• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

বাংলাদেশ

আহত অধ্যাপক জাফর ইকবালঃ সর্বশেষ পরিস্থিতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০১৮

আটক হামলাকারীর চাচা ও মামা

লেখক-শিক্ষাবিদ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারী ফয়জুলের ৫৫ বছর বয়সী চাচা আবুল কাহার লুলইকে দিরাই উপজেলার কলিয়ার কাপন থেকে আটক করেছে র‍্যাব-৯ । উল্লেখ্য, এই স্থানেই ফয়জুলের স্থায়ী ঠিকানা।

সুনামগঞ্জের দিরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‍্যাব সদস্যরা তাকে আটক করেছেন। এর আগে হামলাকারী ফয়জুরের মামা ফজলুর রহমানকে সিলেট থেকে আটক করা হয়।

শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে পেছন থেকে অধ্যাপক জাফর ইকবালের মাথায় ছুরিকাঘাত করেন আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী ওই যুবক। পরে শিক্ষার্থীরা গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

জাফর ইকবালের শরীরে ছয় আঘাত

হামলায় আহত অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের শরীরে মোট ছয়টি আঘাত থাকলেও তিনি এখন শঙ্কামুক্ত- আজ রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পক্ষ থেকে চিকিৎসকেরা সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

জাফর ইকবালের স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি নিয়ে বেলা ১১টায় সিএমএইচের প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সিএমএইচের কনসালট্যান্ট সার্জন মেজর জেনারেল মুন্সী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অধ্যাপক জাফর ইকবালের মাথায় চারটি, পিঠের ওপরে ও বাঁ হাতে একটি করে আঘাত আছে। সব মিলিয়ে তাঁর শরীরে মোট ছয়টি আঘাত আছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তাঁর মানসিক অবস্থাও ভালো।‘

মুন্সী মুজিবুর রহমান বলেন, অধ্যাপক জাফর ইকবালের চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সংক্রমণ রোধে এবং দ্রুত আরোগ্যের জন্য এখন তাঁর কাছে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ‘তিনি মানসিকভাবে  দৃঢ় আছেন এবং পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন। আজ সকালে তরল খাবার দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে তার কয়েক দিন লাগবে।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ, সিএমএইচের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, চিফ সার্জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

অভিযোগ দায়ের

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন নগরের জালালাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঐ অভিযোগে বলা হয়েছে, ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল নামের এক যুবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করেন।

জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ দায়ের হয়েছে, এখনো মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। তদন্ত চলছে। অভিযোগে অজ্ঞাত একজনকে আসামি করা হয়েছে।

দেশবাসীর দোয়াপ্রার্থী আহত অধ্যাপকের স্ত্রী

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বর্তমানে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি আছেন। তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।

রোববার সকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইয়াসমিন হক। এ সময় তিনি দেশবাসীর দোয়া চান।

অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সুস্থ আছেন। আশা করছি খুব শিগগিরই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে পারবেন। সকলে তার জন্য দোয়া করবেন যাতে তিনি দ্রুত আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশে গেলেই ভালো চিকিৎসা হবে এটা ঠিক নয়। এখানকার চিকিৎসার ওপর আমাদের পূর্ণাঙ্গ আস্থা আছে। সিএমএইচ ও ওসমানী মেডিকেলের চিকিৎসাসেবায় আমরা অনেক সন্তুষ্ট।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিকভাবে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের খোঁজ খবর রাখায় তাকে ধন্যবাদ জানান ইয়াসমিন হক এবং এ ঘটনায় পুলিশের কোনো ব্যর্থতা আছে বলে মনে করেন না তিনি।

ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘জাফর ইকবাল আহত হওয়ায় পরই আমাকে ফোন দিয়েছেন। বলেছেন, টিভিতে স্ক্রল দেখে উদ্বিগ্ন হয়ো না, আমি ভালো আছি। তুমি ছাত্রদের বলো যেন ছুরিকাঘাতকারীকে মেরে না ফেলে। আর ছাত্রদের বলো যেন শান্ত থাকে।’

এ ঘটনায় গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসাও করেন ড. ইয়াসমিন হক।

ঘটনার বৃত্তান্ত

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সাবেক ডিন প্রফেসর ড. আ ক ম মাহবুবুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মাগরিবের আজান চলাকালে এ হামলা চালানো হয়। তিনি ছাত্রছাত্রীদের নির্মিতি রোবট দেখছিলেন। আক্রমনকারী পেছন থেকে এসে তাকে আঘাত করে। এ সময় তাকে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বে সেখানে চারজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। তাদের সামনেই এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পালানোর সময় পুলিশ ও ছাত্ররা হামলাকারীকে ধরে বেদম পিটুনি দেয়।

এ ঘটনায় পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলাকারীর চক্রের অন্যান্য সদস্যকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সক্রিয় আছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads