• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
স্মার্টফোন আমদানিতে কর কমালে সরকার লাভবান হবে

শাওমির গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট মানু কুমার জেইন

সংরক্ষিত ছবি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

স্মার্টফোন আমদানিতে কর কমালে সরকার লাভবান হবে

  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০১৮

মানু কুমার জেইন, শাওমির গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং শাওমি ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১৪ সালে তিনি শাওমিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে শাওমি গ্লোবালের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও নিয়োগ পান। সম্প্রতি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে শাওমি। এ উপলক্ষে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের খবরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজার এবং বাংলাদেশ নিয়ে শাওমির বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন-

বাংলাদেশের খবর : বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজার নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মানু কুমার জেইন : বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজার বেশ সম্ভাবনাময়। এখানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের জনসংখ্যার যদি ১৬-১৭ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাহলে এখানকার স্মার্টফোন বাজার তিন থেকে চার কোটি ডলারে উন্নীত হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম একটি স্মার্টফোনের বাজার, এমনকি ইউরোপের অনেক দেশের চেয়েও বড়।

এ ছাড়া আমি মনে করি, সমাজের উন্নয়নের জন্য স্মার্টফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মানুষের হাতে স্মার্টফোন থাকলে তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শুরু করবে যার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে। আর তাই স্মার্টফোনের বাজার এবং ইন্টারনেট গ্রাহক, এই দু’দিক থেকেই বিবেচনা করলে বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

বাংলাদেশের খবর : বাংলাদেশের বাজারে এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোন বিশেষ করে দশ হাজার টাকার মধ্যে থাকা স্মার্টফোনের চাহিদা বেশি। এ দামের মধ্যে স্মার্টফোন বাজারে আনার ব্যাপারে শাওমির কোনো পরিকল্পনা আছে?

মানু কুমার জেইন : অবশ্যই, এ ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে আমাদের এমন কোনো স্মার্টফোন নেই। ভারতের কথাই ধরা যাক। বর্তমানে এখানে অনেক ব্র্যান্ডই ৫-৬ হাজার টাকায় স্মার্টফোন বিক্রি করছে। যদিও এ টাকায় মানসম্মত স্মার্টফোন তৈরি করা সম্ভব না। তবে দশ হাজার টাকার মধ্যে চিন্তা করলে আমরা পারব, এ দামে মানসম্মত স্মার্টফোন তৈরি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ-ফোনের ফিচার, মান এবং দাম। স্যামসাং বা অন্যান্য শীর্ষ ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের স্মার্টফোনের ফিচার ভালো, মান ভালো কিন্তু দাম বেশি। আবার স্থানীয় ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের ফিচার ভালো, দামও কম কিন্তু মানসম্মত না। তবে শাওমি এই তিনটি বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই সব মিলিয়ে দশ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন বাজারে আনার বিষয়ে আমি আশাবাদী।

বাংলাদেশের খবর : অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শাওমি স্মার্টফোনের দাম বেশি, ক্রেতাদের এমন অভিযোগ রয়েছে। এর কারণ কী?

মানু কুমার জেইন : এর পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমেই আমি স্বীকার করে নিচ্ছি যে এখানে আমাদেরই ভুল ছিল। আমরা এর আগে বাংলাদেশের বাজার নিয়ে সেভাবে চিন্তা করিনি। আমরা ডিস্ট্রিবিউটর এবং রিটেইল পার্টনারদের মাধ্যমেই এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলাম। বাংলাদেশে যৌক্তিক দামে (অনেস্ট প্রাইসিং) ফোন বিক্রি করতে পারিনি। আজ থেকে আমরা এটি শুধরে নিচ্ছি।

দ্বিতীয়ত, পরিবেশন কৌশল (ডিস্ট্রিবিউশন স্ট্র্যাটেজি) এর জন্য দায়ী। শুধু স্মার্টফোনই নয়, অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও ন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর, রিজিওনাল ডিস্ট্রিবিউটর, মাইক্রো ডিস্ট্রিবিউটর এবং খুচরা বিক্রেতা হয়ে ক্রেতার হাতে যেতে যেতে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। এ সমস্যা সমাধানে আমরা ই-কমার্সের মাধ্যমে স্মার্টফোন বিক্রি শুরু করছি। এ ছাড়া পরিবেশক পর্যায়ে তিন-চারটি স্তরের পরিবর্তে এক বা দুটি স্তর পার হয়েই ক্রেতার হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে দিতেও কাজ চলছে।

দাম বেশি হওয়ার তৃতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো কর। বাংলাদেশে স্মার্টফোনের কর চীন বা ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। আমি মনে করি স্মার্টফোনের বাজার বড় না হওয়ার পেছনে এটিও একটি অন্যতম কারণ। সাধারণত স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনে উৎসাহিত করতে সরকার আমদানিতে উচ্চহারে করারোপ করে থাকে। তবে এর জন্য উচ্চহারে করারোপ না করে বরং কর কমিয়ে দেওয়া উচিত। কর কম থাকলে গ্রে মার্কেট বন্ধ হবে এবং বৈধ পথে আসা স্মার্টফোনের বিক্রি বাড়বে। এর ফলে স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে যার ওপর ভিত্তি করে তারা পরবর্তীতে সেখানে স্মার্টফোন ফ্যাক্টরি গড়ে তুলতে আগ্রহী হবে। মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের দেওয়া হিসাবমতে বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারের ৩০ শতাংশই গ্রে মার্কেট। তবে আমাদের হিসেবে এটি ৪০ শতাংশের মতো। অর্থাৎ প্রতি ১০০ স্মার্টফোনের ৪০টি থেকেই সরকার কোনো ট্যাক্স পাচ্ছে না। তাই স্মার্টফোনে যদি ট্যাক্স কমানো হয় তাহলে সরকারই লাভবান হবে।

বাংলাদেশের খবর : বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় বর্তমানে গ্রে মার্কেটে শাওমিসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন বিক্রির পরিমাণ অনেক। এক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে?

মানু কুমার জেইন : আসলে এখানে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তবে আমরা যেটা করতে পারি তা হলো যতটা সম্ভব আমাদের স্মার্টফোনের দাম কমিয়ে আনা। গ্রে মার্কেটের সমান কিংবা কাছাকাছি দামে যদি একজন ক্রেতা অরিজিনাল পণ্য কিনতে পারে তাহলে গ্রে মার্কেট এমনিই বন্ধ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের খবর : গ্রে প্রডাক্ট বিক্রি করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো কি চাইলে শাওমির অনুমোদিত বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারবে?

মানু কুমার জেইন : অবশ্যই। তবে সেক্ষেত্রে তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে তারা আর কোনো গ্রে প্রডাক্ট বিক্রি করবে না।

বাংলাদেশের খবর : বাংলাদেশে স্মার্টফোন ফ্যাক্টরি স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা শাওমির আছে কি না?

মানু কুমার জেইন : এখনই তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশে শাওমি স্মার্টফোনের বাজার এখনো তেমন বড় না। তা ছাড়া ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য কয়েক শ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। মাত্রই তো এখানে কার্যক্রম শুরু হলো। এখানে যদি শাওমি স্মার্টফোনের বাজার বড় হয়, তাহলে অবশ্যই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর জন্য আরো ২-৩ বছর সময় তো লাগবেই।

বাংলাদেশের খবর : স্মার্টফোন ছাড়াও শাওমির আরো অনেক স্মার্ট ডিভাইস এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স রয়েছে। বাংলাদেশে এসব পণ্য বাজারজাত করার বিষয়ে শাওমির পরিকল্পনা কী?

মানু কুমার জেইন : এ পণ্যগুলো বাংলাদেশের বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনই এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। এর জন্য আরো কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। আগামী দুই বছর আমরা শুধু স্মার্টফোনেই মনোযোগ দিতে চাই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads