• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিনা খরচে হজে যেতে তদবির

হজ যাত্রীদের একাংশ

পুরোনো ছবি

বাংলাদেশ

বিনা খরচে হজে যেতে তদবির

  • কামাল মোশারেফ
  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০১৮

হজ যত এগিয়ে আসছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রশাসনিক দল, চিকিৎসক দল ও হাজীদের সহায়তাকারী হিসেবে সৌদি আরবে যেতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। তদবির আসছে মন্ত্রী-সংসদ সদস্য-সচিবদের নিজ নিজ পছন্দের লোকজনকে সরকারি খরচে হজে পাঠাতে। এরই মধ্যে প্রশাসনিক ও চিকিৎসক দলের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অন্যান্য ক্যাটাগরির তালিকা তৈরির কাজ চলছে। অভিযোগ আছে, হজযাত্রীদের সেবার নামে সৌদি আরবে যাওয়া এই প্রতিনিধিদলের অনেক সদস্যকে কাজের সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশিরা দিকভ্রান্ত হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান, অসুস্থ হয়ে ছটফট এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত বরণ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ১৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন সৌদি আরবে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বেসরকারিভাবে ১ লাখ ২০ হাজার এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করবেন। তাদের সেবার জন্য সরকারি খরচে প্রায় ৭০০ জন সৌদি আরবে যাবেন। এদের তালিকা চূড়ান্ত করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে আছে হজ প্রতিনিধি, প্রশাসনিক, চিকিৎসক, হজ গাইড ও কারিগরি দল। এ ছাড়া প্রতিবছরই রাষ্ট্রীয় খরচে তিন থেকে সাড়ে তিন শ ব্যক্তির হজের ব্যবস্থা করে সরকার। আর ওই তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সহকারী সচিব থেকে শুরু করে মন্ত্রী-সচিবদের গানম্যান, গাড়িচালক, ডেসপাস রাইডার, পিয়নরাও জোর তদবির চালাচ্ছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বছরও রাষ্ট্রীয় খরচে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে হজ করানো হবে। এরই মধ্যে সেই সৌভাগ্যবানদের নামের তালিকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। অনেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রাজনীতিবিদরা তাদের পছন্দের লোকজনের নাম মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। তবে এখনো ওই তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ হলো ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮ টাকার। সে হিসাবে এদের পেছনে ন্যূনতম খরচ হবে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। পাশাপাশি যাবে আরো ৩৫০ সদস্যের হজ সহায়তা প্রতিনিধিদল। এদের জন্য মাথাপিছু খরচ আরো বেশি। গত বছর রাষ্ট্রীয় খরচে ৩১৮ জন হজে গিয়েছিলেন। একইভাবে ২০১৬ সালে ২৮৩, ২০১৫ সালে ২৬৩, ২০১৪ সালে ১২৪ জন বিনা খরচে হজ করেন। রাষ্ট্রীয় খরচে প্রতিবছরই এভাবে হজে যাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। অভিযোগ রয়েছে, বিনামূল্যে হজ করার ক্ষেত্রে ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার লোকজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সামর্থ্য নেই- এমন ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে অর্থবানদের হজ করানো হয়েছে।

হজ নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং ধর্মমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/উপমন্ত্রী অথবা সরকার কর্তৃক মনোনীত নির্দিষ্ট সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে সর্বনিম্ন প্যাকেজমূল্যে রাষ্ট্রীয় অর্থে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে প্রেরণ করা যাবে।

এ বছর হজ প্রশাসনিক দলের সদস্য সংখ্যা ৫০ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হজ নীতিমালা অনুযায়ী তারা সৌদি আরবে হজ ব্যবস্থাপনা তদারকি, অভিযোগ তদন্ত, সমন্বয় এবং হজযাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করবেন। স্বাস্থ্যসেবা দিতে সৌদি আরব যাচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ সদস্যের চিকিৎসক দল। এতে থাকবেন চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, নার্স, ব্রাদার ও সহায়তাকারী। প্রতিনিধিদের ৬৫ শতাংশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ২১ শতাংশ আর্মি মেডিকেল কোর এবং বাকি ১৪ শতাংশ ইসলামী মিশন থেকে নেওয়া হবে। গত বছর চিকিৎসক দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ৬৬। এ বছর কারিগরি দলে থাকবেন ১০ জন। এ ছাড়া সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধান করতে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে যাবে। তবে এই তালিকায় আরো তিন থেকে চারজন অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। গত বছর এই প্রতিনিধিদলে ১৪ সদস্য ছিলেন। যদিও হজ নীতিমালায় এই প্রতিনিধি সংখ্যা ১০ জন হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে প্রতিবছরই দেখা গেছে হজ প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না হজযাত্রীরা। সময়মতো লোকজনকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক সময় হজ ক্যাম্প তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. আবদুল্লাহ আল নাসের বলেন, সরকার যে উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে পাঠায়, হাজীরা তাদের কাছ থেকে সেই সেবা পান না। অনেক সময় এদের খুঁজে পাওয়া যায় না। দেখা গেছে, অন্য দেশের সেবকরা আমাদের দেশের হাজীদের দেখাশোনা করছেন। অতীতে এরকম বহু ঘটনা ঘটেছে।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, হাজীদের সেবাদানকারী হিসেবে তারা ঠিকই সৌদি আরবে যান, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার এমন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে যান, যারা অসুস্থ হাজীদের সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে অভ্যস্ত নন।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (হজ) মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, হাজীদের সেবা দেওয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন দল পাঠানো হয়ে থাকে। এরই মধ্যে হাজীদের সেবার জন্য চিকিৎসক ও প্রশাসনিক দলের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে বিভিন্ন টিমে এবং রাষ্ট্রীয় খরচে সৌদি আরবে যেতে তদবিরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ নিয়ে তার কিছু জানা নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads