• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ট্রেনের অগ্রিম টিকেটের জন্য কমলাপুরে হাহাকার

টিকেটের জন্য কমলাপুরে হাহাকার

সংরক্ষিত ছবি

যোগাযোগ

ট্রেনের অগ্রিম টিকেটের জন্য কমলাপুরে হাহাকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ আগস্ট ২০১৮

সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল শুক্রবার ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসা মানুষের বড় একটা অংশ ছিল কর্মজীবী। উদ্দেশ্য ঈদযাত্রার জন্য ট্রেনের আগাম টিকেট কেনা। গতকাল শুক্রবার টিকেট প্রত্যাশীদের ভিড় বেশি হবে- এমন আশঙ্কায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাদের অনেকে অবস্থান নেন স্টেশনে। কিন্তু একই আশঙ্কা সবার মধ্যে থাকায় গতকাল ভোরের আলো ফোটার আগেই ২৬টি কাউন্টারের সামনের লাইন স্টেশন ভবন ছাড়িয়ে পাশের সড়কে গিয়ে ঠেকে।

এ দিন ঢাকার কমলাপুর এবং চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বিক্রি করা হয়েছে ঈদযাত্রার ১৯ আগস্টের টিকেট। কমলাপুরে গতকাল সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু হয়। দুপুর ১২টার আগেই নির্ধারিত দিনের টিকেট শেষ হয়ে গেলে অপেক্ষমাণদের মধ্যে হা-হুতাশ দেখা যায়। 

রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা অগ্রিম টিকেটপ্রত্যাশী মামুনুর রশীদ রুবেল। তিনি বাংলাদেশের খবরকে জানান, পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বৃহস্পতিবার রাতেই স্টেশনে হাজির হন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিউল আজিম ১৯ তারিখের সুবর্ণ এক্সপ্রেসের তিনটি টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়ান ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে। আর কাঙ্ক্ষিত টিকেট হাতে পেয়েছেন বেলা ১১টায়। ভোর থেকে টিকেটের যুদ্ধে নেমে বেসরকারি চাকরিজীবী শাকিল রেজা সৈকত দুটি টিকেট কিনতে সমর্থ হন সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেসের। শাকিল অভিযোগ করে বলেন, ভিআইপি, রেলের কর্মকর্তাদের নির্ধারিত কোটার বাইরেও অনেক টিকেট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যখন কাউন্টারের কাছে গিয়েছি তখন দেখতে পাই কাউন্টারের ভেতরে ঢুকে রেলের কর্মচারীরা টিকেট কাটছে। এমন কয়েকজনকে দেখেছি যারা লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে টিকেট কেটে দিচ্ছে। অথচ কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে কোটার টিকেট।

শাকিলের এমন অভিযোগের বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ঈদের টিকেট কালোবাজারি আমরা প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছি। টিকেট বিক্রির মনিটরিং ব্যবস্থা এতটা কঠোর যে, এখানে বাইরের লোক কেন, রেলের কোনো স্টাফের পক্ষে অনৈতিকভাবে টিকেট কেনাবেচা করা সম্ভব নয়। তারপরও এসব অভিযোগ আসছে। আমরা সময়, স্থান জেনে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করে দেখছি। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে ব্যবস্থাও নিচ্ছি।

প্রতিবারের মতো এবারো ১০ দিন আগে থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি। গত বুধবার প্রথম দিন দেওয়া হয় ১৭ আগস্টের টিকেট। আজ ১০ আগস্ট শনিবার বিক্রি হবে ২০ আগস্টের টিকেট। আগামীকাল ১২ আগস্ট টিকেট মিলবে ২১ আগস্টের। এই দিনগুলোতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে টিকেট বিক্রি হবে।

ট্রেনের ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে ১৫ আগস্ট থেকে। ওই দিন ২৪ আগস্টের টিকেট পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮ আগস্টের টিকেট যথাক্রমে মিলবে ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ তারিখ। ঈদ উপলক্ষে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২১ ও ২২ আগস্টের ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী ট্রেন এবং ২৩ আগস্টের বন্ধন এক্সপ্রেস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

রেল সূত্রে জানা গেছে, মোট অগ্রিম টিকেটের ৬৫ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে কাউন্টার থেকে। বাকি ৩৫ শতাংশের ২৫ শতাংশ অনলাইন ও মোবাইলে। ৫ শতাংশ ভিআইপি এবং রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫ শতাংশ। একজন যাত্রীকে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪টি টিকেট দেওয়া হচ্ছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর ট্রেনের ওপর চাপ কিছুটা বেশি। টিকেট শেষ হয়ে গেলেও ঈদযাত্রার প্রতিটি ট্রেনেই স্পট স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি করা হবে।

এদিকে আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, অগ্রিম টিকেট বিক্রির তৃতীয় দিনে গতকাল চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের সার্ভার বিকল হয়ে দেড় ঘণ্টা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নেটওয়ার্ক ক্যাবল কাটা পড়ার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়।

টিকেটের জন্য রাত থেকে অপেক্ষায় থাকা লোকজন সকাল ৮টার আগেই বিভিন্ন কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যান। সার্ভার বিকলজনিত কারণে টিকেট না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন তারা।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জানান, নেটওয়ার্ক ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে সকালের দিকে কিছু সময় টিকেট বিক্রি সম্ভব হয়নি। পরে ত্রুটি সারানোর পর ৯টা ৪০ মিনিট থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। দিনভর টিকেট বিক্রিতে আর কোনো সমস্যা হয়নি বলেও জানান তিনি।

সরেজমিন দেখা যায়, গতকালও অগ্রিম টিকেট প্রত্যাশীদের প্রচুর ভিড় ছিল চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে। সবকটি কাউন্টারেই ছিল দীর্ঘ লাইন। তবে সকালে টিকেট বিক্রি বিলম্বিত হওয়ার কারণে অনেকে টিকেট না নিয়েই ফিরে যান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads