• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু-১, স্যাটেলাইট, স্পেসএক্স, নাসা,

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশে ছুটে যাচ্ছে স্পেসএক্সের রকেট ফ্যালকন ৯ (ব্লক ৫)

ছবি : স্পেসএক্স

বাংলাদেশ

সংবাদ ভাষ্য

শাবাশ বাংলাদেশ শাবাশ

  • আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত ১৪ মে ২০১৮

আরেকবার প্রমাণিত হলো, বাঙালি বীরের জাতি। আমাদের শৌর্য-বীর্য, অহঙ্কার ও আত্মবিশ্বাস আজ মহাকাশ ছুঁয়েছে। যে জাতি অসীমের পানে তার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে জানে, সে জাতিকে কোনো ক্ষুদ্র গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখা যায় না। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এই চিরন্তন সত্যকে আরেকবার প্রতিষ্ঠিত করল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘যে জাতি স্বপ্ন দেখতে জানে না, সে জাতি কখনো বড় হতে পারে না।’ জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্নের দিগন্তকে মহাকাশের দিকে বিস্তৃত করতে পেরেছিলেন বলেই জাতি আজ এই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছতে পেরেছে। স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আজ একদা দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশ বিশ্বের গর্বিত দেশসমূহের কাতারে তার যোগ্য স্থান করে নিয়েছে। আমরাও আজ বিশ্বের এলিট ক্লাবের গর্বিত সদস্য।

এমন মহান বিজয় অর্জনের জন্য যে দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা ও আত্মবিশ্বাস থাকার প্রয়োজন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সেই বিচক্ষণতা ছিল বলেই আজ জাতি এই অত্যুজ্জ্বল সাফল্যের অধিকারী হয়েছে। আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের মনে পড়ে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কথা। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ অজস্র সমস্যায় জর্জরিত। চরম অর্থকষ্ট। পাকিস্তানি বর্বর সেনাদের পোড়ামাটি নীতির পরিণামে ফেলে যাওয়া বিধ্বস্ত দেশ, ১ কোটি বসতবাড়ি থেকে বিতাড়িত মানুষের পুনর্বাসনের বিশাল চ্যালেঞ্জ, ৭ কোটি মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা প্রভৃতি অত্যাবশ্যকীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশিও জাতির জনক ভোলেননি- দেশকে অগ্রগতির মহান সোপানে নিয়ে যেতে হবে, জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে হবে। এ কথা ভেবেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন ভূ-উপগ্রহের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বাস্তবায়নের। স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান পরীক্ষিত বন্ধু তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় তিনি বাস্তবায়ন করেছিলেন বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ। আর তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রতিস্থাপনের। ফ্রান্সে নির্মিত সাড়ে তিন হাজার কেজি ওজনের এই উপগ্রহটি রাশিয়ার কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া কক্ষপথে প্রতিস্থাপন করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। বিশ্বের অন্যতম এই তিন রাষ্ট্রের সহায়তায় শেখ হাসিনার প্রিয় সন্তান ও প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সরকার এই বিরল স্বপ্নের ঠিকানা প্রতিষ্ঠিত করে মহাকাশে।

সরকারের যদি দূরদর্শিতার অভাব থাকে, প্রজ্ঞার ঘাটতি থাকে কিংবা মহৎ স্বপ্ন দেখার মানসিকতা না থাকে তবে জাতি কোনো বিরাট কিছু অর্জন করতে পারে না- এই সত্যটি আমরা বাঙালিরা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমাদের বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বঙ্গোপসাগরের তলদেশ দিয়ে যখন সাইবার ক্যাবল প্রতিস্থাপিত হচ্ছিল তখন বাংলাদেশের জন্য সুযোগ এসেছিল বিনামূল্যে সেই সুযোগ গ্রহণ করে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নয়নের মহাসোপানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু তৎকালীন সরকার তার কূপমণ্ডূকতার কারণে দূরদর্শিতার অভাবে, প্রজ্ঞার অভাবে সেই সুযোগ থেকে জাতিকে বঞ্চিত করেছে। সেই অজ্ঞ সরকার বলেছিল, সাইবার ক্যাবলের সঙ্গে দেশকে সংযুক্ত করলে অনেক গোপন সংবাদ বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাই এই কর্মসূচির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এহেন নির্বুদ্ধিতার কারণে দেশকে এক বিরাট সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক বিস্ফোরণের যুগে দেশকে রাখা হয়েছে ঘোর অন্ধকারের নিগড়ে। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসলে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশকে সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত করে জাতিকে উন্নত ও আধুনিক যোগাযোগ ধারায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তেমনি করে যখন ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় তখন সেই কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে নিখরচায় সংযোজিত করার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকারের দূরদর্শিতার অভাবে সেই মহা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। তখন সেই সরকারের বশংবদ একশ্রেণির ভারতবিদ্বেষী মহল প্রচারণা করেছিল, ভারতের উপর দিয়ে চলে আসা এই ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে বাংলাদেশের যোগ দেওয়া ভালো হবে না। তারা বুদ্ধি দিয়েছিল, চীনের কুনমিং হয়ে মিয়ানমারের উপর দিয়ে চলে আসা পথ ধরেই বাংলাদেশকে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে। এমনি অদ্ভুত চিন্তাধারার খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। যখন এশিয়ার মানুষ ট্রেনে করে ইরান, ইরাক, তুরস্ক, তুর্কমিনিস্তান প্রমুখ দেশে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করবে তখন বাংলাদেশের মানুষেরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তবে, আমরা আশায় থাকব, শেখ হাসিনা সরকার অবশ্যই ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযুক্তির বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যখন নাসার জন এফ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইটটির সফল উৎক্ষেপণ হয়- টেলিভিশনের সামনে বসে সেই দৃশ্য দেখে হঠাৎ নিজেকে অনেক বড় মাপের মানুষ বলে মনে হলো। মনে হলো, এই বুঝি আমাদের মাথা ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশের সঙ্গে মিশবে। আনন্দ-উদ্বেল চিত্তে সেই দৃশ্য দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল— একদা তলাবিহীন ঝুড়ি বলে যে দেশকে বিদ্রূপ করা হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে এই অবিস্মরণীয় বিজয়মালা ছিনিয়ে এনেছে। এমন মনের অবস্থা শুধু আমারই ছিল না, কোটি কোটি দেশপ্রেমী বাঙালি- আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা দলমত নির্বিশেষে সকলের হূদয়েই এমন আত্মতুষ্টি ও অহঙ্কারের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ আজ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি, দারিদ্র্যের শিকল ভেঙে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদাই লাভ করেনি- শিল্পে, শিক্ষায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে এমনকি খেলাধুলায়ও আজ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সাহস সঞ্চয় করেছে। শাবাশ বাংলাদেশ, শাবাশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads