• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ব্যাংক

ব্যাংক খাতের শেয়ার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকায় বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা

ছবি: সংগৃহীত

পুঁজিবাজার

বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ব্যাংক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ জুলাই ২০১৮

আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় বিকল্প বিনিয়োগের উৎস হিসেবে অনেকেই পুঁজিবাজারকে বেছে নিয়েছেন। এতে জুলাই মাসের শুরু থেকেই পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে। শেয়ারের ক্রয়াদেশ বাড়ায় চলতি বছর দর হারানো উৎপাদনমুখী খাতের বড় অংশই বাজার মূলধন পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। তবে মূল্যসূচকে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যাংক খাতের শেয়ার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকায় বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। চলতি বছর ব্যাংক খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রায় ২৯ শতাংশ মূলধন হারিয়েছেন তারা।

ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাস থেকে ব্যাংক আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। যদিও ব্যাংকগুলোর বড় অংশই এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকরে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সুদহার নয়-ছয়ের সিদ্ধান্ত হতে পারে, এমন আশঙ্কায় গত জুনের মাঝামাঝি থেকেই অনেক আমানতকারী ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন। এর ফলে এক মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ক্রয়াদেশ বাড়ায় বিভিন্ন খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ডিএসইতে বিবিধ খাত ছাড়া অবশিষ্ট সব খাতের বাজার মূলধন কমতে দেখা যায়। এ সময় বিবিধ খাতের বাজার মূলধন বাড়ে ১৪ শতাংশ। বিপরীতে সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধন কমে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের (২৩ দশমিক ৪ শতাংশ)। এ সময় ব্যাংক খাত প্রায় ২৩ শতাংশ, সেবা ও রিয়েল এস্টেট খাত ১৮ দশমিক ৬, সিমেন্ট খাত ১৭, পাট খাত ১৩ ও টেলিযোগাযোগ খাত ১২ দশমিক ৮ শতাংশ বাজার মূলধন হারায়। এর বাইরে সিরামিক, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল, ওষুধ ও বীমা খাতের শেয়ারের দর ৫ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ দর হারায়। তবে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে উৎপাদন খাতের শেয়ারদরের চিত্র পাল্টাতে শুরু করে।

আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ায় ব্যাংক ও আর্থিক খাত ছাড়া অন্যসব খাতের হারানো বাজার মূলধন পুনরুদ্ধার হতে দেখা যায়। এক মাসের ব্যবধানে গত ১৯ জুলাই পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের হারানো মূলধন পুনরুদ্ধার করে উল্টো ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ দর বাড়ে খাতটিতে। একই সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সাড়ে ১১ শতাংশ বাজার মূলধন বাড়তে দেখা যায়। হারানো মূলধন পুনরুদ্ধার করে কাগজ, ট্যানারি, বস্ত্র, সিরামিক ও প্রকৌশল খাতে বাড়তি মূলধন যোগ হয়। তবে গত এক মাসে সাতটি খাত হারানো মূলধন পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হলেও ব্যাংক খাত উল্টো আরো দর হারিয়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংকের অগ্রিম আমানত অনুপাতকে (এডিআর) কেন্দ্র করে চলতি বছরের শুরু থেকে অস্থিরতা তৈরি হয়। সে সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের তারল্য সঙ্কট দেখা দেয়। মূলত তখন থেকেই ব্যাংক শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। আর এ দরপতন ত্বরান্বিত হয় বিদেশিদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এ খাতটি ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ দর হারিয়েছে, যা ৩ জুন ছিল ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত হারানো মূলধন কিছুটা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। গত ৩ জুন এ খাতটির দর হারানোর পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ১৯ জুলাই দিন শেষে ১৯ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে আগে ব্যাংক আমানত ও ঋণের সুদহারে ৫ শতাংশ ব্যবধান (স্প্রেড) ছিল। যদিও সে সময় ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান আরো বেশি ছিল। আর গত ১ জুলাই থেকে আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান ৩ শতাংশে নেমে আসায় বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন ব্যাংকের নিট মুনাফা আগের তুলনায় আরো কমে যাবে। ব্যাংক শেয়ারের দর কমে যাওয়ার নেপথ্যে এটি একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর ব্যাংকগুলোতে ধারাবাহিকভাবে মন্দ ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংকগুলোকেও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সাপ্তাহিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ডিএসইতে সাড়ে ৯ শতাংশ লেনদেন কমেছে। গড় লেনদেন ৯৭০ কোটি টাকা থেকে ৮৭৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। গত সপ্তাহে দর হারিয়েছে ১৯৯টি কোম্পানি। বিপরীতে ১৩১টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২১ পয়েন্ট।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads