• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
দ্রুত নষ্ট হচ্ছে নতুন সড়ক

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

সংরক্ষিত ছবি

যোগাযোগ

দ্রুত নষ্ট হচ্ছে নতুন সড়ক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে সড়ক নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই তা ভেঙে যাচ্ছে। আবারো অর্থ ব্যয় করে ভাঙা সড়ক সংস্কার করতে হচ্ছে। আবার সংস্কারে বিলম্বের কারণে মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে। ফলে সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে অসন্তোষ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সড়ক নির্মাণে সঠিক নকশা, মানসম্মত উপকরণের ব্যবহার ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে সঠিক পন্থায় কাজ বুঝে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর প্রচলিত ধারায় বিটুমিন ব্যবহার না করে সড়ক নির্মাণে কনক্রিটের ব্যবহার হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মানসম্মত সড়ক নিয়ে পরিকল্পনা অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব জিয়াউল ইসলাম, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মো. মফিজুল ইসলাম, গবেষক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক, নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মো. আতিকুল ইসলাম, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ রোড রিসার্স ল্যাবরেটরির পরিচালক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। এতে বলা হয়েছে, ধারণক্ষমতার বেশি পণ্য পরিবহনসহ (ওভারলোড) ছয় কারণে দেশের সড়ক ও মহাসড়ক টেকসই হচ্ছে না। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নের স্থায়িত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক মহাসড়ক তৈরি এবং উন্নয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এগুলো কয়েক মাস যেতেই নষ্ট হয়ে যায়। সড়কের ইঞ্জিনিয়ারিং স্ট্রাকচারে অবহেলা, পানি নিষ্কাশনে নালার ব্যবস্থা না করা, নকশার ক্ষেত্রে আপসকামিতা, ঠিকাদারসহ সবার মধ্যে গুণগত মান নিশ্চিতের মানসিকতা গড়ে না ওঠা এবং  নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার হওয়ায় সড়ক স্থায়ী হচ্ছে না বলে দাবি করা হয়েছে মূল প্রবন্ধে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ২১ হাজার কিলোমিটার রাস্তার নকশা ও তথ্যভাণ্ডার করতে হবে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির বড় অংশ আসছে সড়ক অবকাঠামো থেকে। অবকাঠামোর স্থায়িত্ব রক্ষায় ঠিকাদারদের কাছ থেকে সড়কের লাইফ টাইম সনদ নেওয়া প্রয়োজন। রাস্তা নির্মাণে গতানুগতিক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সংস্কারমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশে বিটুমিনের সড়ক টিকবে না। পানি বিটুমিনের শত্রু। পানির সঙ্গেই আমাদের সবসময় বসবাস। আমাদের ২০ বছর মেয়াদি কংক্রিট সড়ক নির্মাণ করতে হবে। প্রথম ১০ বছর কংক্রিট সড়কে হাতই দিতে হবে না। শুরুর দিকে কংক্রিটের রাস্তায় খরচ বেশি পড়তে পারে। তবে টেকসই হিসাবে সেই খরচ বিটুমিনের চেয়ে অনেক কম হবে। এর ফলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে।

মূল প্রবন্ধে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, টেকসই সড়ক অবকাঠামো পেতে হলে গুণগত মান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। দেশ স্বাধীনের পর ২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা থেকে বেড়ে এখন ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এতদিন সংযোগে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলেও এখন সময় এসেছে মানের দিকে বেশি নজর দেওয়ার।

মামুন আরো বলেন, এখন রাস্তা তৈরি করলে ভিত্তি দেওয়া প্রয়োজন। এর ফলে সড়কের ওজন বহন করার ক্ষমতা বাড়বে। বর্তমানে ১৬ টনের জায়গায় ৪৭ থেকে ৫২ টন ওজনের ট্রাক চলাচল করে। এতে রাস্তা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঠিকাদারদের জন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করা প্রয়োজন। উন্নত দেশের মর্যাদায় যেতে হলে মানসম্মত ৮০ হাজার কিলোমিটার সড়ক মহাসড়ক প্রয়োজন এবং সেখানকার মধ্যে ৪ থেকে ৮ হাজার কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে প্রয়োজন রয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম সংস্কার কাজে অর্থ বরাদ্দ দিতে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে দাবি জানান। সচিব বলেন, কংক্রিটের রাস্তার বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, ওভারলোডের কারণে ব্রিজ ভেঙে গেলে তার ক্ষতিপূরণ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে নেওয়া উচিত। সেজন্য আইন করতে হবে। 

আইএমইডি সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, আবহওয়া বিবেচনা করে সড়ক অবকাঠামোর নকশা করা উচিত।

গবেষক ও লেখক আবুল মকসুদ বলেন, যত টাকাই খরচ করি না কেন রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে শেষ পর্যন্ত কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না। জাতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আপসকামিতা কমাতে হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, টেকসই উন্নয়নে যুগান্তকারী অবকাঠামো প্রয়োজন। সড়ক খাতেও এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তার ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। যেকোনো মূল্যে ওভারলোডিং বন্ধ করার পাশাপাশি সড়কের মোড় উন্নয়নে আলাদা প্রকল্প নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, হাইওয়ের দুই পাশে অবশ্যই সার্ভিস লেন থাকতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন না করে, পরিবর্তন যদি করতেই হয়, তাহলে তা বিশেজ্ঞদের মাধ্যমেই করতে হবে।

ডিআইজি আতিকুল ইসলাম বলেন, ধারণক্ষমতার বেশি ওজনের পণ্য পরিবহন করায় রাস্তা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। ফলে অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সড়কে সর্বোচ্চ ১৬ টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা থাকলেও আলাপ-আলোচনায় তা ২২ টনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রফতানি পণ্য পরিবহনে সড়কে চাপ কমাতে রেল ও নৌপথ ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads