• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

শোবিজ

‘মানুষকে ভালো গান উপহার দিয়ে যাব’

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ জানুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশের বাউল সম্রাজ্ঞী ও সংসদ সদস্য মমতাজ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে হ্যাটট্রিক করেছেন। ২০১৪ সালে মাসুদ পথিকের ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’, ২০১৭ সালে হাছিবুর রেজা কল্লোলের ‘সত্তা’ এবং সদ্য ঘোষিত ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মাসুদ পথিকেরই ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’ সিনেমায় গান গাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে হ্যাটট্রিক করায় ভীষণ আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত মমতাজ।

 মমতাজ বলেন, ‘আমার গাওয়া গান শ্রোতা-দর্শকের ভালো লাগে এটাই আমার প্রথম ভালো লাগা, প্রথম পুরস্কার। কারণ আমি মনে করি দর্শক শ্রোতার ভালো লাগার মাঝেই আমি বেঁচে থাকব, আমার গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা থাকবে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে হ্যাটট্রিক করে সত্যিই আমি ভীষণ আবেগাপ্লুত। এই পুরস্কার আমাকে বার বার একটি বিষয়ে আরো সচেতন করে তুলছে, আর তা হলো গান বেশি বেশি গাওয়ার চেয়ে বেছে বেছে কম গান গাওয়াই ভালো। যেমন কিছুদিন আগে মীর সাব্বিরের ‘রাতজাগা ফুল’ সিনেমায় গান গেয়েছি। এই বছরে এই সিনেমাতেই শুধু গান গেয়েছি। আমার মনে হয় ভালো গান কম গাইলেও শ্রোতা-দর্শকের কাছ থেকে মূল্যায়নটা সঠিকভাবে পাওয়া যায়। আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সম্মানিত সদস্যদের। আর অবশ্যই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই মাসুদ পথিককে। কারণ তার সিনেমাতেই গান গেয়ে আমি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলাম। তার সিনেমাতেই গান গেয়ে হ্যাটট্রিক করেছি। সিনেমা নির্মাণে তার ভাবনা আমাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে। কারণ তার সিনেমায় আমাদের গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আমরা দেখতে পাই। ভীষণ মেধাবী এই পরিচালকের কাছে আগামী দিনেও আমরা আরো ভালো কিছু আশা করব। পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, তিনি আমাকে বার বার সম্মানিত করার সৌভাগ্য দিয়েছেন।

কৃতজ্ঞতা আমার বাবা-মায়ের প্রতি, তারা আমাকে সুন্দর এই পৃথিবীর আলোর মুখ দেখিয়েছেন। মাসুদ পথিক পরিচালিত ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’ সিনেমায় ‘ডালিমগাছ’ গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন মমতাজ। গানটি লিখেছেন মাসুদ পথিক, সুর করেছেন প্লাবন কোরেশী (তিনিও শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন)। সংগীতায়োজন করেছেন মুশফিক লিটু। মমতাজ প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ‘নিশি পক্ষি’ গানটির জন্য। গানটি লেখা ছিল মাসুদ পথিকের। সুর বেলাল খানের এবং সংগীতায়োজন মুশফিক লিটুর। পরবর্তীকালে ‘সত্তা’ সিনেমায় ‘না জানি কোন অপরাধে’ গানটির জন্য পুরস্কৃত হন। গানটির সুর সংগীত করেছিলেন বাপ্পা মজুমদার।

গানে মমতাজ দীর্ঘ জীবন পার করেছেন। শুরু সময়ের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা সম্পর্কে মমতাজ বলেন, ‘শুরুর দিকে তখন শুধু গান আর গান ছিল। শুধু গাইতাম। বলা যায় গানের  প্রতিই প্রেমে পড়েছিলাম। এখনো সেই প্রেমটাই আছে। আমার মনে হয় যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গানের প্রতি ভালোবাসা আর প্রেমটা থাকবে। এই প্রেম নিয়েই ভালো কাজ, ভালো গান গাওয়ার ইচ্ছা আছে। ’

গান নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে মমতাজ বলেন, ‘যতদিন বাঁচব এই গান নিয়েই থাকব। মানুষকে ভালো গান উপহার দিয়ে যাব। গানের জন্য এবং গানের মানুষদের জন্য যদি কিছু করার সুযোগ পাই তবে সে সুযোগ কাজে লাগাব।’

শিল্পী মমতাজ বেগম এখন রাজনীতিবিদও। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের জন্য করণীয় কি এমন প্রশ্নের জবাবে মমতাজ বলেন, ‘সব সময় ভালো লাগে, কারণ গণমানুষের শিল্পী আমি। আর সেই গণমানুষের জন্য যদি কোনোরকম সুযোগ পাই, কোনোভাবে যদি কাজ করতে পারি, এর চাইতে ভালো লাগার জায়গা তো আর দ্বিতীয়টা নেই বলে আমি মনে করি।’

উল্লেখ্য, মমতাজ বেগম ৫ মে ১৯৭৪ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মমতাজের মা উজালা বেগম, বাবা মধু বয়াতি ছিলেন বাউল শিল্পী। মমতাজ বেগমের দুই ভাই রয়েছে। মমতাজ প্রথম জীবনে বাবা মধু বয়াতি, পরে মাতাল রাজ্জাক দেওয়ান এবং শেষে লোকগানের শিক্ষক আবদুর রশীদ সরকারের কাছে গান শেখেন। দুই দশকের বেশি তার পেশাদারি সংগীত জীবনে ৭০০টির বেশি একক অ্যালবাম প্রকাশ পায়। মমতাজ সারা দেশে বিভিন্ন সংগীতানুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন।

তা ছাড়া তিনি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশেই সংগীত অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন এবং তার গান ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বাংলা সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষত বাংলা নববর্ষের বৈশাখি মেলায় তার গান জনপ্রিয়। মমতাজ বেগমের প্রথম স্বামী আবদুর রশীদ সরকার মৃত্যুবরণ করেছেন। পরে মমতাজ বেগম মোহাম্মদ রমজান আলীকে বিয়ে করেন, যার সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। পরে মমতাজ বেগম মইনউদ্দিন হাসান চঞ্চলকে বিয়ে করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads