• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাদেশি নিহতের সংখ্যা ৮ হতে পারে

ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশি নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮ হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশ

বাংলাদেশি নিহতের সংখ্যা ৮ হতে পারে

মরদেহ হস্তান্তর শুরু, যেতে পারবেন এক স্বজন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০১৯

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। এর আগে গতকাল সকালে চারজনের মৃত্যুর কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। এছাড়া নিহত প্রত্যেকের পরিবারের একজন করে সদস্যকে নিউজিল্যান্ডে নেওয়ার ব্যবস্থা দেশটির সরকার কবরে বলে জানান তিনি।

এদিকে গত শুক্রবারের ওই নারকীয় ঘটনায় আহত একজন হাসপাতালে মারা গেছেন। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৫০ জনে দাঁড়াল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত চার বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও দুজনের তথ্য নিশ্চিত করে জানা গেছে। তারা হলেন স্থানীয় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ এবং গৃহিণী হোসনে আরা ফরিদ। অপর দুজন নিহতের তথ্য স্থানীয় কমিউনিটির মাধ্যমে জেনেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ ওমর ফারুক ও চাঁদপুরের মোজাম্মেল হক। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট আয়োজিত এক সেমিনারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুখবর হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সদস্যরা ভালোমতো দেশে ফিরে এসেছেন। আর খারাপ খবর হচ্ছে মৃত্যের সংখ্যা বাড়তে পারে। নিহতের সংখ্যা বেড়ে কত দাঁড়িয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছি এটা বেড়ে আট হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনো আমাদের মিশন নিশ্চিত করতে পারেনি।

মিশনের কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাব আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ধরনের সমন্বয়ের অভাব নেই। তবে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে মিশন তথ্য দিতে পারে না। তাই দেরি হচ্ছে।

যেতে পারবেন একজন স্বজন : তার আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, নিউজিল্যান্ড সরকারের তরফ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে- যারা বাংলাদেশ থেকে যাবেন, তারা স্বজনের মরদেহ নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। ময়নাতদন্ত ও পরিচয় শনাক্ত করার কাজ শেষে রোববারই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন।

লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কৃষিবিদ সামাদকে তার পরিবার ক্রাইস্টচার্চেই দাফন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে তার বড় ছেলে সেখানে যাবেন।

এদিকে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান জানান, আহত অবস্থায় যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদের মধ্যে লিপি নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার আরেক দফা অস্ত্রোপচার করা হতে পারে। তবে পায়ে গুলিবিদ্ধ মুতাসসিম ও শেখ হাসান রুবেল এখন শঙ্কামুক্ত।

হিমশিম অবস্থা হাসপাতালে : এদিকে দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড জানিয়েছে, শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলার ঘটনায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে দেশটি। হাসপাতালগুলোয় এতসংখ্যক আহত ব্যক্তির চিকিৎসার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এখন সেখানে রাতদিন চিকিৎসক, নার্স যুদ্ধ করছেন আহত ব্যক্তিদের বাঁচাতে।

রোববার আহত ৩৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অ্যালিন আলসাতি নামে চার বছরের এক মেয়েশিশুকে অকল্যান্ডের শিশু হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের প্রধান শল্যচিকিৎসক গ্রেগ রবার্টসন শুক্রবারের ভয়াবহ পরিস্থিতিপরবর্তী চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রথমে ব্যক্তিগত গাড়ি ও পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন আহত রক্তাক্ত ব্যক্তিদের আনা হচ্ছিল, তখন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীরা ‘আতঙ্কিত, স্তব্ধ, ক্ষুব্ধ’ হয়ে পড়েন।

রবার্টসন জানান, এর আগেও গুলির আঘাতের অস্ত্রোপচার তারা করেছেন। তবে এত ব্যাপকসংখ্যক কখনো করেননি। অনেকের দেহে একাধিক গুলি। হাসপাতালে ভর্তি কোনো কোনো আহত ব্যক্তির একাধিকবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অঙ্গহানি থেকে বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

রবার্টসন বলেন, হাসপাতালে আনার পর মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া যাদের আনা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বেঁচে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

দাফনের প্রস্তুতি : ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহতদের মরদেহ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় হস্তান্তর করা হয় বলে জানান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন ও পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ। নিহতদের দাফনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা দাফনের জন্য নির্ধারিত স্থানে অপেক্ষা করছেন।

ইসলামী আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাজা সম্পন্ন করা উচিত। মূলত কোনোভাবে যেন সেটা ২৪ ঘণ্টা পার না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হয়। কিন্তু মসজিদে নৃশংস হামলার ঘটনার দুই দিন পার হলেও নিহতদের পরিবার এখনো জানে না তাদের কাছে কখন মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেছেন, তাদের সদস্যরা প্যাথলজিস্ট ও করোনারিদের সঙ্গে লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে কাজ করছেন। তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। যত দ্রুত সম্ভব মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেছেন, রোববার সন্ধ্যা থেকে অল্পসংখ্যক মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আমরা আশা করছি আগামী বুধবারের মধ্যে সব মরদেহ নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।

ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সংগঠন ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের আহ্বানে আগামী ২২ মার্চ ইস্তাম্বুলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল রোববার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি ওআইসির ওই বৈঠকের ব্যাপারে বলেন, ‘ইসলাম বিদ্বেষের লাগাম টানতে কৌশলগত করণীয় নির্ধারণ ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে এই বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেনটন ট্যারেন্ট বন্দুক হামলা চালায়। এতে ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো অন্তত ৪৯ জন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা এই হামলাকে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads