• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
মধ্যরাতে কেনাকাটায় মুখর রাজধানী ও বন্দরনগরী

রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে মধ্যরাতেও ক্রেতাদের ভিড়

বাণিজ্য

মধ্যরাতে কেনাকাটায় মুখর রাজধানী ও বন্দরনগরী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ জুন ২০১৮

এক সপ্তাহ পরেই ঈদের বার্তা নিয়ে পশ্চিমাকাশে দেখা দেবে শাওয়ালের নতুন চাঁদ। মুসলিম সম্প্রদায়ের ধনী-দরিদ্র সবার কাছে এ ঈদ উদযাপনের একটি প্রধান অনুষঙ্গ নতুন পোশাক। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই যার যার সাধ্যমতো নতুন পোশাক কেনেন ঈদকে কেন্দ্র করে। কেনেন প্রিয়জনের উপহার দেওয়ার জন্যও। তাই ব্যবসায়ীদের কাছেও পুরো বছরের সবচেয়ে বড় বেচাকেনার মৌসুম এটি। ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পণ্যসম্ভারে সাজিয়ে তোলেন নিজ নিজ দোকান। ক্রেতারাও সেখান থেকে বেছে নেয় পছন্দের পণ্যটি। ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বেচাকেনায় জমে উঠেছে বিপণিবিতানগুলো। তবে এ কেনাকাটায় দিনের চেয়ে রাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন নগরবাসী।

এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। দিনভর ব্যস্ততা। অফিস ছুটি শেষে নগরীর অসহনীয় যানজটের দুর্ভোগ ও দাবদাহে কেনাকাটার ধৈর্য থাকে না। বাসায় ফিরতে ফিরতেই হয়ে যায় ইফতারের সময়। একটু পরেই তারাবি। এসব কারণে মধ্যরাতে ঈদের কেনাকাটা সারছেন রাজধানী ও চট্টগ্রাম মহানগরের অনেক বাসিন্দা। এবার তুলনামূলক আগেভাগেই জমে উঠেছে মধ্যরাতে ঈদের কেনাকাটা। মাসের মাঝামাঝি ঈদ হওয়ায় আর চাকরিজীবীরা মাসের শুরুতে বেতন পাওয়ায় কেনাকাটায় ধুম পড়েছে।

রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলসহ এ ধরনের অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে রাতেই কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন অনেক ক্রেতা। তাই রাতের বেলা সারি সারি গাড়ি দেখা যায় বিপণিবিতানগুলোর সামনে। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ফুটপাথ থেকে অভিজাত বিপণিবিতান- সবখানে মধ্যরাতে ক্রেতাদের পদচারণ বাড়ছে।

ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঈদবাজার উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা বিপণিবিতানগুলো আলোকসজ্জা করেছেন রমজানের শুরু থেকেই। সন্ধ্যার পর থেকে বিপণিবিতানগুলো থেকে ছড়াতে থাকে বর্ণিল আলো। নিউমার্কেট, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, আনাম র্যাংগস প্লাজা ও সীমান্ত স্কয়ার সেজেছে বর্ণিল আলোয়।

বৃৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিউমার্কেট এলাকার চাঁদনীচকে গিয়ে দেখা যায়, মধ্যরাতেও দোকানিরা বেশ ব্যস্ত। পণ্য বেচে সন্তুষ্ট বিক্রেতারা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকার বেশ কয়েকটি বিপণিবিতানের সামনে বসানো হয়েছে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প।

চাঁদনীচকে কথা হয় আবুল হোসেন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি জানান, বিভিন্ন কারণে দিনের চেয়ে রাতেই কেনাকাটা করতে সুবিধা। তারাবির নামাজ শেষে মানুষজন একটু আরাম-আয়েশে কেনাকাটা করতে আসে। একইভাবে তিনিও রাতের বেলা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন।

একই রাতে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা পুরান ঢাকার মরিয়ম আক্তার বলেন, ‘রমজানের শুরু থেকেই নগরজুড়ে তীব্র যানজট। পুরান ঢাকা থেকে দিনের বেলায় কোনো বিপণিবিতানে যেতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। আবার দিনে থাকে ভিড়। রাতে যানজট নেই, ভিড়ও নেই। তাই রাতকেই কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছি।’

মধ্যরাতে ফুটপাথের দোকানগুলোতেও ভিড় বাড়ছে। এসব দোকানে মিলছে সব ধরনের পোশাক। ছোট-বড় সব বয়সী মেয়েদের জন্য বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিস, টপস, জিপসি ইত্যাদি সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা। আছে তরুণীদের হাল ফ্যাশনের জামাও। জুতা থেকে পাঞ্জাবি সবই মিলছে ফুটপাথের দোকানগুলোতে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ফুটপাথের দোকানগুলোই ভরসা।

গুলিস্তানের ফুটপাথের বিক্রেতা আকবর মিয়া জানান, শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের পোশাক আছে তার দোকানে। বড়দের চাহিদা অনুযায়ী এখনো কেনাবেচা শুরু হয়নি। ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় পাওয়া যায় শিশুদের পোশাক। আর রাতে নারী ক্রেতার তুলনায় পুরুষ বেশি আসেন।

এদিকে রমজানের শেষ পর্যায়ে এসে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিপণিকেন্দ্রগুলো অন্য রকম রূপ ধারণ করেছে। চলছে জম্পেশ বেচাকেনা। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিক্রেতারা। আর ক্রেতারাও পছন্দের জিনিস কিনতে ছুটছে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে, এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে। সকাল থেকে সাহরি পর্যন্ত জমজমাট বেচাকেনা চলছে মার্কেটগুলোতে।

শুক্রবার রাত আড়াইটায় চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত বিপণিকেন্দ্র চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের গেটে রিকশা ও অটোরিকশার জট। রাস্তার পাশেই পার্ক করা সারি সারি প্রাইভেটকার। শপিং ব্যাগ হাতে দলে দলে বেরোচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ-শিশু, আর গাড়িতে উঠে চলছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।

নগরীর আধুনিক শপিং মল সানমার ওশান সিটিতে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মাহমুদ হাসান। রাত দেড়টায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সারা দিন চাকরি, আবার অফিস শেষে বাসায় ফিরে ইফতার, তারাবি নিয়ে সময় চলে যায়। বাজারে যাওয়ার সুযোগ হয় না। এদিকে ঈদও কাছে চলে এসেছে। তাই রাতেই মার্কেটে আসা। আর মার্কেট তো এখন সারা রাতই খোলা থাকে। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনে একেবারে বাসায় ফিরে সাহরি খাওয়া যায়।

লালখান বাজার আমিন সেন্টার শপিং কমপ্লেক্সে কেনাকাটা করতে আসা কলেজছাত্রী আকলিমা সিদ্দিকী জিসু বলেন, ঈদে নতুন পোশাক আমাদের সংস্কৃতির অংশ। নতুন কাপড়, জুতা, চুড়ি ইত্যাদি ছাড়া ঈদের আনন্দটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তাই যত পোশাকই জমা থাকুক, ঈদে নতুন ডিজাইনের নতুন পোশাক, নতুন জুতা এসব কিনতেই হয়।

একইভাবে নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিপণিকেন্দ্র রেয়াজউদ্দিন বাজার ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতার ভীষণ ব্যস্ততা।

বিপণিবিতান ব্যবসায়ী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. সাগির বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় মার্কেটগুলোতে ক্রেতার আনাগোনাও বেশি। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শুরুর আগ পর্যন্ত মার্কেটগুলোতে ভিড় থাকে শহরের বাইরের লোকজনের। আর ছুটি শুরুর পর বাইরের লোকজন যখন শহর ছাড়তে শুরু করেন, তখন বাজারে আসা শুরু হয় শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads