• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
রহিমা ফুড ও মডার্ন ডাইং তালিকাচ্যুত

রহিমা ফুড ও মডার্ন ডাইংকে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ড থেকে তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই

ছবি: সংগৃহীত

পুঁজিবাজার

রহিমা ফুড ও মডার্ন ডাইং তালিকাচ্যুত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ জুলাই ২০১৮

দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকা রহিমা ফুড করপোরেশন ও মডার্ন ডাইং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিংকে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ড থেকে তালিকাচ্যুত (ডিলিস্টিং) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। নিকট ভবিষ্যতে কোম্পানি দুটির উৎপাদন শুরুর কোনো সম্ভাবনা না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় তালিকাচ্যুতির এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানি দুটির তালিকাচ্যুতির এ সিদ্ধান্ত আজ থেকেই কার্যকর হবে। অর্থাৎ আজ থেকে এ দুই কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন হবে না।

এর আগে উৎপাদন বন্ধ, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা ও শেয়ার ডিম্যাট (ইলেকট্রনিক) না করায় ২০০৯ সালে মোট ৫১টি কোম্পানিকে মূল বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর প্রায় নয় বছর পর রহিমা ফুড করপোরেশন ও মডার্ন ডাইং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিংকে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুতির ঘটনা ঘটল।

উৎপাদন বন্ধ থাকা দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে তালিকাচ্যুতির এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই একশ্রেণির বিনিয়োগকারী জাঙ্ক শেয়ার নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন। তাদেরকে সতর্ক করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রকিবুর রহমান বলেন, মডার্ন ডাইং ও রহিমা ফুডের উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এছাড়া উৎপাদন শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও এই দুই কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ে, যা পুঁজিবাজারের জন্য ক্ষতিকর। মূলত এ কারণেই কোম্পানি দুটিকে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারবিষয়ক আইন-কানুন পরিপালন করাও তালিকাচ্যুতির একটি কারণ। তিনি বলেন, কোম্পানি দুটির তালিকাচ্যুতি আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রহিমা ফুড করপোরেশনের গত পাঁচ বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকা। ডিএসই সূত্র জানায়, নিকট ভবিষ্যতে উৎপাদন শুরু হওয়ার মতো কোনো সম্ভাবনা নেই। এ কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬২ দশমিক ৬২ শতাংশ রয়েছে সাধারণ ও বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ২০১৪ সাল থেকে এ কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসানে রয়েছে। তবে লোকসানে থাকলেও এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির শেয়ারদর গতকাল ১৭৪ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৩ জুন থেকে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও গত ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটি জানায় যে, নারকেল তেল উৎপাদনের যে উদ্যোগ  নেওয়া হয়েছে, তা এক বছরের মধ্যে শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ সাপেক্ষে এ উৎপাদন শুরু হতে পারে বলে জানায় কোম্পানিটি। সম্প্রতি কোম্পানিটি নিজস্ব জমি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত মুনাফার প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিনের লোকসানের ধারাবাহিকতা কাটিয়ে ওঠে। জমি বিক্রির আয়ে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে রহিমা ফুড শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৮ টাকা ৫৩ পয়সা দেখায়।

অপরদিকে ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে মডার্ন ডাইং অ্যান্ড স্ত্রিন প্রিন্টিংয়ের। প্ল্যান্ট, শ্রমিক ও গ্যাস সঙ্কট এবং মেশিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে উৎপাদন বন্ধের পর একই বছরের ৩ আগস্ট বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে ফ্যাক্টরির জায়গা দীর্ঘমেয়াদে গোডাউনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ কোম্পানির আয়ের মূল উৎসই হচ্ছে এটি।

মডার্ন ডাইংয়ের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির ইপিএস হচ্ছে ৯৮ পয়সা। তবে এ কোম্পানির শেয়ার গতকাল ৩২৬.৩০ টাকায় হাতবদল হয়েছে। শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির নেপথ্যে কারসাজি রয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠেছে। যদিও গত পাঁচ বছর ধরেই কোম্পানিটি ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। তবে উৎপাদনে না থাকায় কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। এখন তালিকাচ্যুত হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশই এ শেয়ারে আটকে গেল। যদিও এ কোম্পানির শেয়ারের দুই-তৃতীয়াংশই উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads