• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

শাজাহান সিরাজ

বাংলাদেশ

স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস আজ

  • আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ০৩ মার্চ ২০১৮

বিশেষ প্রতিনিধি 

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ছাত্র জনসভায় আকস্মিকভাবে উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ সভায় বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সেদিনই সভা থেকে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ গ্রহণ করেন।

ইশতেহার পাঠ ও জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন

ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

ইশতেহারে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচিত করা হয়।

এদিনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে তার বক্তব্যে অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। এ দিনই বাংলার মাটি শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৭১ জন নিহত হয়। সারা দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।

একাত্তরের ১ মার্চ থেকেই পুরো বাঙালি জাতির দৃষ্টি ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু কী ঘোষণা দেন সেদিকে। আর পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনা নয়; চাই মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। এ মুক্তির প্রত্যাশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে গঠিত হতে থাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ। গোপনে চলে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি। এসব সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে যোগ দিতে থাকে মুক্তির স্বপ্নে বিভোর দেশের তরতাজা বাঙালি যুবকরা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পেলেই দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতে যেকোনো আত্মত্যাগে প্রস্তুতি নিতে থাকে তারা।

  ইশতেহারের মূল বিষয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলো, সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে  মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হবেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান নেতা; গাঢ সবুজের জমিনের উপর লাল সূর্য এবং লাল সূর্যের উপর বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্র সংবলিত জাতীয় পতাকা; জাতীয় সঙ্গীত হবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’; গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি; বাংলাদেশেদের মানচিত্র অনুযায়ী ৫৪০০০ বর্গমাইলে এ দেশকে শত্রুমুক্ত করতে হবে; সশস্ত্র বাহিনীর সব বাঙালি সেনাদের, ইপিআর পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জনগণের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে; শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, গায়ক-গায়িকা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে সংগ্রাম কমিটি করাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি; এই ইশতেহারের মধ্য দিয়ে কেবল স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মসূচি ঘোষণা হয়নি বরং প্রতিটি বিষয়ে পল্টন ময়দানে উপস্থিত লাখ লাখ জনতা হাত তুলে সমর্থন অনুমোদন দেন।

ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। স্মৃতিচারণ করবেন স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক স্বাধীন বাংলা ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা শাজাহান সিরাজ। প্রধান অতিথি হিসেবে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দেবেন ডাকসুর তৎকালীন ভিপি ও  প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম আবদুর রব। আলোচনায় অংশ নেবেন গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করবেন স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads