• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
বছরে সাপের ছোবলের শিকার সাত লাখ

হাসপাতালে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় সাপে কাটা রোগীরা

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

বিশ্ব সর্প দিবস আজ

বছরে সাপের ছোবলের শিকার সাত লাখ

· আক্রান্ত বরিশালে বেশি, সিলেটে কম ·  অস্বাভাবিক মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ সাপে কাটা

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০১৮

হাসপাতালে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় সাপে কাটা রোগীরা। সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত প্রতিষেধকের সরবরাহ থাকে না। আবার ওষুধ থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব হওয়ায় তা অব্যবহূত পড়ে থাকছে। সাপের ছোবল খেলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট- আইসিইউ) চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও উপজেলা পর্যায়ের রোগীরা তা পাচ্ছে না। চিকিৎসা না পেয়ে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে অনেকে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিদেশি কয়েকটি সংস্থার জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা মতে, বছরে অন্তত ছয় লাখ মানুষ সাপের ছোবলের শিকার হয়। তাদের মধ্যে মারা যায় ছয় হাজারের বেশি আর চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র ৩ শতাংশ। আক্রান্তের সংখ্যা বরিশালে বেশি, সিলেটে কম। ২০০৯ সালের আগস্টে ওই প্রতিবেদন প্রকাশের প্রায় দশ বছর পর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী বছরে ২৭ লাখ মানুষকে সাপে দংশন করে; মৃত্যু হয় ৫৪ লাখের। বাংলাদেশে বছরে অন্তত সাত লাখ মানুষকে সাপ দংশন করে। চাহিদা অনুযায়ী সরকারি অনেক হাসপাতালে সাপের ছোবল খাওয়া রোগীর চিকিৎসার ওষুধ (অ্যান্টিভেনাম) নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালে ওষুধ না থাকলে বাইরে থেকে তা সংগ্রহ করা রোগীর স্বজনদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। অ্যান্টিভেনাম দোকান থেকে টাকা দিয়ে কেনার উপায় নেই। ওষুধের দোকানে এ ভ্যাকসিন রাখা হয় না। দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করলেও তাদের ২০টি ডিপো ছাড়া তা বিক্রি হয় না। বিভিন্নভাবে তা সংগ্রহ করতে করতে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীদের মধ্যে একটা বড় অংশ হার্ট অ্যাটাকেও মারা যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার, ১৬ জুলাই পালন হবে বিশ্ব সর্প দিবস।

জানা যায়, বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সাপে কাটার ঘটনা ঘটে বেশি। এ সময় বর্ষা ও বন্যায় দেশের আনাচে-কানাচে পানি জমে। অনেক বাড়ির উঠানেও পানি জমে। ফলে নানা ধরনের বিষধর সাপের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় তাই এ সময়ই সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়ে। সাপের ছোবল বেশি খায় গ্রামের মানুষ। চিকিৎসা করাতে চাইলে তাদের প্রথমে যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও জেলা হাসপাতালে। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে চিকিৎসার প্রস্তুতি থাকে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ওষুধ নিয়ে মজুত রাখলেও বিশেষজ্ঞ না থাকায় তা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তবে সাপের ছোবলে মৃত্যুরোধে এখন আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয় বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ। 

জানা গেছে, নড়াইল সদর হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের জন্য ২০১৩ সাল থেকে অ্যান্টিভেনাম দেওয়া শুরু হয়। ২০১৩ সালে ৩০০, ২০১৪ সালে ৩০০, ২০১৫ সালে ১০০, ২০১৬ সালে ১০০ ও ২০১৭ সালে ১০০ অ্যান্টিভেনাম দেওয়া হলেও চিকিৎসক না থাকায় তার একটিও ব্যবহার করা হয়নি। ওই হাসপাতালের এক কর্মকর্তার স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো এক চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অ্যান্টিভেনাম পুশ করার পর রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে আইসিইউতে নিতে হয়। উপজেলা পর্যায়ে এ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক চিকিৎসক রোগীকে চিকিৎসা করাতে চান না।

চিকিৎসা না পেয়ে কোন রোগে আক্রান্তের মৃত্যুর হার কত, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালে একটি জরিপ করে। মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের টাকায় পরিচালিত এ জরিপে, ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ’ হিসেবে বলা হয় সাপের ছোবলকে। মৃত্যুর হার কমাতে ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মহাজোট সরকারের শুরুতে মন্ত্রণালয় এ জরিপ করে। জরিপের ভিত্তিতে অধিকাংশ বিষয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হলেও সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, পদায়ন হলেও উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে এক শ্রেণির চিকিৎসকের না থাকা ও সাপে কাটা রোগীদের ‘চিকিৎসার’ জন্য এখনো বেশিরভাগ মানুষ ওঝার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সরকারি সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের জরিপ মতে, সাপের ছোবলের পর ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র তিন শতাংশ।

গত বছরের এপ্রিলে ‘আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন’-এ বাংলাদেশে সাপে কাটা নিয়ে গবেষণাধর্মী নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। বলা হয়, সাধারণত রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, ও ময়মনসিংহ এলাকায় সাপে কাটার ঘটনা বেশি। বিষধর সাপে কাটা শতকরা ৭০ ভাগ রোগী প্রতিষেধক পায় না এবং নতুন চিকিৎসকদের অনেকে প্রতিষেধক ব্যবহার করতে ভয় পান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ হঠাৎ বিষধর গোখরা সাপের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণের জেলাগুলো সাপে কাটাপ্রবণ এলাকা। রাজশাহী অঞ্চলে প্রায়ই গোখরো ও চন্দ্রবোড়া সাপের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। কৃষিজমি সম্প্রসারণের কারণে নিরাপদ আবাস নষ্ট হওয়ায় খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য সাপ আবাসিক এলাকায় চলে আসছে। এরা কাঁচা ঘরবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। বাড়ির ইঁদুরের গর্তে ডিম ফোটাচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads