• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য তিনগুণ বাড়তে পারে

সংগৃহীত ছবি

বাণিজ্য

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য তিনগুণ বাড়তে পারে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ২৩ বিলিয়ন ডলার। এটি ৬৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। অর্থাৎ বর্তমান বাণিজ্যের তুলনায় তিনগুণ বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে শুল্ক ও অশুল্কজনিত যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে। বাধা দূর করতে পারলে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিগুণ বাণিজ্য বাড়াতে পারবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো ত্বরান্বিত ও কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ‘অর্ধপূর্ণ গ্লাস : দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিউ ফান। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের লিড ইকোনমিস্ট ও সমন্বয়ক সঞ্জয় কাঠুরিয়া। প্রতিবেদনের ওপর প্যানেল বক্তা ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, পিআরআই’র রিসার্চ ডিরেক্টর ড. আবদুর রাজ্জাক, ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চারটি প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো- অতিরিক্ত শুল্ক, নানা ধরনের অশুল্ক বাধা, ব্যয়বহুল সংযোগ এবং সীমান্তে পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি। এ কারণে আঞ্চলিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মোট বাণিজ্যের মাত্র পাঁচ শতাংশ বাণিজ্য হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে। পূর্ব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশ বাণিজ্য হয়ে থাকে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ব্যয় বিশ্বের অন্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে বাণিজ্য শুল্কের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে এ হার দ্বিগুণেরও বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অভ্যন্তরীণ পণ্যের বাজার সুরক্ষায় বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি মনোযোগী। এ কারণে সাফটা চুক্তি হলেও সংরক্ষণ নীতির কারণে তাতে খুব একটা সুফল মিলছে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ৪৬ শতাংশ আমদানি কমেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সীমান্ত সুবিধা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তথ্যের অপর্যাপ্ততা, পণ্য আমদানি রফতানিতে আধুনিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতি, আকাশপথে যোগাযোগের সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যবসা ও বিনিয়োগ এখনো অনেক বেশি ব্যয়বহুল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধির দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক বাণিজ্যিক চুক্তি (সাফটা) কার্যকরে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ১৯৪৭ সালের আগের মতো কানেক্টিভিটি সম্ভব নয়, তবে চেষ্টা চলছে।

তিনি আরো বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। এ কারণে ওইসব দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বাধা দূর করার চেষ্টা চলছে।

বিশ্বব্যাংকের কিমিউ ফান বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান যে বাণিজ্যনীতি রয়েছে, এটা অনেকটাই আমদানিবিরুদ্ধ নীতি। এ নীতি সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের সঞ্জয় কাঠুরিয়া বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত হাট চালুর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই বৃদ্ধি হয়নি এতে দুই দেশের মানুষের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বেড়েছে। এতে পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়ছে। সম্পর্ক বৃদ্ধিতে আরো সীমান্ত হাট করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

জায়েদি সাত্তার বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টি শুধু অর্থনৈতিক ইস্যুর সঙ্গে জড়িত নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ও জড়িত। পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ঘাটতি রয়েছে, সেটি দূর করতে হবে। তবে এ জন্য মনস্তাত্ত্বিক চিন্তায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads