• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
প্রত্যাশার ধারেকাছে নেই

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা

ছবি : সংরক্ষিত

বাংলাদেশ

‘ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি’

প্রত্যাশার ধারেকাছে নেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত ১২২টি ইলেক্টোরাল কমিটির কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। গত ২৫ নভেম্বর থেকে নির্বাচনী মাঠে অবস্থান করে ১০ দিন অতিবাহিত করলেও ইসির প্রত্যাশার ধারেকাছেও আসতে পারেনি কোনো কমিটি। যে কারণে মাঠপর্যায় থেকে প্রতিদিন শত শত অভিযোগ নিয়ে বিচারপ্রার্থীরা নির্বাচন ভবনে ভিড় জমাচ্ছেন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গতকাল বুধবার ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির বিচারকদের ব্রিফিংকালে অসন্তোষ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কমিটিগুলোর কাজ দৃশ্যমান করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইলেক্ট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্য ২৪৪ জন যুগ্ম জেলা জজ ও দায়রা জজ এবং সহকারী জজ ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করে সিইসি কেএম নুরুল হুদা বলেন, ২৫ নভেম্বর এই কমিটি গঠন করার পর এই ১০ দিনে প্রতিটি কমিটি ১টি করে অন্তত ১২২টি অভিযোগ তদন্ত করার কথা ছিল। তা না হলে অন্তত ১০০টি, তাও যদি না হয় অন্তত ২২টি তদন্ত করার প্রত্যাশা ইসির ছিল। কিন্তু তা হয়নি। কারণ, এখন পর্যন্ত কমিটিগুলো নিজেদের প্রস্তুতিই গুছিয়ে উঠতে পারেনি।

নির্বাচন সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিযোগ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিচার হবে জানিয়ে বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যিনি আপনাদের কথা শুনবেন না পেনাল কোডের ১৯৩ ধারা অনুযায়ী তাদের ৭ বছরের জেল হবে। যদি মিথ্যা তথ্য দেয় এবং আপনাদের আদেশ না মানে পেনাল কোডের ২২৮ ধারা অনুসারে তাদের বিচার হবে। কোড অব সিভিল প্রসিডিউরের ১৯০৮-এর সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে আপনারা মাঠে অবস্থান করবেন।

নুরুল হুদা বলেন, আপনাদেরকে দৃশ্যমান হতে হবে। বাস্তবতা হলো, আপনারা এখন পর্যন্ত কিন্তু দৃশ্যমান হননি। যখন দৃশ্যমান হবেন, আপনাদের কাজের মাধ্যমে মানুষ যখন আস্থা রাখবে, আপনাদেরকে যখন চিনবে, তখন থেকে আপনাদের ওপর দায়িত্ব আসবে। তখন আর নির্বাচন কমিশনে শত শত অভিযোগ আসবে না। আমরা প্রতিদিন শত শত অভিযোগ পাই। কিন্তু অভিযোগগুলো আমাদের কাছে আসার কথা নয়। কারণ, আপনারা মাঠপর্যায়ে রয়েছেন। কমিটির সদস্যদের প্রো-অ্যাকটিভ ও ভাইব্রেন্ট হওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন,  ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটিকে প্রো-অ্যাকটিভ হতে হবে, ভাইব্রেন্ট হতে হবে এবং আপনাদেরকে জানাতে হবে যে, তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য আপনারা আছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে ১২২টি জায়গায় আপনারা তাদের কাছাকাছি আছেন। তারা যেন সমস্যার সমাধান পায় এটা আপনাদেরকে দেখতে হবে।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচন আইনানুগ না হলে সে নির্বাচন কালো নির্বাচন। আমরা কালো নয়, স্বচ্ছ-সাদা নির্বাচন করতে চাই। সবার প্রতি সমআচরণ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আইনের চোখে যেন সবাই সমান থাকে। নির্বাচনের অনিয়ম রোধে ও আইনসিদ্ধ করার ব্যাপারে বিচারকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে গেলে সতর্ক থাকতে হবে। সর্বোচ্চ সাজার বিষয়ে লিগ্যাল মাইন্ডকে প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনায় রাখতে হবে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পায়।

অপর নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি আইনানুগ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদের সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কাজটি সহজ করে দেবে।

কমিশনার কবিতা খানম বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও আস্থার পরিবেশ তৈরিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন শুধু নয়, নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। দৃশ্যমানভাবে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন। সব ধরনের রাগ অনুরাগের ঊর্ধ্বে উঠে, বিচারিক দায়িত্ব পালনের মতো করেই সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান আপনাদের দায়িত্ব।

কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, এবারের নির্বাচন বৈচিত্র্যপূর্ণ নির্বাচন। সংসদ বহাল রেখে, সরকার অপরিবর্তনীয় আছে এমন অবস্থায়ই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যেহেতু এ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হতে যাচ্ছে, আগের যেকোনো সময়ের নির্বাচনের চেয়ে আইনের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হবে। ওইদিন থেকে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেন তিনি।

নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রশিক্ষণ শেষে ১০-১১ ডিসেম্বর ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads