• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি

ইন্টারনেট

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ভৌতিক গ্যালাক্সিতে নেই ডার্ক ম্যাটার!

  • তপু রায়হান
  • প্রকাশিত ৩০ মার্চ ২০১৮

গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ হচ্ছে একটি বৃহৎ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা, যা আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা, প্লাজমা এবং প্রচুর পরিমাণে অদৃশ্য বস্তু দিয়ে গঠিত। মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে গ্যালাক্সি। অনেকগুলো নক্ষত্র মিলে একটি গ্যালাক্সি তৈরি করে। ছোট গ্যালাক্সিগুলোয় এক বিলিয়নের কাছাকাছি নক্ষত্র থাকে, এগুলোকে বামন গ্যালাক্সি বলে। বড় গ্যালাক্সিগুলোয় একশ’ বিলিয়নের কাছাকাছি নক্ষত্র থাকে, এগুলোকে দানব গ্যালাক্সি বলে। আমাদের সৌরজগৎও একটি গ্যালাক্সির মধ্যে আছে। এই গ্যালাক্সিটিকে বলে মিল্কিওয়ে।

আর বেশ কিছু গ্যালাক্সি যখন বিপুল মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে একসঙ্গে গুচ্ছ হয়ে কাছাকাছি অবস্থান করে তখন তাকে বলা হয় গ্যালাক্সি গুচ্ছ।

সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী ফ্রিৎস জুইস্তি গ্যালাক্সিগুচ্ছের ভর মাপার জন্য হিসাব নিকাশ করে যে ভর তিনি পেয়েছেন, এত অল্প ভর যদি সত্যিই গ্যালাক্সি গুচ্ছটার হতো, তাহলে যে মাধ্যাকর্ষণ বল পাওয়া যেত তার টানে এই গ্যালাক্সিগুলো একসঙ্গে আসতেই পারত না। তার মানে নিশ্চয়ই কিছু ভর এখানে আছে যা তার হিসাবে আসেনি বা আমরাও যা সম্পর্কে জানি না, যার অস্তিত্ব আমরা টের পাইনি।

এরপর জ্যান কইয়ি নামের এক জোতির্বিজ্ঞানী একটি গ্যালাক্সি গুচ্ছ পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে, এর আশপাশ দিয়ে আলো যাওয়ার সময় এতটাই বেঁকে যাচ্ছে যতটা তার নিজের ভরের কারণে বাঁকানো সম্ভব নয়। এ ঘটনাটাও নির্দেশ করে কিছু অজানা অচেনা বস্তুর দিকে। যাদের অস্তিত্ব আছে কিন্তু আমরা টের পাচ্ছি না। এগুলো হয়তো গ্যালাক্সি গুচ্ছটার মধ্যে অবস্থান করছে যার কারণে যোগ করছে কিছু অতিরিক্ত ভর, যা আলোকে অনেক বেশি বাঁকিয়ে দিচ্ছে; যতটা বাঁকানোর কথা তার চেয়ে বেশি।

এ রকম আরো অনেক ঘটনা থেকেও পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন আমাদের অজানা কিছু বস্তু এ মহাবিশ্বে আছে, যাদের আমরা এখনো খুঁজে পাইনি কিন্তু তারা তাদের অস্তিত্বের জানান দিয়ে গেছে প্রতিনিয়ত। ডার্ক বা অন্ধকারকে অনেক সময় আমাদের অজানা, অচেনা বা ভীতিকর কিছুর সঙ্গে উপমা দিতে ব্যবহার করা হয়। এই পদার্থগুলোকেও তাই নাম দেওয়া হলো ডার্ক ম্যাটার।

কিন্তু জোতির্বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, মিল্কিওয়ের মতো বড় সাইজের কোনো গ্যালাক্সিতে ডার্ক ম্যাটার নাও থাকতে পারে। তারা সম্প্রতি মিল্কিওয়ে সাইজের এমন একটি গ্যালাক্সির আবিষ্কার করেছেন, যা তাদের এই সংশয়ের মধ্যে ফেলেছে। তারা এনজিসি১০৫২-ডিএফ২ মডেলের ক্যাচি মনিকার-এর মাধ্যমে দেখেছেন ওই গ্যালাক্সিটিতে কোনো ডার্ক ম্যাটার থাকার সম্ভাবনা নেই।

জোতির্বিজ্ঞানীদের এই পর্যবেক্ষণ যদি সত্যি হয়, তাহলে এটাই হবে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে ডার্ক ম্যাটার ছাড়া সাধারণ ম্যাটারে গঠিত। যদিও এখন মনে করা হয় মহাবিশ্বের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা বজায় রাখতে ডার্ক ম্যাটার বিশেষ ভূমিকা রাখে।

ন্যাচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রবন্ধে গবেষকরা বলেছেন, তারা আসলে কোনো ডার্ক ম্যাটার ছাড়া গ্যালাক্সির অনুসন্ধান করতে গিয়ে এটি আবিষ্কার করেননি। তারা বড়সড় সাইজের গ্যালাক্সিটি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েই নতুন এই ধারণার ইঙ্গিত পান।

নতুন গ্যালাক্সিটি গুচ্ছের অনেক কিছুই সাধারণ গ্যালাক্সির সঙ্গে মিলে যায়। তবে এর ভেতরে থাকা তারার বিন্যাস অন্য গ্যালাক্সির তুলনায় ছাড়া ছাড়া।

আর এ কারণেই গবেষক দলের প্রধান প্রফেসর ভ্যান ডোকাম ওই গ্যালাক্সিটিকে ‘ভূতের আলোতে উজ্জ্বল’ গ্যালাক্সি হিসেবে আখ্যা দেন।

গবেষকরা দেখেন, এই গ্যালাক্সিটির মধ্যে খুব কমসংখ্যক তারকা আছে। তবে তারা আবার কয়েকটি করে গুচ্ছ হয়ে অবস্থান করছে। এরপর যখন তারা তারকাগুচ্ছের ভর পরিমাপ করতে শুরু করলেন তখন তারা দেখলেন, তার ভর প্রায় গ্যালাক্সির ভরের সমানই।

অথচ এতদিন জানা অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটারই মহাবিশ্বের ২৭ শতাংশ। ডার্ক ম্যাটার নরমাল ম্যাটার বা সাধারণ পদার্থের ডার্ক ক্লাউড ফর্মে থাকে না। নরমাল ম্যাটার যে পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় তাকে ব্যারিয়ন বলা হয়। আমাদের আরো জানা ছিল, কোনো উচ্চ ঘনত্বের বস্তু তাদের কাছে আসা আলোকে বাঁকিয়ে দিতে পারে, কিন্তু ২৫ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার কন্ট্রিবিউশন আছে এমন গ্যালাক্সি আলোকে বাঁকিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া একটি গ্যালাক্সিতে সাধারণত রেগুলার ম্যাটারের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি ডার্ক ম্যাটার থাকতে পারে।

আর এ কারণেই ধারণা করা হয়, গ্যালাক্সি সৃষ্টির সময় ডার্ক ম্যাটার সাধারণ ম্যাটারের তুলনায় আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা, প্লাজমাকে বেশি শক্তিতে আকর্ষণ করতে পারে।

তবে নতুন গ্যালাক্সিটিতে সেই উপায়ে নাও সৃষ্টি হতে পারে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন গবেষক দলের সদস্য ও নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জোতির্বিদ ড. ক্যাথেরিন ম্যাক। তার মতে, এই গ্যালাক্সিটি অন্য কোনো বড় একটি গ্যালাক্সির নিঃসৃত গ্যাসের অন্তঃপ্রবাহ বা বহিঃপ্রবাহের সময় সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।

তিনি বলেন, শুধু গ্যালাক্সি নয়, মহাবিশ্বের আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা, প্লাজমাসহ অনেক কিছুকে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় রাখতে ডার্ক ম্যাটারের ভূমিকা অনেক। কিন্তু নতুন গ্যালাক্সিটিতে আমরা তেমন কোনো অস্তিত্ব পাইনি।

তার মতে, নতুন গ্যালাক্সিটিতে ডার্ক ম্যাটার যদি সাধারণ ম্যাটারগুলোর ওপর কেবল একটা অদৃশ্য মহাকর্ষীয় বল হিসেবে কাজ করত তবে তাদের দেখা যেত। তাই বলা যায়, ডার্ক ম্যাটার যদি সেখানে বাস্তবিকপক্ষে থাকতে পারে আবার নাও পারে।

এ বিষয়ে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যার অধ্যাপক ড. রিচার্ড ম্যাসি বলেন, গবেষকদের নতুন এই আবিষ্কারটি আসলেই অসাধারণ। তারা দারুণ একটি কাজ করেছেন। তবে এই আবিষ্কারের প্রভাব জানতে আমাদের আরো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। এই একটি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত বলার সময় আসেনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads