• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল

সংগৃহীত ছবি

বিদেশ

করোনা ভাইরাস

মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল

মারাত্মক খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে

  • মোমেনা আক্তার পপি
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০২০

করোনা মহামারীতে স্তব্ধ বিশ্ব। লকডাউনের কারণে গৃহবন্দি শত শত কোটি মানুষ। থেমে গেছে কলকারখানার চাকা। বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রথম এবং প্রধান উপকরণ-খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে আরো মারাত্মক আকারে। লকডাউনের কারণে মানুষ ক্ষেত-খামারে যেতে পারছে না। বন্ধ হয়ে গেছে খাদ্য উৎপাদন। করোনায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত যে হারে বাড়ছে তাতে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। ঘরে বসে থাকলে উৎপাদন বন্ধ, ঘর থেকে বের হলে ভাইরাস সংক্রমের আশঙ্কা-উভয় সংকটে রয়েছে মানুষ। দিন দিন ফুরিয়ে আসছে মজুত করা খাদ্যের। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই ঘোলাটে। ইতোমধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী অন্তত অর্ধলাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত প্রায় ১০ লাখ।  

বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলো থেকে শুরু করে দরিদ্র-এমন কোনো দেশই নেই যেখানে করোনা ছোবল দেয়নি। কবে এ থেকে পরিত্রাণ মিলবে তা কেউ বলতে পারছে না। এখনো কোভিড-১৯  রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গনাইজেশনের (হু) মতে, আরো ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে। ততদিনে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। একদিকে ভাইরাসের সংক্রমণ অন্যদিকে খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর মিছিল বাড়তেই থাকবে। এর সঙ্গে বাড়তে থাকবে লুটপাট, রাহাজানি। অপরাধী চক্রগুলো তৎপর হয়ে উঠবে। অনাহারে থাকা মানুষগুলো তাদের কাছে গিয়ে ভিড়বে। যা বিশ্ববাসীর জন্য খুবই খারাপ পরিণতি বয়ে আনবে।    

একসময় বিজ্ঞানীরা করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে হয়তো এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে। মহামারী সংকট যদি যথাযথ উপায়ে মোকাবিলা করা না যায় এবং ওই সময় পর্যন্ত যদি খাদ্য উৎপাদন বন্ধ থাকে তাহলে খাদ্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের তিন অঙ্গসংগঠন। বুধবার ওই তিন সংস্থার প্রধানের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী হলেন জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএডব্লিউ) কু দোংগিউ, হুর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রয়সেস এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউটিও) পরিচালক রবার্টো আজেভেদো। যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, রপ্তানির ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ার কারণে খাদ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, যা বিশ্ব বাজারে খাদ্যের ঘাটতি তৈরি করবে।

বিশ্বজুড়ে লকডাউন পরিস্থিতির এই মাঝ পর্যায়ে প্রতিটি পদক্ষেপ এমনভাবে নিতে হবে, যেন বিশ্ব বাণিজ্য যতটা সম্ভব মুক্তভাবে চলতে পারে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের যে সংকট তৈরি হচ্ছে তা এড়ানোর জন্য হলেও এটা করতে হবে। খাদ্য সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখন লকডডাউন। ভাইরাসের বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও খাদ্য সরবরাহের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া আতঙ্কিত মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে মজুত করায় অনেক দেশে খাবারের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ইতালিতে লকডাউনের শুরুর দিকে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তেমন ভর করতে পারেনি। বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তারা বাজাতো সংহতির সুর। জানান দিত নিজের অস্তিত্বের। ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’-এমন আশায় বুক বেঁধে একসঙ্গে তারা গাইতো গান। তবে লকডাউনের তিন সপ্তাহ পার হতে না হতেই বদলে গেছে পরিস্থিতি। দারিদ্র্য জেঁকে বসতে শুরু করেছে সেখানে। আওয়াজ তুলেছে বেসুর ক্ষুধা। বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। গান থেমে গেছে। দেশটির কিছু অংশে, বিশেষত দক্ষিণের দরিদ্র এলাকাগুলোতে বেড়েছে সহিংসতা। মানুষ এখন উপলব্ধি করছে সবকিছু ঠিক নেই। নাপোলিস শহরের কারিতাস দিওচেসানা দি নাপোলির ধর্মযাজক সালভাতোরে মেলুসো বলেন, মানুষ এখন আর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গান গায় না, নাচে না। তারা ভীত হয়ে উঠছে। এ ভীতির কারণ ভাইরাস নয়, বরং দারিদ্র্যের ভয় তাদের মনে বাসা বেঁধেছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা ক্ষুধার্ত- ফুড ব্যাংকগুলোর সামনে এখন দীর্ঘ সারি।

উত্তরাঞ্চলের তুলনায় ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে ভাইরাসজনিত মৃত্যুর হার কম। তার পরও সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর করোনাজনিত মহামারীর গুরুতর প্রভাব পড়ছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা কাম্পানিয়া, কালাব্রিয়া, সিসিলি ও পুগলিয়ার মানুষ খাদ্য ও অর্থ সংকটে পড়ছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার জন্য ছোট দোকান মালিকদের চাপ দিচ্ছে। সুপার মার্কেটে চুরি ঠেকাতে টহল দিচ্ছে পুলিশ। স্বনির্ভর কিংবা চুক্তিভিত্তিক কাজ করা মানুষদের উপার্জন বন্ধ। ফুরিয়ে আসছে সঞ্চয়। সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা আর কখনো চালু হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাস্যিমিলিয়ানো পানারারি বলেন, লকডাউনের শুরুর দিকে মানুষের মনোবল ছিল। কিন্তু যতই দিন গড়াচ্ছে তারা হতাশ হয়ে পড়ছে। প্রচণ্ড রকমের ভঙ্গুরদশায় থাকা দেশের তিক্ত বাস্তবতা নিয়ে ভাবছে তারা। কাতানিয়ার মেয়র সালভো পোগলিয়েসে বলেন, পরিস্থিতি  বেশ নাজুক। জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ একেবারেই আয়-উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে। আগে একসময় যারা সম্মানের সঙ্গে বাস করতো তারা এখন দুর্দশার মধ্যে আছে। বিভিন্ন অপরাধীচক্র আবার পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে বলেও আভাস মিলেছে। ফেসবুকে ন্যাশনাল  রেভ্যুলেশন নামে একটি গ্রুপ জনগণকে সুপার মার্কেট লুটপাট করার উসকানি দিচ্ছে। ইতালির সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ স্কোয়াড ডিগোসের সিসিলি ইউনিটের মতে, এ চক্রের পেছনে এমন মানুষরা কাজ করছে যারা লকডাউনের আগে বাড়িতে বাড়িতে ডাকাতি ও দোকানে চুরি করে বেড়াত। কিন্তু লকডাউনের কারণে অনেক দোকান বন্ধ থাকায় এসব অপরাধ করতে পারছে না। এখন তারা ডাকাতির জন্য সুপার শপ বেছে নিচ্ছে। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে মাফিয়া গোষ্ঠীগুলো মানুষকে নিজেদের সংগঠনের দিকে প্রলোভিত করতে পারে বলেও শঙ্কা করা হচ্ছে। লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক গিওভান্নি ওরসিনা বলেন, অপরাধ সংগঠনগুলোর প্রচুর টাকা আছে। অভাবে লোকজন নিরুপায় হয়ে তাদের জন্য কাজ শুরু করলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে তারা যদি একবার অপরাধী সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় তাদের আর সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনা যাবে না।

২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ৪৭ হাজার ২৭৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছে ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৩ জন মানুষ। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪০৫ জন মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়ার্ল্ড ওমিটারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তের সংখ্যায় অনেক আগেই চীনকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪৯ জন মানুষের। এখন পর্যন্ত এটাই যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০২। আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ১৬ হাজার ৭২১ জনে দাঁড়িয়েছে।

মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে শুধু ইতালি (১৩ হাজার ১৫৫ জন) ও স্পেন (১০ হাজার ৩ জন)। তবে আক্রান্তের সংখ্যায় সবার ওপরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় সবচেয়ে বেশি ভুগছে নিউইয়র্ক। দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীই এ অঙ্গরাজ্যের। বুধবার এ অঞ্চলে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯১৭ জন। নিউজার্সিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার মানুষ, মারা গেছেন ২৬৭ জন।

উপসর্গ ছাড়াই হচ্ছে আক্রান্ত : উপসর্গ ছাড়াই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চীন জানিয়েছে, কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়াই বুধবার দেশটিতে ১৩০ জনকে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত করেছে তারা। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছিল, আক্রান্ত অনেকের দেহে করোনার উপসর্গ দেখা যায়নি। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, দেশটিতে উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্ত মোট ১ হাজার ৩৬৭ জনকে শনাক্ত করা গেছে। চিকিৎকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তারা। সোমবার করোনার লক্ষণহীন বা উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৪১ জন। তাদের মধ্যে ২০৫ জনই বাইরে থেকে এ ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসে। ৩০২ জন চিকিৎসাধীন কিংবা পর্যবেক্ষণে নেই। তাই তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ওয়েনহোং বলেন, এ পর্যন্ত যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ১৮ থেকে ৩১ শতাংশের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগের কোনো লক্ষণই ধরা পড়েনি। তবে তিনি জানান, উপসর্গহীন রোগীদের থেকে ব্যাপক হারে কমিউনিটিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম।

স্পেনে মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়াল : স্পেনে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৮ শতাধিক ছাড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৯৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ২৩৮ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার তিনজনের। এদিকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৯ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দেশটির অর্থনীতিতে কোপ পড়ার এটি আরেকটি লক্ষণ। মার্চ মাসেই স্পেনে বেকারত্বের সংখ্যা এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশিতে দাঁড়িয়েছে। ইউরোজোনেও স্পেনে কর্মহীনের সংখ্যা এখন সর্বোচ্চ। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই স্পেনে লকডাউন চলছে। বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য। তার পরও দেশটিতে ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকার পাশাপাশি অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হচ্ছে। দেশটিতে লকডাউনের শুরু থেকে ৮ লাখ ৯৮ হাজর ৮২২ জন মানুষ চাকরি হারিয়েছে। এর মধ্যে আছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ অস্থায়ী কর্মী। সরকারি হিসাবে স্পেনে বেকারত্বের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ। অর্থাৎ এক মাসেই বেকারত্বের হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

এশিয়ার বৃহত্তম বস্তিতে করোনা : ভাইরাস হানা দিয়েছে ভারতের বাণিজ্যিক শহর মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তিতে। এশিয়ার বৃহত্তম এ বস্তিতে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন একজন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বস্তির আটটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ৬১৩ একর জমির ওপর ছড়িয়ে থাকা এ বস্তিতে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এককথায় অসম্ভব। সেখানে করোনার বিস্তার ঠেকানো না গেলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা বলাই বাহুল্য। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যুসহ  ভাইরাসের সংক্রমণে ভারতে এখন পর্যন্ত ৫০ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরো ৩২৮ জন। এ নিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৯৬৫ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫১ জন।

দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ : করোনা প্রতিরোধে ফিলিপাইনের সবচেয়ে বড় দ্বীপ লুজানে মাসব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু অনেকে তা মানছেনই না। তাই দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে দেশটির পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, যারাই বাড়ির বাইরে বের হয়ে সমস্যা তৈরি করবে, তাদেরকে যেন দেখামাত্রই গুলি করা হয়। বুধবার শেষরাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে দুতার্তে বলেন, সবার জন্য এটা একটা সতর্কতা। বর্তমানের এ সংকটকালে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তা না হলে ভাইরাসটি প্রতিরোধে করা যাবে না। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো ধরনের ক্ষতি করবেন না। কারণ এটা হলো একটা মারাত্মক অপরাধ। আমি পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছি, যদি কেউ বাড়ির বাইরে বের হয়ে সমস্যার তৈরি করে এবং তাদের জীবন ঝুঁকিতে থাকে তাহলে তাদেরকে দেখামাত্রই গুলি করুন।

৩৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই : ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ আনুমানিক ৩৬ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। করোনার কারণে ব্যবসা বিপুল লোকসানের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। মহামারী ভাইরাসের কারণে বেশির ভাগ বিমান বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। তাই এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তারা ইউনিট ইউনিয়নের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। দুই পক্ষের সম্মতিতেই এমন ঘোষণা আসছে যাচ্ছে। তবে দুই পক্ষ এমন একটি সিদ্ধান্বেত উপনীত হলেও এখনো এ-সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়াবলীর খুটিনাটি চূড়ান্ত না হওয়ায় তা স্বাক্ষর হতে বিলম্ব হচ্ছে। সিদ্ধান্তটি কার্যকর হওয়ার মানে দাঁড়াচ্ছে সংস্থাটির ৮০ শতাংশ কর্মীই চাকরিচ্যুত হচ্ছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এ সিদ্ধান্ত দেশটির গ্যাটউইক ও লন্ডন বিমানবন্দরের সব কর্মীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। যারা চাকরি হারাচ্ছেন তারা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া স্কিমের আওতায় কিছু ক্ষতিপূরণ পাবেন। যা সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ ইউরো। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ইউনিট ইউনিয়ন এর চেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ইতোমধ্যে তাদের পাইলটদের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছে। ওই চুক্তির আওতায় দুই মাস পাইলটদের বেতনের অর্ধেক কর্তন করা হবে।

দেড় মাসের শিশুর মৃত্যু : করোনা ভাইরাসে বয়স্করাই সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছেন। তবে তরুণরাও ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে সতর্ক করেছে হু। এবার আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র দেড় মাস বয়সী এক শিশু করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। বুধবার কানেকটিকাটের গভর্নর নেড ল্যামন্ট এক টুইটে জানান, গত সপ্তাহে হার্টফোর্ড এলাকায় ছয় সপ্তাহ বয়সী অসুস্থ এক শিশুকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। অনেক দেরি করে নেয়ায় তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটি করোনা পজিটিভ ছিল। গভর্নর বলেন, এটি খুবই হূদয়বিদারক। আমাদের বিশ্বাস, এখন পর্যন্ত যেকোনো জায়গায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে কম বয়সীর প্রাণহানি এটাই। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সরকারি সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বেইংজিংয়ের হিসাব সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতির চেয়ে ভালো দেখাচ্ছে বুধবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads