তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানান তিনি। দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী সাদ শেরিদা আল কাবি স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার এ ঘোষণা দিয়েছেন। সিএনএন ও আল জাজিরার খবর।
কাতার পেট্রোলিয়ামের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টেও দেওয়া এক পোস্টের মাধ্যমেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কাতার পেট্রোলিয়াম জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ওপেককে কাতারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানিমন্ত্রী সাদ শেরিদা আল কাবি জানিয়েছেন, জ্বালানি উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে কাতার। দেশটি তার প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিবছর ৭৭ মিলিয়ন টন থেকে বাড়িয়ে ১১০ মিলিয়ন টন করতে চায়। এ ছাড়া ভবিষ্যতের আরো কিছু উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার হিসেবে বিশ্বের অন্যতম প্রধান তরল গ্যাস রফতানিকারক দেশ কাতার। বৈশ্বিক মোট তরল গ্যাস বাণিজ্যের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ তরল গ্যাস রফতানি করে থাকে কাতার নিজেই।
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আসন্ন ওপেক সম্মেলনের আগে সংস্থাটি ত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিল কাতার। আগামী ৬ ডিসেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১৭ সালের ৫ জুন সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধের ঘটনায় সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটে জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। কেননা, বিশ্বের শীর্ষ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানিকারক দেশ কাতার। মাথাপিছু আয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৬০ মার্কিন ডলার, যা দেশটিকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী দেশে পরিণত করেছে।
২০১৭ সাল থেকে কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে আরব উপসাগরীয় দেশ কাতার। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে কাতরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়। ওপেক গোষ্ঠী থেকে কাতারের বেরিয়ে আসার পেছনে এটিই অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে তেলের মূল্য ছিল ব্যারেল প্রতি ৮৬ ডলার যা পরবর্তীতে ৬০ ডলারে নেমে আসে। এ কারণেই ওপেক সদস্যভুক্ত দেশগুলো ও রাশিয়া তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে তেলের দরপতন না হয়। কিন্তু কাতার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারেনি। বৈশ্বিক তেলের বাজার ওপেকের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এর আগে, ২০০৮ সালে ইন্দোনেশিয়া ওপেক থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। তেল রফতানিকারক শীর্ষ ১৫টি দেশ নিয়ে ওপেক গঠিত। ওপেকভুক্ত প্রধান দেশগুলো হলো, আলজেরিয়া, ইরাক, ইরান, কাতার, ভেনেজুয়েলা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও সৌদি আরব। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত ওপেকের সদরদফতর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়। প্রতিষ্ঠার এক বছর পরই কাতার এতে যোগদান করে।