামজাত করা যে, বাজারে তার প্রতিক্রিয়া পড়ে। এ ব্যাপারে তার ক্ষতিরও ঝুঁকি রয়েছে।

২.   কোনো দ্রব্য এমন পরিমাণে গুদামজাত করা, যে কারণে ক্রেতাসাধারণ সেই পণ্যের চরম সঙ্কটের সম্মুখীন হয়।

৩.   মানুষের খাদ্যদ্রব্য সঙ্কট অবস্থায় যে কোনো পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করা।

৪.   বাজারে কৃত্রিম খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টির জন্য গুদামজাত করা।

 

উল্লিখিত অবস্থাগুলোতে মাল গুদামজাত করা নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ। সর্বোপরি জনসাধারণকে ভোগান্তিতে ফেলতে গুদামজাত করা ইসলাম ঘৃণিত কাজ বলে ঘোষণা দিয়েছে। কেননা ব্যবসায়ীদের স্বার্থের জন্য গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষ কষ্টে পতিত হয়। যার কারণে তাদের দুঃখজনিত হূদয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদে বয়ে আনতে পারে সমাজে বা রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষসহ নানান কঠিন সমস্যা। তাই সরকার বা প্রশাসনসহ সর্বসাধারণকে এ ব্যাপারে লক্ষ রাখা উচিত।

 

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads