• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা

  • প্রকাশিত ০৩ মার্চ ২০২১

ইসলামই শুধু ইসলামের তুলনা। তা ইসলাম নাম থেকেই বুঝা যায়। ইসলাম কোনো ব্যক্তিবিশেষের আবিষ্কার নয়। কোনো জাতির নামানুসারেও এ মতাদর্শের নাম হয়নি। ইসলাম নামটি আল্লাহরাব্বুল আলামীন প্রদত্ত। ইসলাম নামটিই অনেক গুরুত্ব বহন করে। ইসলামে স্বাধীনতার গুরুত্ব অনেক বেশি। ইসলাম তার ঊষালগ্নেই স্বাধীনতার মূলনীতি ঘোষণা করেছে। আমীরুল মুমিনিন হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর সেই বিখ্যাত উক্তিটি আমরা স্মরণ করতে পারি, যেখানে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘পৃথিবীর বুকে তুমি মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করেছ, অথচ তার মা তাকে স্বাধীন মানুষ রূপেই জন্ম দিয়েছেন।’ চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) একবার কিছু লোককে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহই যখন তোমাকে স্বাধীন মানুষ করে সৃষ্টি করেছেন, তখন কোনো মানুষ কখনো তোমাকে দাস বানাতে পারে না।’

আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন করেই সৃষ্টি করেছেন এবং এই স্বাধীনতা নিয়েই মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং তার জন্মগত অধিকার হচ্ছে কেউ তাকে তার এই স্বাধীনতা ভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না এবং জোর-জবরদস্তি তাকে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি করবে না। ইসলাম যখন স্বাধীনতাকে তার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করে তখন সময়টি ছিল এমন যে, অধিকাংশ মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনীতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিকভাবে আক্ষরিক অর্থেই ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল।

মানুষের এই বহুরূপ দাসত্ব-শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে ইসলাম স্বাধীনতা ঘোষণা করল। বিশ্বাসের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা এবং সমালোচনার স্বাধীনতা সব ক্ষেত্রেই ইসলাম এই স্বাধীনতা দিয়েছে। আর চিরকাল ধরে এসব বিষয়েই মানুষ তাদের স্বাধীনতা প্রত্যাশা করে আসছে। ইসলাম স্বয়ং একটি ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম বা বিশেষ কোনো ধর্মগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দমননীতি অনুমোদন করে না। এ প্রসঙ্গে ইসলাম ধর্মগ্রন্থের বহু উদ্ধৃতি এখানে দেওয়া যাবে। পবিত্র  কোরআনের মক্কী যুগের সুরায় আল্লাহ বলছেন, ‘এবং যদি তোমার প্রভু ইচ্ছা করতেন তাহলে পৃথিবীর বুকে বসবাসকারী সব মানুষকেই এক সাথে বিশ্বাসী বানিয়ে ফেলতে পারতেন। সুতরাং (হে মোহাম্মদ!) তুমি কি তাহলে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য লোকদের বাধ্য করতে চাও?’ (সুরা ইউনুস, আয়াত-৯৯)

ইসলাম কথা বলার ও সমালোচনার স্বাধীনতাকে শুধুমাত্র এর মূলনীতির অংশ হিসেবেই গ্রহণ করেনি কিংবা একে শুধু স্বাধীনতার অংশ হিসেবেই গুরুত্ব প্রদান করেনি, বরং সমাজ-সংস্কৃতি ও গণমানুষের স্বার্থ, সর্বজনীন নৈতিকতা ও জীবনপদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত জনগুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে সত্য বলা, সত্য প্রকাশ এবং সমালোচনাকে আইনগত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হক কথা বলা, সমালোচনা করা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করাকে ধর্মীয় কর্তব্যেরও অংশ বলে গণ্য করা হয়েছে। সত্যের প্রতি আহ্বান, সৎ লোকদের উৎসাহ প্রদান, দুষ্কৃতকারীদের নিন্দা করাকে ঈমানদারির লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ঈমানদার ব্যক্তির নীরবতা যদি সমাজের ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে এর জন্য আল্লাহর কাছে তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। এ কারণে ঈমানদার ব্যক্তির ওপর অপরিহার্য দায়িত্ব হয়ে পড়ে সত্যের পক্ষে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : ‘সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজ থেকে বিরত রাখ আর যে বিপদই আসুক না কেন তার জন্য ধৈর্যধারণ করো। এসবই আল্লাহপ্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং এ থেকে অব্যাহতি পাওয়া যেতে পারে  না।’ (সুরা লোকমান, আয়াত-১৭) বস্তুত, এটিই ইসলামের পথ। এটিই ইসলামের ব্যাপ্তি।

বিশ্বাসের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আল্লাহরাব্বুল আলামীন যদি ঈমানদারদেরকে লড়াই করার অনুমতি না দিতেন, তাহলে পৃথিবীতে অশুভ দানবীয় শক্তির ঔদ্ধত্য ও আধিপত্য, এতই বেড়ে যেত যে, তারা পৃথিবীর বুক থেকে আল্লাহর নাম-নিশানাই মুছে দেওয়ার অপচেষ্টা করত। এমনকী আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এমন কোনো উপাসনারই আর কোনো অস্তিত্ব থাকতো না। সুতরাং এটিই হচ্ছে ইসলাম, যা পৃথিবীতে মানুষের বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে, ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে সমুন্নত করেছে। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ইসলাম তখনো স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারকে এক করে দেখে না। বর্তমানে পাপাচার, নৈতিক বিকৃতি আর স্বেচ্ছাচারের পক্ষে সাফাই গাওয়া হচ্ছে আর দাবি করা হচ্ছে এগুলো নাকি ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা।’ মূলত এর মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতারই যে অবমাননা করা হচ্ছে, বিকৃতি করা হচ্ছে তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। ইসলামের একটি সোনালী আইন হচ্ছে, নিজের এবং অন্য কারো ক্ষতিই করা যাবে না। সুতরাং ক্ষতিকর সব স্বাধীনতাই প্রতিরোধযোগ্য এবং নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, আপনার স্বাধীনতার সমাপন অন্যের স্বাধীনতার সূচনা করে।

অতএব, স্বাধীনতা এক খোদায়ী আমানত, যা আল্লাহতায়ালা আমাদের দান করেছেন। অমূল্য এ আমানত রক্ষার ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা ও বিশ্বাসঘাতকতা মোটেই কাম্য নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হলে তারা বিভ্রান্ত হয় এবং অধঃপতনের শিকার হয়। উন্নত সমাজ ও জাতি গঠনে স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের সদা সজাগ থাকতে হবে। এটা স্বাধীনতার মাসে হোক আমাদের শপথ। আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং জন্ম থেকেই যে স্বাধীনতা আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন তা বাস্তব জীবনে কার্যকর করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

মো. হুসাইন আহমদ

লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল

দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads