• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
পুঁজিবাজারের সঙ্গে অর্থনীতির সমন্বয়ে ঘাটতি রয়েছে

বাংলাদেশের খবরের নিয়মিত আয়োজন ‘আপন ভুবন’-এ গতকালের অতিথির (বাঁয়ে) সঙ্গে সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া 

ছবি : বাংলাদেশের খবর

পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজারের সঙ্গে অর্থনীতির সমন্বয়ে ঘাটতি রয়েছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের সঙ্গে সমন্বয় ঘাটতি রয়েছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে পুঁজিবাজারের যে উন্নয়ন হওয়ার কথা সেটি হচ্ছে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বসে পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাকিল রিজভী। যিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশের খবরের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কার্যালয়ে। ‘সুবর্ণ রেখায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আপন ভুবনে কথা বলেন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের পরিচিত এই মুখ।

আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশের খবরের সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া অতিথিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রকাশনা শুরুর পর থেকে আমাদের দৈনিকটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পাঠকদের সামনে তুলে ধরছে। একই সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আমরা নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি। তবে আমরা দেশপ্রেম, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে কারো সঙ্গে আপস করি না। এসব ক্ষেত্রে আগে বাংলাদেশ। এ সময় বাংলাদেশের খবরের উপদেষ্টা সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য পুঁজিবাজারের ভূমিকা রয়েছে। তবে এখানে অনেক সময় বড় বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব কেলেঙ্কারির হোতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আলাপকালে শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, কারসাজি, মানহীন কোম্পানির আইপিও, স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো না আসা, সুশাসনের ঘাটতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় ঘাটতির কারণে বর্তমান বাজারে বড় ধরনের দরপতন। পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বসতে হবে। তবে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর পুঁজিবাজারেও ধস আসে। অনেকে বলে, এসব ঘটনার মাধ্যমে পুঁজি পুনর্গঠন হয়ে থাকে। আমার ধারণা, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে আবার ধস আসতে পারে। তবে সেটি কখন তা আমি বলতে পারছি না।

দীর্ঘ তিন যুগের বেশি দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই ব্যক্তিত্ব বলেন, আমি যখন পুঁজিবাজারে আসি, তখন দৈনিক লেনদেন হতো ১০ লাখ টাকা। আর ইনডেক্স ২৫০-এর নিচে ছিল। একবার ১৯০-এ নেমে আসে। আজ আমরা কোথায় এসেছি। অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এখনো ভালো অনেক করপোরেট পুঁজিবাজারে আসছে না। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আনা যাচ্ছে না। কিন্তু দেশি ও বিদেশি বড় করপোরেট পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে প্রণোদনা দিতে হবে। কর অব্যাহতি দিতে হলেও দিতে হবে। দেশের অনেক বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। কারণ তারা ভয় পান। এখানে আসলে হয়তো করের নতুন বেড়াজালে পড়তে হতে পারে।

শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারের সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনীতির যে যোগাযোগ থাকা দরকার সেটি হয়নি। ফলে দেশের প্রবৃদ্ধি হলেও তার প্রতিফলন আমরা পুঁজিবাজারে দেখি না। এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি করা গেলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। এখন অর্থনীতিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, তারল্য সংকট। কারণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প মেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু পুঁজিবাজার শক্তিশালী করা গেলে এটি হতো না। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে হবে। আর ব্যাংকগুলোর দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ টেনে ধরতে হবে। ব্যাংকের তহবিল যাবে চলতি মূলধন হিসেবে। এতে অর্থনীতিতে ভারসাম্য থাকবে।

বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান অর্থনীতির জন্য খারাপ হচ্ছে এখন জানিয়ে স্টল লিমিটেডের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুদ্রার মান সমন্বয় করে। এতে তাদের রপ্তানি বাড়ে। আমাদের মুদ্রার মান এখন সমন্বয় করতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মুদ্রা থেকে টাকা শক্তিশালী হওয়াতে ওইসব দেশ থেকে আমদানি বেড়ে গেছে। ফলে অপ্রয়োজনীয় আমদানি বেড়ে গেছে। এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা লোকসানে পড়ছেন। 

পুঁজিবাজারের এই জ্যেষ্ঠ স্টকব্রোকার বলেন, তবে দেশ স্বাধীন না হলে আমি বিনিয়োগকারী হতে পারতাম না। আমি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক হতে পারতাম না। আজ দেশ স্বাধীন হওয়ায় আমরা মালিক, ব্যবসায়ী হতে পারছি।

সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যাদের সংবাদমাধ্যম তাদের অপরাধকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরে না। এখানে দেশপ্রেমের প্রকাশ। তাই সংবাদমাধ্যম ও দেশের মানুষকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সমালোচনা করবে সংবাদমাধ্যম, তবে কোনো কিছু ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে নয়। সাধারণ মানুষের যেসব কথা কেউ বলে না তা তুলে ধরতে হবে।

আমাদের বড় প্রকল্প চলমান। এগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। আমাদের মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে যাবে। তখন পুঁজিবাজারেও হয়তো একটা পরিবর্তন আমরা দেখব। তার জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে। অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্তি হওয়া জরুরি। সেটি আমরা করতে পারছি না। এজন্য আইনের সংস্কারও দরকার হতে পারে। কমপক্ষে এক হাজার কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। তবে হায় হায় কোম্পানি নিয়ে আসলে হবে না। এজন্য সব পক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে। 

শাকিল রিজভী বলেন, যেসব কোম্পানি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তাদেরকে আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে পারিনি। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে পুঁজিবাজারের দূরত্ব রয়েছে। সঠিক প্রতিফলন আমরা দেখতে পারছি না।

অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পুঁজিবাজার বড় করতে হবে। তদারকি বাড়াতে হবে। কেউ কোনো অন্যায় করলে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads