• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
পোস্টার থেকেই ২৫শ টন বর্জ্য

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ

পোস্টার থেকেই ২৫শ টন বর্জ্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে সয়লাব রাজধানী। এই নির্বাচনের প্রচারে ব্যবহূত লেমিনেটেড পোস্টারে ইতোমধ্যে ২৪৭২ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। পুরো নির্বাচনে পোস্টার থেকে বর্জ্য জমবে ২৫শ টন। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে লালমাটিয়ায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশে লেমিনেটেড পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ‘থার্মাল লেমিনেশেন ফিল্মস : অ্যান ইনসিজিং হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হ্যাভক অব ঢাকা সিটি’ শীর্ষক একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে এ সংস্থাটি।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে পুরোদমে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। ঢাকার দুই নগরপিতা নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে রাজধানীতে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা প্রচারণা শুরুর পর লেমিনেটেড পোস্টারে সয়লাব হয়েছে পুরো ঢাকা।  প্রচারণা শুরুর প্রায় ১২ দিনের মধ্যেই ২৪৭২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। পুরো নির্বাচনে পোস্টার থেকে বর্জ্য জমবে ২৫শ টন। নির্বাচনী পোস্টারসহ গেল বছরজুড়ে ঢাকা শহরে ১০ হাজার টন লেমিনেটেড পোস্টারের বর্জ্য তৈরি হয়েছে।

এসডো বলছে, ঢাকা শহরে প্রতি বছর বিভিন্ন উৎস থেকে গড়ে প্রায় দশ হাজার টনের বেশি লেমিনেটেড প্লাস্টিকের বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। গবেষণা মতে, ২০১৯ সালে ৭ হাজার ১৪৫ দশমিক ২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। ২০২০ সালে আনুমানিক ১০ হাজার ৪৩৮ টন উৎপন্ন হবে যেগুলো পূর্ণ প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্ভব নয়। বিশেষ করে অমর একুশে বইমেলা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রদর্শনীতে লেমিনেটেড পোস্টার, লিফলেট এবং স্টিকার বিতরণ নিষিদ্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনের এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, এসডো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণায় লেমিনেটেড পোস্টার এবং অন্যান্য ‘প্লাস্টিক কোটেড’ পণ্য ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা শুরু করে। ২২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়।

তিনি বলেন, উচ্চ আদালত বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উৎপাদিত এবং বিলি করা লেমিনেটেড পোস্টারের বজ্যৃ যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনার নির্দেশ দিয়েছেন। এসডো আশাবাদী পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এ ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে এসডো ও অন্যান্য এনজিও প্লাস্টিক দূষণ রোধে হাইকোর্টে এক রিট আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পলিথিন ব্যাগ নিষেধাজ্ঞার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ২০২১ সালের মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধের আদেশ জারি করে আদালত।

এসডো সূত্রে জানা গেছে, এসডো ঢাকা শহরের সম্ভাব্য লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রধান ৬টি উৎস ধরে নিয়ে তার ওপর গবেষণা চালায়। যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, খবরের কাগজের সাথে দেওয়া প্রচারপত্র, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা, অমর একুশে বইমেলা, অন্যান্য বড় পরিসরের মেলা বা প্রদর্শনী, রেস্তোরাঁ, বিউটি পার্লার ও অন্যান্য বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে বিতরণ করা লিফলেট।

এ বছর নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে আনুমানিক ৩০৪ মিলিয়ন প্লাস্টিক লেমিনেটেড পোস্টার ছেপেছেন। এছাড়াও প্রচারণায় ব্যবহূত স্টিকার, সাধারণ কার্ড, স্বেচ্ছাসেবকের পরিচয়পত্র তৈরিতেও লেমিনেটেড প্লাস্টিকের ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। আর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর প্রায় ১২ দিনের মধ্যেই ২৪৭২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে।

এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিক ব্যবহারের পরে ফেলে দেওয়া এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য প্লাস্টিক দূষণের অংশীদার হবে। এসব একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে, এছাড়া বায়ু ও পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসডোর প্রধান টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর অধ্যাপক আবু জাফর মাহমুদ, নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা, নির্বাহী বিভাগীয় সদস্য শাহনাজ মনিরসহ এসডোর অন্যান্য গবেষণা সদস্য।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads