• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
আইসিসে বাংলাদেশি জিহাদি সুজনের নেটওয়ার্ক

সাইফুল সুজন

ছবি : ইন্টারনেট

বিদেশ

আইসিসে বাংলাদেশি জিহাদি সুজনের নেটওয়ার্ক

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৭ জুলাই ২০১৮

দু'হাজার পনেরো সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন এক ঘোষণায় বলেছিলেন, ইরাক এবং সিরিয়ায় এক অভিযান চালিয়ে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর প্রায় ১০ জন ঊর্ধ্বতন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের একজন ছিলেন সাইফুল সুজন। তিনি একজন বাংলাদেশি নাগরিক। যিনি ১০ই ডিসেম্বর সিরিয়ার রাক্কার কাছে নিহত হন। অপারেশন 'ইনহেরেন্ট রিজল্ভ' নামের ওই অভিযানের লক্ষ্যবস্তু যারা ছিলেন - তাদের অনেকেই নিহত হন ড্রোন আক্রমণে। কর্নেল ওয়ারেন তখন বলেছিলেন, তারা 'সাপের মাথায় আঘাত করছেন' এবং আইসিসের নেতাদের হত্যা করছেন।

সাইফুল সুজন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সুজন একজন বহির্দেশীয় কার্যক্রমের পরিকল্পনাকারী ছিলেন, এবং ব্রিটেনে কম্পিউটার সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।’ তিনি আরো বলেন, আইএসের হ্যাকিং কার্যক্রম, নজরদারি এড়ানোর প্রযুক্তি, এবং অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে একজন মূল ব্যক্তি ছিলেন এই সুজন। বলা হয়, সুজন মারা যাওয়াতে আইসিস আর নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যেকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ নষ্ট হয়ে গেছে। এই মূল্যায়নে বোঝা যায়, আইএসের একটি প্রভাবশালী সেলের নেতা ছিলেন এই বাংলাদেশী।

তার মৃত্যুর পর কয়েক মাস ধরে এবং তিনটি মহাদেশে এক ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েছে বিবিসি ওয়েলস। বিবিসি ওয়েলস জানতে পেরেছে যে, সুজন নিহত হবার পরও তার নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য অর্থায়ন করে চলেছে - এমন দাবি করছেন অনেকে। অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে এসেছে যে সুজন কীভাবে আইএসের একজন মূল ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।

সুজন বাংলাদেশ থেকে ২০০০ সালে ব্রিটেনে আসেন। তার চেহারা বা ব্যক্তিত্বে এমন কিছুই ছিল না যাতে মনে হতে পারে যে এক দশকেরও কম সময়ে তিনি আইএসের অন্যতম ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। কার্ডিফের উত্তরে পন্টিপ্রিডে সাবেক গ্ল্যামরগ্যান বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে শুরু করেন।

সে সময় ২০০৫ সালে তার সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছে রব রিসের। রব রিসের বাড়িটি কিনতে চেয়েছিলেন সুজন। তার মনে আছে, সুজন ছিলেন একজন শান্ত এবং কর্মঠ লোক, তবে তার হাতে তেমন টাকা-পয়সা ছিল না। তার স্ত্রীর সে সময়ই বাংলাদেশ থেকে আসার কথা, এবং তার জন্য তিনি একটি বাড়ি কিনতে চাইছিলেন, কিন্তু ব্যাংকের ঋণ নেবার জন্য যে ডিপোজিট তা কোনোমতে যোগাড় করেছিলেন তিনি।

রিস বলছিলেন, তার কাছে মনে হয়েছিল সুজন যেন কি করবেন তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু কয়েক বছরে মধ্যেই সুজনের ভাগ্য পরিবর্তিত হয়ে যায়। তিনি আইব্যাকস নামে তার নিজের একটি আইটি কোম্পানি খোলেন, ওয়েলস বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সে যোগ দেন, অন্য ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বাংলাদেশ সফরও করেন।

এক পর্যায়ে সুজনের ভাই আতাউল হকও ওয়েলসে চলে আসেন তার সঙ্গে থাকতে, এবং দুজনে মিলে তাদের ব্যবসা চালাতে থাকেন। তাদের কোম্পানিটি মূলত এশিয়ান খাবার দোকানগুলোর জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করতো, বিভিন্ন দক্ষিণ এশীয় রেস্তোরার জন্য বিল পরিশোধ করার মেশিন চীন থেকে আমদানি করে সরবরাহ করতো। তাদের ব্যবসায় পার্টনার না হয়েও জড়িত ছিলেন আরেকজন - যার নাম আবদুল সামাদ।

আবদুল সামাদও বাংলাদেশী পরিবারের সন্তান - কিন্তু তার জন্ম এবং লেখাপড়া ওয়েলসেই। তিনিও ছিলেন একজন স্থানীয় কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ -এবং সুজনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এটা এমন এক সময় যখন ব্রিটেনের অন্য অনেক শহরের মতো কার্ডিফেও উগ্রপন্থায় দীক্ষিত মুসলিম তরুণদের নিয়ে এক সমস্যা তৈরি হয়। এরা ছিলেন বিভিন্ন দেশ থেকে ব্রিটেনে আসা পরিবারের সন্তান। তরা বৈশ্বিক 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিলেন এবং ইসলামিক স্টেটের বিকৃত ও গোঁড়া ব্যাখ্যার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছিলেন।

কার্ডিফ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক জিহাদের 'পোস্টার বয়ে' পরিণত হয়েছিলেন নাসের মুথানা, আর রেয়াদ খান। তাদেরকে দেখা গেল আইএসের ভিডিওতে উপস্থিত হয়ে ইরাক ও সিরিয়ার ভূখণ্ডে প্রতিষ্ঠিত আইসিসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে। কার্ডিফের বাংলাদেশী কমিউনিটির চোখে সুজন ধর্মীয় দিক থেকে তেমন রক্ষণশীল ছিলেন না, তার কথাবার্তাতেও জিহাদি-সমর্থক ইসলামী প্রচারকদের মত কোনো কিছু শোনা যায় নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads